Advertisement
E-Paper

পুরুলিয়া ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত হাত বদলে বাঁকুড়ায়

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ইন্ডোরে ভর্তি থাকা রোগীর জন্য দেওয়া হয়েছিল রক্ত। কিন্তু সেই রক্তের প্যাকেট মিলল বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি থাকা রোগীর আত্মীয়ের হাতে! এমনই নজির বিহীন ঘটনার সূত্রে রক্তের দালাল চক্রের হাত কত লম্বা তা সামনে এসে পড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২১

পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের ইন্ডোরে ভর্তি থাকা রোগীর জন্য দেওয়া হয়েছিল রক্ত। কিন্তু সেই রক্তের প্যাকেট মিলল বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি থাকা রোগীর আত্মীয়ের হাতে! এমনই নজির বিহীন ঘটনার সূত্রে রক্তের দালাল চক্রের হাত কত লম্বা তা সামনে এসে পড়েছে।

কিডনি ও বুকের সমস্যা নিয়ে সম্প্রতি বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের বাসিন্দা ফুলচাঁদ সোরেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো সোমবার বিকেলে ফুলচাঁদবাবুর পরিজনদের ‘ও পজিটিভ গ্রুপের’ দুই ইউনিট রক্ত আনতে বলা হয়। তাঁর ছেলে গয়ারামবাবু বাঁকুড়া ব্লাডব্যাঙ্কের কাছে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যাক্তির কাছে মোটা টাকা দিয়ে দু’প্যাকেট রক্ত আনেন। প্যাকেট দেখেই ওয়ার্ডের নার্সদের সন্দেহ হয়। খোঁজ নিতেই সামনে এসেছে দালাল চক্রের নতুন কিস্যা।

গয়ারামবাবু স্বাস্থ্যকর্মীদের জানিয়েছেন, রিকিউজিশন স্লিপ নিয়ে ব্লাডব্যাঙ্কের দিকে তিনি যাচ্ছিলেন। পথে এক ব্যক্তি তাঁকে জানান, ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়ে কাজ নেই। সেখানে কোনও রক্ত নেই। তবে ৩০০০ টাকা দিলে তিনি দু’ প্যাকেট রক্তের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। গয়ারামবাবুর কথায়, ‘‘ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নেই শুনেই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তাই ওই লোকটার কথা শুনে দরাদরি করে শেষ পর্যন্ত ২০০০ টাকায় রফা দু’প্যাকেট রক্ত জোগাড় করি।’’

নার্সরা পুরো ঘটনাটি সোমবার রাতেই লিখিত ভাবে নার্সিং সুপারিন্টেডেন্টকে জানান। অভিযোগ পেয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন বাঁকুড়া মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধান। তদন্তে নেমে তাঁর কাছে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি জানতে পারেন, গয়ারামবাবুকে রক্তের যে দু’টি ইউনিট ওই ব্যক্তি দিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো হাসপাতাল থেকে সম্প্রতি চুরি হওয়া রক্তের প্যাকেট। অন্যটি বাঁকুড়া মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে গত ২৯ অগস্ট এই হাসপাতালেরই অন্য এক রোগীর নামে দেওয়া হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে রোগীর নামে ওই রক্ত দেওয়া হয়েছিল, আদপে সেই রোগীর কোনও রক্তই লাগেনি।

হাসপাতালের এক কর্তা জানান, রক্তের প্যাকেটের গায়ে ব্লাডব্যাঙ্কের যে ডাক্তারের সই রয়েছে, গত ২৯ অগস্ট তিনি অসুস্থ হয়ে ছুটিতে ছিলেন। তা হলে সই করল কে? উঠে এসেছে সে প্রশ্নও।

মঙ্গলবার তদন্তে নেমে বাঁকুড়ার ব্লাডব্যাঙ্কের সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখেন অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “ব্লাডব্যাঙ্কের দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমাদের সন্দেহ বাইরের পাশাপাশি হাসপাতালের ভিতরের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারেন। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি।” তিনি জানান, নার্সের অভিযোগের ভিত্তিতে আপাতত তাঁরা বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন। রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য হাসপাতালে লিখিত ভাবে কোনও অভিযোগ জানানো হয়নি। প্রয়োজন হলে বাঁকুড়া সদর থানায় এফআইআর করা হবে।

তবে বসে নেই পুরুলিয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই হাসপাতালের সুপার শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘রবিবার হাসপাতালের ইন্ডোরে ভর্তি থাকা এক রোগীর জন্য আমাদের ব্লাডব্যাঙ্ক থেকে এক প্যাকেট রক্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, সেই রক্ত ওই রোগীর কাছে আসেনি। এরপরেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়।’’ তিনি জানান, বাঁকুড়া মেডিক্যাল থেকে ওই রক্তের প্যাকেট সেখানে পৌঁছনোর খবর পেয়ে তাঁরা অবাক হয়ে গিয়েছেন।

Blood medical college
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy