Advertisement
E-Paper

বাবার জন্য চাকরি ছেড়ে বাবার জায়গাতেই প্রার্থী

বিদেশি ব্যাঙ্কের নিশ্চিন্ত মাস মাইনের চাকরি ছেড়েছিলেন বাবাকে দেখভালের জন্য। এ বার নতুন চাকরি তাঁর। রাজনীতির চাকরি। এ চাকরিতে মাইনে নেই। কিন্তু, আছে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের এক বিশাল সুযোগ—বিলক্ষণ জানেন দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিংহদেও। সুযোগ বাবার জুতোয় পা গলানোরও।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৮
নমস্কার। প্রচারে নতুন প্রার্থীর পরিচয় পর্ব। —নিজস্ব চিত্র

নমস্কার। প্রচারে নতুন প্রার্থীর পরিচয় পর্ব। —নিজস্ব চিত্র

বিদেশি ব্যাঙ্কের নিশ্চিন্ত মাস মাইনের চাকরি ছেড়েছিলেন বাবাকে দেখভালের জন্য। এ বার নতুন চাকরি তাঁর। রাজনীতির চাকরি। এ চাকরিতে মাইনে নেই। কিন্তু, আছে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের এক বিশাল সুযোগ—বিলক্ষণ জানেন দিব্যজ্যোতি প্রসাদ সিংহদেও। সুযোগ বাবার জুতোয় পা গলানোরও।

তাই তো সকাল-বিকেল চষে ফেলছেন পুরুলিয়া শহরের অলিগলি। একেবারে ঝানু রাজনীতিকের (কিংবা ঝানু কর্পোরেট প্রফেশনাল) মতোই! হাজার হোক ভোটে জিতে দলনেত্রীর আস্থার মর্যাদা রাখতে হবে তো!

এ বারের ভোটে পুরুলিয়ায় তিনি আক্ষরিক অর্থেই নতুন মুখ। দলের অন্দরে অনেকের কৌতূহলের কেন্দ্রেও। কারণ, পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোডের বাঁশ বাংলোর বাসিন্দা দিব্যজ্যোতিকে তিনি এ বার প্রার্থী করছেন, তা কাউকেই শে, মুহূর্ত অবধিও আন্দাজ করতে দেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চকোট রাজবংশের এই তরুণ প্রজন্মের সদস্যের কাছে রাজনীতি অবশ্য নতুন কিছু নয়। তাঁরা বাবার নাম, কে পি সিংহদেও। পুরুলিয়ার বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক এবং পুরপ্রধান। দীর্ঘদিন দলের জেলা সভাপতির পদও সামলেছেন বর্ষীয়ান ওই তৃণমূল নেতা। দলের কর্মীরা তাই বলছেন, আদ্যন্ত রাজনৈতিক ঘরানায় বেড়ে ওঠার সুবাদে ভোট বিষয়টি দিব্যজ্যোতির কাছে নতুন নয়। প্রয়োজন শুধু লড়াইয়ের ঘোঁতঘাত জেনে নেওয়া। দল সূত্রের খবর, বর্তমান বিধায়ক কে পি-র শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তৃণমূল নেত্রী এ বার প্রার্থী করেছেন তাঁর ছেলেকে। যেদিন মমতা প্রার্থী ঘোষণা করছেন, সেদিন দিব্যজ্যোতি ছিলেন হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায়। গিয়েছিলেন বাবার চিকিৎসার কারণেই এক চিকিৎসকের কাছে। দিল্লি ফেরার পথে গাড়িতে খবরটা শোনেন যে, তৃণমূল নেত্রী তাঁকেই প্রার্থী করেছেন পুরুলিয়া কেন্দ্রে। সেদিনই কলকাতায় ফিরে কালীঘাটে পুজো দিয়ে পুরুলিয়ায় ফিরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রচারে। রবিবার পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রায় প্রচারে বেরিয়ে দিব্যজ্যোতি বলছিলেন, ‘‘আমার রক্তেই তো রাজনীতি! প্রথম দু-এক দিন কিছুটা অন্য রকম লেগেছে। পরে সব স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে।’’

বাণিজ্যে স্নাতক, লখনউ থেকে এমবিএ করে চাকরি নিয়েছিলেন একটি বহুজাতিক সংস্থায়। সেখানে কয়েক বছর কাটিয়ে দিল্লিতে একটি বিদেশি ব্যাঙ্কের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন। বাবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে একমাত্র সন্তান হিসেবে বাবাকে দেখভালের জন্য ফেব্রুয়ারিতে চাকরিতে ইস্তফা দেন। দিব্যজ্যোতির কথায়, ‘‘নভেম্বরেই কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়েছিলাম চাকরি ছাড়ার। তখনও আমি যে ভোটে লড়ব, ভাবনার মধ্যেই ছিল না।’’

কর্পোরেট হাউস ছেড়ে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা লেগে থাকা পুরুলিয়ার গলিঘুঁজি ও গ্রাম ঘুরে তাঁকে সাধারণ ভোটারদের কাছে শুনতে হচ্ছে পানীয় জলের অভাব, কর্মসংস্থান না হওয়া কিংবা স্বাস্থ্যের বেহাল দশার কথা। কী ভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন এই নতুন চাকরিতে? দিব্যজ্যোতির কথায়, ‘‘আমি পুরুলিয়ারই ছেলে। পুরুলিয়ার সঙ্গে আমার নাড়ির যোগাযোগ। বাবা এত দিন যে সমস্ত কাজ করেছেন, আর যে কাজগুলি ভাবনার মধ্যে ছিল, মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে সেই কাজগুলি করতে চাই। সবার উপরে দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, তা পালন করব।’’

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দলের কর্মীদের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি সেরে ফেলেছেন একাধিক কর্মী-বৈঠকও। প্রার্থী হিসাবে শিক্ষিত, সুদর্শন এই যুবককে পছন্দ হয়েছে দলের কর্মীদেরও। তাঁদেরই অন্যতম জগন্নাথ মাহাতো বলছিলেন, ‘‘ওঁর তো একটা রাজনৈতিক পরিচয় আছেই। সর্বস্তরের কর্মীরাই কে পি-দার বাড়িতে যাওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই ওঁকে দেখেছে। তা ছাড়া, উনি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। সবাই হাসিমুখেই স্বাগত জানাচ্ছে।’’ পুরুলিয়ার তরুণ তৃণমূল কাউন্সিলর সাকিলদাদ খানের কথায়, ‘‘আমাদের প্রার্থী নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। আমরাও নতুন উদ্যমে প্রচারের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।’’ সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুদীপ্তা গরাঁইও জানালেন, পুরুলিয়ার এই প্রার্থী একেবারেই তরুণ। তাই তাঁকে নিয়ে নতুন প্রজন্মের ভোটারদের অনেক আশা।

জীবনে প্রথম বার ভোটের লড়াইয়ে নেমে কর্মীদের বা ভোটারদের কী বার্তা দিচ্ছেন?

সবার প্রিয় বাবুজির (দিব্যজ্যোতির ডাকনাম) কথায়, ‘‘কর্মীদের বলছি, আমি শুধু দলের প্রতিনিধি। কী করতে হবে আপনারাই বলবেন। ভোটারদের কাছেও সে কথাই বলছি।’’

candidate election assembly election 2016
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy