তৈরি হওয়ার দেড় মাসেই এই হাল হয়েছে চেকড্যামের।
মাস দেড়েক টিঁকে থেকে থাকার পরে হড়পা বানে ভেঙে গেল আরও একটি চেকড্যামের গার্ড ওয়াল। চলতি মাসের ২১ তারিখ বান্দোয়ানের লিকি গ্রামের বাসিন্দারা দেখতে পান, টটকো নদীর উপরে তৈরি চেক়ড্যামের গার্ড ওয়ালটি ভেঙে পড়েছে। এই মরসুমের বৃষ্টিতে এ নিয়ে নতুন তৈরি হওয়া তিনটি চেকড্যামের গার্ড ওয়াল ভাঙল। এই ঘটনায় নতুন তৈরি হওয়া চেকড্যামগুলির নির্মাণ কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
রুখা জেলা পুরুলিয়া সেচের বন্দোবস্ত করার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই মোতাবেক জলতীর্থ প্রকল্পে ১৭টি ব্লকে মোট ২৫৫টি চেকড্যাম তৈরির কথা ঘোষণা করা হয়। সেই কাজের জন্য বরাদ্দ হয় ২৫৫ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা। গত বছর ডিসেম্বরে বান্দোয়ানের জনসভায় চেকড্যামগুলি নির্মাণের শিলন্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বর্ষাতেই যাতে বৃষ্টির জল ধরে রাখা যায় তার জন্য প্রসাশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু জল ধরা তো দূর অস্ত, নির্মাণের পরে প্রথম বৃষ্টির ধাক্কাতেই ভেঙে পড়েছে তিনটি চেকড্যাম। সম্প্রতি পর পর ভেঙে পড়েছিল যমুনা জোড়ের উপরে সেরেংহাতু গ্রামের চেকড্যামের এবং ঘাটবেড়া গ্রামের অদূরে কুমারী নদীর উপরে নির্মীয়মাণ একটি চেকড্যামের গার্ডওয়ালের একাংশ। এ বারে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি লিকি গ্রামের কাছের চেকড্যামটি ভেঙে পড়়ল। চেক ড্যামের পাশে বোর্ডে লেখা রয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ অর্থে সেটি তৈরি হয়েছে।
পাশে বরাদ্দ লেখা বোর্ড।—নিজস্ব চিত্র
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি সেচ দফতর, পূর্ত দফতর, বন বিভাগ, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ-সহ বেশ কিছু দফতরের মাধ্যমে চেক ড্যামগুলি তৈরি করা হচ্ছে। জেলার এক পদস্থ কর্তা বলেন পুরুলিয়ায় গড়ে বছরে প্রায় ১৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু সেই জল ধরে রাখার মত পরিকাঠামো জেলায় নেই। গ্রীষ্মে বেশির ভাগ নদী, খাল বিল শুকিয়ে চাষে সমস্যা হয়। ঠিক হয়েছিল, চেকড্যাম তৈরি করে বৃষ্টির জল ধরে রাখা হবে। বর্ষার সময় লকগেট খুলে জলের তোড় বয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বর্ষার শেষে নদীতে জলের স্রোত কমে এলে লকগেট লিভারের সাহায্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুকনো মরসুমে চাষিরা পাম্প দিয়ে ধরে রাখা জল সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। সেই জলে মাছ চাষও করা যাবে।
কিন্তু পর পর তিনটি চেকড্যামের গার্ড ওয়াল ভেঙে পড়ায় সেই সমস্ত পরিকল্পনা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে। চেকড্যামগুলি ভাঙা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেচ (কৃষি ) দফতরের জেলা আধিকারিক সুবোধ সাহানা দাবি করেন, ভেঙে পড়া তিনটি চেক ড্যামের কোনওটিই তাঁদের দফতরের তৈরি নয়। লিকি গ্রামের চেকড্যাম বিষয়ে ব্লক দফতরে কোনও তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বিডিও (বান্দোয়ান) অমলেন্দু সমাদ্দার। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো লিকি গ্রামের চেকড্যামের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘‘জলের তোড়ে চেক ড্যামের গার্ড ওয়াল ভেঙেছে না পরিকল্পনায় গলদ ছিল, তা বিভাগীয় তদন্ত করে দেখা হবে।’’
লিকি গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল পরামাণিক, সুধীর পরামাণিক, অজিত মাহাতোরা বলেন, ‘‘চেকড্যাম তৈরি হওয়ার সময় ভেবেছিলাম সব্জি চাষে সুবিধা হবে। কিন্তু সমস্ত জলই বেরিয়ে গেল। বর্ষা শেষ হলে খালে আদৌ কতটুকু জল থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমাদের মনে হচ্ছে, নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার ফলেই এই কাণ্ড হয়েছে।’’ বস্তুত, আগের দু’টি চেকড্যামের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়ার পরেও একই অভিযোগ তুলেছিলেন ওই এলাকাগুলির বাসিন্দারা। এ ক্ষেত্রে লিকি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বানের কথা মাথায় রেখে গার্ড ওয়াল যতটা মজবুত করা দরকার ছিল, তা আদপে করা হয়নি। তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের জেলা সভাপতি মানবাজার ব্লকের বাসিন্দা বীরেন্দ্রনাথ মাহাতোও বলেন, ‘‘এই জেলায় নদীর ধরনটা একটু অন্য রকম। কখনও এক হাঁটু জল থাকলে, ভারী বৃষ্টিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বান নেমে আসতে পারে। চেকড্যাম তৈরির সময় সেই ব্যাপারগুলি ইঞ্জিনিয়াররা মাথায় না রাখলে মুশকিল।’’
লিকি গ্রামের চেকড্যামটির নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নির্মাণে দুর্নীতি হয়ে থাকলে তার তদন্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী। তবে পুরুলিয়ার প্রবল হড়পা বান আটকানোর চেক ড্যামের পক্ষে সব সময় সম্ভব নয় বলে মেনে নিয়েছেন তিনিও। জেলাশাসক জানান, শুখা মরসুমে চেকড্যামগুলির পাড় মেরামত করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy