Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মণ্ডপে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের পাঠ

গবেষণা শেষ না হওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও প্রস্তাব পাঠাননি। সফল হলে তেমন চিন্তা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন।

শিক্ষা: হাতে-কলমে। —নিজস্ব চিত্র

শিক্ষা: হাতে-কলমে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০৪
Share: Save:

প্লাস্টিক দূষণে জেরবার বোলপুর ও শান্তিনিকেতন। পর্যটন শহর হওয়ায় এই শহরের আনাচে-কানাচে প্লাস্টিক ছড়িয়ে আছে। কোথাও স্থানীয় ক্লাবের উদ্যোগে, কোথাও পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে, কখনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে প্লাস্টিকমুক্ত বোলপুর ও শান্তিনিকেতন গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ চোখে পড়ে। নির্দিষ্ট এলাকার সব প্লাস্টিক প্রায় এক জায়গায় করা হয় ঠিকই, কিন্তু যে প্রশ্নটা থেকেই যায় তা হল, জড়ো হওয়া প্লাস্টিকের কী ব্যবস্থা করা হবে?

তারই একটা উত্তর খোঁজার চেষ্টা দীর্ঘ দিন ধরেই করছেন বিশ্বভারতীর রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র পুণ্যব্রত চক্রবর্তী। শান্তিনিকেতন সীমান্তপল্লি ক্লাবের সরস্বতী পুজোর প্যান্ডেলে হাতে-কলমে সে কাজ দেখিয়েও দিলেন পুণ্যব্রতবাবু। একটি যন্ত্রের সাহায্যে প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে ডিজেল, গ্যাস। যা আবার কাজেও লাগানো যাচ্ছে। অয়েল কর্পোরেশনে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে সীমান্তপল্লির বাড়িতে ফিরে তৈরি করেছেন এমন যন্ত্র। তার সাহায্যেই প্লাস্টিক থেকে তৈরি হচ্ছে গ্যাস ও প্লাস্টিক ডিজেল। তবে এখনও তার ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে

গবেষণা শেষ না হওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে কোনও প্রস্তাব পাঠাননি। সফল হলে তেমন চিন্তা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন।

পুণ্যব্রতবাবুর ব্যাখ্যা, সাধারণ প্লাস্টিকে লং চেন পলিমার থাকে। এই যন্ত্রের সাহায্যে প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা সেই লং চেন পলিমার ছোট ছোট পলিমারে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। এর পরে সেখান থেকে কঠিন, তরল নাকি গ্যাসীয় উপাদান পাওয়া যাবে সেটি পলিমারে কার্বনের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। পলিমারে কার্বনের সংখ্যা চার কিংবা চারের নিচে হলে গ্যাস, সংখ্যা চার থেকে ১৭ পর্যন্ত থাকলে তরল এবং তার উপরে হলে কঠিন উপাদান পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ প্লাস্টিকে ১৫০ এবং তার বেশি কার্বন সংখ্যা থাকতে পারে বলে জানান পুণ্যব্রতবাবু। তাঁর দাবি, ‘‘এই যন্ত্রের সাহায্যে প্লাস্টিকের ৯৫ শতাংশ রূপান্তর হচ্ছে। অর্থাৎ, এক কিলোগ্রাম প্লাস্টিক যন্ত্রের মধ্যে দিলে গ্যাসীয়, কঠিন ও তরল উপাদান মিলে ৯৫০ গ্রাম জিনিস পাচ্ছেন। প্লাস্টিক ডিজেল থেকে বিভিন্ন মেশিন চলছে এবং গ্যাসও সংরক্ষণ করা যাচ্ছে।’’

পুরো বিষয়টি একের পর এক সকলকে বুঝিয়েও দিচ্ছিলেন তিনি। চোখের সামনে প্লাস্টিকের এমন রূপান্তর দেখতে পেয়ে এক দিকে যেমন খুশি বড়রা, অন্য দিকে উৎসাহ প্রকাশ করেছে পড়ুয়ারাও। সীমান্তপল্লি ক্লাবের সম্পাদক বৃন্দাবন ঘোষ বললেন, ‘‘১৪ বছর ধরে এখানে সরস্বতী পুজো হচ্ছে। এ রকম উদ্যোগ প্রথম। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে পুণ্যব্রতবাবুকে আহ্বান জানিয়েছিলাম। তিনি সাড়া দেওয়ায় আমরা খুশি।’’ ক্লাবের অন্য সদস্যরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা করাই আমাদের উদ্দেশ্য। দূষণ রোধ নিয়ে চিন্তা করা হয় প্রতিবারই। এ বার শুধু দূষণ রোধ করা নয়। দূষিত পদার্থের অন্য ব্যবহারও দেখানো সম্ভব হল।

এ বছর দুর্গাপুজোয় প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে মণ্ডপ বানিয়েছিল ক্লাব। সরস্বতী পুজোতেও বিনুড়িয়ার স্কুলে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে পুতুল বানিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পুরসভার হোর্ডিংয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ‘প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস ২০১৬’ অনুযায়ী ৫০ মাইক্রনের নিচে কোনও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাগ প্রস্তুতকারীর নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং কতটা পুরু তা লেখা থাকতে হবে। এই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫০ মাইক্রনের নিচে থাকা প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই অবস্থায় এমন একটি যন্ত্রের ব্যবহার জানার মধ্যে দিয়ে প্লাস্টিক থেকে অনেকাংশে রেহাই মিলতে পারে বলেই আশা করছেন স্থানীয়েরা। তবে সকলেই চান, যন্ত্র দিয়ে তৈরি গ্যাস বা তরলের গুণ বা ক্ষতিকারক দিকগুলি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই যেন তা সাধারণের ব্যবহারের ছাড়পত্র পায়। সে দিকটিও জরুরি, আশ্বস্ত করেছেন পুণ্যব্রতবাবুও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bolpur Plastic Saraswati Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE