Advertisement
E-Paper

চুরির ঘটনায় ম্লান চিনপাই, নমো নমো করে ভাইফোঁটা সারল

নমো নমো করে ভাইফোঁটা সারল চিনপাই। গ্রামের কালী মন্দিরে চুরি ঘটনা গোটা গ্রামের আনন্দই যেন এক লহমায় শুষে নিয়েছে!

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নমো নমো করে ভাইফোঁটা সারল চিনপাই। গ্রামের কালী মন্দিরে চুরি ঘটনা গোটা গ্রামের আনন্দই যেন এক লহমায় শুষে নিয়েছে!

বাংলার যে ক’টি পার্বণ নিজস্বতায় অমলিন, তার মধ্যে অবশ্যই একটি ভাইফোঁটা। এই উৎসব ঘিরে বাংলার বাড়িতে বাড়িতে খুশির ছোঁয়া। সঙ্গে দেদার খাওয়া-দাওয়া। প্রতি বছর ভাইফোঁটাকে ঘিরে একই ছবি থাকে বীরভূমের অন্যতম বর্ধিষ্ণু গ্রাম চিনপাইয়েও। ব্যতিক্রম এ বার। কোনও ক্রমে মাঙ্গলিক পর্বটুকু পালিত হলেও, গ্রামের দু’টি প্রাচীন সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে চুরির ঘটনা সমস্ত আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।

গ্রামের মেয়ে ও বধূরা জানাচ্ছেন, মায়ের উপর আঘাতের ঘটনা কিছুতেই সামলে উঠতে পারছেন না তাঁরা।

ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে ২১ বছর আগে বিয়ে হয়েছে গ্রামের মেয়ে নূপুর ঘোষের। প্রতিবার নিয়ম করে কালীপুজোয় বাপের বাড়ি আসেন তিনি। এ বারও এসেছেন, ভাইকে ফোঁটাও দিয়েছেন। কিন্তু, মন খুব খারাপ। বলছেন, ‘‘ভাইফোঁটার আনন্দের পুরোটা জুড়েই থাকেন মা (সিদ্ধেশ্বরী)। তাঁর দিকে যে তাকাতে পারছি না।’’ একই বক্তব্য কলকাতার বধূ চিনপাই গ্রামের মেয়ে শুক্লা মৈত্রেরও। ১৭ বছর ধরে কালীপুজোয় চিনপাই আসেন। এ বারও এসেছেন। বললেন, ‘‘নমো নমো করে ভাইফোঁটাটুকু দিয়েছি। কিন্তু কোনও আনন্দ নেই মনে। মায়ের গা থেকে এ ভাবে গয়না চুরির ঘটনা যে মানতে পারছি না।’’

বুধবার গভীর রাতে চিনপাই গ্রামে প্রাচীন দু’টি কালী মন্দির থেকে গয়না চুরির ঘটনা সামনে আসার পরে, বৃহস্পতিবার ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। গোটা গ্রামে কালীপুজোই সবচেয়ে বড় উৎসব। আদতে পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামের দুটি কালী পুজো (বিশেষ করে গ্রামের বড় সিদ্ধেশ্বরী কালীপুজো) সকলে নিজেদের বলে মনে করেন। দেবী বিসর্জন হয় ভাইফোঁটার রাতে। এই কটা দিন গ্রামের কোনও বধূ বাপের বাড়ি তো যানই না। উল্টে গ্রামের সব বিবাহিত মহিলারা বাপের বাড়িতে আসেন। ভাইফোঁটার দিন সকালে স্নান সেরে মেয়ে-বধূরা ধান, দুর্বা, চন্দন, মিষ্টিতে সাজানো থালা নিয়ে প্রথমেই কালী মন্দিরে আসেন। দেবীকে নিবেদন করেন। তার পরে বাড়ি গিয়ে ফোঁটা দেন ভাইকে। শুক্রবার ভাইফোঁটার সকলে মন্দিরে এসেছিলেন গ্রামের বধূ ও মেয়েরা। কিন্তু অনেক কম সংখ্যায় এবং ভারাক্রান্ত মন নিয়ে। মন্দিরে উঠে অনেকেই কেঁদে ফেলছেন। তাঁদেরই একজন তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়, বলছেন ‘‘অলঙ্কারহীন মায়ের মুখের দিকে যে তাকাতে পারছি না।’’

যাঁদের কালীপুজো, সেই পরিবারের বধূ তোতন আচার্য বলছেন, ‘‘১৭ বছর আগে বিয়ে হয়ে এসেছি গ্রামে। এমন কাণ্ড কখনও ঘটেনি। বুকে চাপা কষ্ট জমে রয়েছে। ভাইফোঁটায় কী করে আনন্দ করব। অনেকের বাড়িতে ভাল করে রান্নাই হয়নি। অথচ অন্য বার কত আনন্দে থাকে গোটা গ্রাম।’’ নিয়ম অনুয়ায়ী, ভাইফোঁটার পরে দেবীকে রুটি ভোগ দেওয়া হয়। প্রসাদ খেয়ে, দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে সকলেই ফের মন্দিরে আসেন। সিঁদুর তেল, পান-সুপারি দিয়ে বরণ পর্ব চলে মন্দিরে। সন্ধ্যার পরে কাঁধ দোলায় বিসর্জনে মাতেন সকলেই। গ্রামের মায়া বাগদি, চুমকি বাগদি, ঝুমা বাগদিরা বললেন, ‘‘এ বারও সব হবে। আনন্দটাই একেবারে ম্লান হয়ে গিয়েছে।’’

Chinpai Bhai dooj চিনপাই
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy