Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ক্ষমতা পাল্টায়, চালু হয় না মার্কেট

ভোটের মুখে তৃণমূলের পুরবোর্ড অত্যাধুনিক বাজারের শিলান্যাস করেছিল। ক্ষমতায় এসে বামফ্রন্ট সেই বাজার তৈরির কাজ শুরু করে। পাঁচ বছর পরে ফিরে আসে তৃণমূল। তারা বাজারের বাকি কাজ সারে। উদ্বোধনও হয় দু’বছর আগে। কিন্তু নানা সমস্যায় আজও পুরোদমে চালু হল না বাঁকুড়া চকবাজারের সেই মার্কেট কমপ্লেক্স।

স্থায়ী বাজার ফাঁকা। রাস্তা জুড়েই সব্জি বাজার। — নিজস্ব চিত্র।

স্থায়ী বাজার ফাঁকা। রাস্তা জুড়েই সব্জি বাজার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৮
Share: Save:

ভোটের মুখে তৃণমূলের পুরবোর্ড অত্যাধুনিক বাজারের শিলান্যাস করেছিল। ক্ষমতায় এসে বামফ্রন্ট সেই বাজার তৈরির কাজ শুরু করে। পাঁচ বছর পরে ফিরে আসে তৃণমূল। তারা বাজারের বাকি কাজ সারে। উদ্বোধনও হয় দু’বছর আগে। কিন্তু নানা সমস্যায় আজও পুরোদমে চালু হল না বাঁকুড়া চকবাজারের সেই মার্কেট কমপ্লেক্স।

১০ বছরেও কেন এই বাজার পুরোদমে চালু করা গেল না? ব্যবসায়ীরা পুরসভার ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছেন। পুরসভাও পাল্টা আঙুল তুলছে ব্যবসায়ীদের দিকেই। পুরভোটের মুখে চাপান-উতোর আরও বেড়েছে। কিন্তু দিনের শেষে বাঁকুড়া পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দু’তলা মার্কেট কমপ্লেক্সটির অনেকখানি কিন্তু ফাঁকাই পড়ে রয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসা চলছে সেই রাস্তা দখল করেই!

ব্যবসায়ীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে পুনর্বাসন দেওয়ার জন্যই এই মার্কেট কমপ্লেক্স গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুরসভা। ২০০৫ সালে ভোট ঘোষণা হওয়ার মুখে তৎকালীন তৃণমূল পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ কুণ্ডু (তারা) এই মার্কেট কমপ্লেক্সের শিলান্যাস করেছিলেন। ভোটে জয়লাভ করে বামেরা বোর্ড গড়ে। পুরপ্রধান শিউলি মিদ্যার আমলে ভবনটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। ২০১০ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পুরপ্রধান শম্পা দরিপার আমলে মার্কেটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয়। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে এনে এই বাজারের উদ্বোধন সারা হয়। কিন্তু বাজার পুরোদমে আজও চালু হয়নি উদ্বোধনের দু’বছর পরেও।

বাঁকুড়া পুরসভার গড়ে দেওয়া এই বাজারের উপরের তলায় ৪৯টি দোকান রয়েছে। নীচে সব্জি, চা, চপ বিক্রির জন্য রয়েছে ১২৩টি স্টল। তার কয়েকটি চালু হলেও এখনও বেশ কয়েকটি চালু করা যায়নি।

প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করে গড়া হয় এই মার্কেট কমপ্লেক্স। ভবনের গায়ে ফলকে বিদায়ী পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান-সহ সব কাউন্সিলরদের নাম লেখা। ভবনের দুটি তলাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিকাশি ব্যবস্থাও রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে এই মার্কেট কমপ্লেক্স-এ দু’জন সাফাই কর্মীও নিযুক্ত করা আছে। এ ছাড়াও রয়েছেন দু’জন নৈশ প্রহরী ও বিদ্যুতের রক্ষণাবেক্ষণের কর্মী। পুরসভা এই কর্মীদের বেতন দেয়। পানীয় জল ও শৌচালয়েরও সুবন্দোবস্থ রয়েছে। অথচ এখনও দু’তলার একটি দোকানও চালু হল না। নীচেরও সব ক’টি স্টল ভরেনি। যাঁরা ব্যবসা করতে বসছেন তাঁদের মধ্যেও নানা ব্যাপার নিয়ে ক্ষোভ জমেছে পুরসভার বিরুদ্ধে।

কেন উপরের তলার দোকানগুলো চালু করা গেল না? চকবাজারের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পুরসভা এক একটি দোকান লিজ দেওয়ার জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে লিজ চেয়েছিল। যা তাঁদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এ ছাড়াও পরিকাঠামো একটা বড় সমস্যা বলে দাবি করছেন তাঁরা। বাঁকুড়া চকবাজার ব্যবসায়ী উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক করুনাময় চন্দ অভিযোগ করেন, “ক্রেতাদের এখানে সাইকেল ও মোটরবাইক রাখার কোনও সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। এ ছাড়া ব্যবসার মালপত্র ঢোকাতে গেলেও গাড়ি ঢোকানোর মতো বড় রাস্তা চাই। সেই রকম জায়গাও এখানে নেই।’’ তাঁর দাবি, সংগঠনগত ভাবে তাঁরা পুরপ্রধানকে লিজের মূল্য কমাতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রাহ্য করেননি।

পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলছেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা পেশায় ব্যবসায়ী নারায়ণচন্দ্র কুণ্ডুও। তিনি বলেন, “আমরা বারবার বলেছিলাম মার্কেটের নীচে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং’-এর ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু তা হল না। উপরের দোকানগুলোর মাপও সমান নয়। অথচ লিজের মূল্য এক! এতে অনেকেই আপত্তি তুলছেন।” এই সুযোগে রাতে নেশার আসর বসছে দোতলার সিঁড়িতে।

নীচের স্টলগুলি লটারির মাধ্যমে বন্টন করা হলেও ২৪টি স্টলে লোক বসছে না। নীচের তলায় মূলত সব্জি ও মাছের বাজার বসে। সব্জি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫ টাকা করে সংগ্রহ করা হয়। কেন স্টলগুলি ফাঁকা পড়ে রয়েছে? করুণাময়বাবু বলেন, “বাইরে অনেকে মাছ ও সব্জির ব্যবসা করছেন। ফলে ভিতরের ব্যবসা মার খাচ্ছে। তাই ব্যবসায়ীরা ভিতরে বসতে চাইছেন না।” মার্কেট কমপ্লেক্সের মাছ বিক্রেতা লক্ষ্মী ধীবর, কৃষ্ণ ধীবরগের আক্ষেপ, “বাইরে দেদার মাছ বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা ভিতরে আসতেই চাইছে না। আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসে মার খাচ্ছি।” ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পুরসভাকে সমস্যার কথা জানিয়েও কাজ হয়নি।”

বিদায়ী পুরপ্রধান শম্পাদেবীর অভিযোগ, “উপরের দোকানগুলো ব্যবসায়ীদের একগুঁয়েমির জন্যই চালু করা যায়নি। পুরসভা সেলামির রেট কমিয়ে ২ লক্ষ টাকা স্থির করেছিল। কিছু ব্যবসায়ী রাজি হয়েও দোকান নেননি। একটি অসাধু চক্র ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করছে।’’ তাঁর আশ্বাস, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার অভাব রয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাম পুরবোর্ডই ভবনটি প্ল্যান করেছিল। তাঁদের আর কিছু করার ছিল না। প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের শিউলিদেবীর দাবি, ‘‘পার্কিং করার চিন্তাভাবনা আমাদেরও ছিল। তবে ওই সরু রাস্তায় গাড়ি চলাচলে আপত্তি তুলেছিলেন স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীদেরই একাংশ। তাই আমরা করিনি।’’ তাঁর মতে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো মেটানো যেত। শম্পাদেবী সে চেষ্টা করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE