Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বেড়োতে ঘেরাও হলেন কর্মীরা

পাহাড় কাটা বন্ধ করে দিল কমিটি

এত দিন ছিল সভা-সমিতি ও মিছিলের মাধ্যমে পাহাড় কেটে গ্রানাইট হাব তৈরির বিরোধিতা। এ বার জবরদস্তি করে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’-র বিরুদ্ধে।

বেড়োর পাহাড়। ফাইল চিত্র

বেড়োর পাহাড়। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫০
Share: Save:

এত দিন ছিল সভা-সমিতি ও মিছিলের মাধ্যমে পাহাড় কেটে গ্রানাইট হাব তৈরির বিরোধিতা। এ বার জবরদস্তি করে সেই কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ‘পাহাড় বাঁচাও কমিটি’-র বিরুদ্ধে। রবিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ কমিটির সদস্যেরা রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেড়ো গ্রামের ওই পাহাড়ে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন সংস্থার লোকজনদের।

পরে পুলিশ গিয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। সন্ধ্যার পরে ঘেরাও তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু কমিটির তরফে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হয়, কোনও ভাবেই বেড়ো গ্রামের এই পাহাড় কেটে গ্রানাইট বের করা চলবে না। পুলিশের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছেও তাদের দাবি পাঠিয়েছে কমিটি। মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেড়ো গ্রামে গ্রানাইট হাব প্রকল্পের সমস্যার কথা শুনেছি। আপাতত পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে। আমরা দ্রুত ওই কাজের দায়িত্বে থাকা ডব্লউবিএমডিটিসিএল-এর (ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটড) সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ফের আলোচনায় বসব।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় এসে রঘুনাথপুরের এই গ্রানাইট হাব প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। তারপরেই এমডিটিসিএল বেড়ো ও খাজুরা পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রানাইট পাথর বের করার প্রকল্পে গতি আনার কাজ শুরু করে। তবে প্রথমেই হোঁচট খেতে হয় রাজ্যের এই সংস্থাকে। খাজুরা পঞ্চায়েতের কুইলাতোড়া গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায় পাহাড়ে থাকা ধর্মীয় স্থান নষ্ট হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় কাজের বিরোধিতা করেন। সেই কাজ শুরু হয়নি। বেড়ো গ্রামে পাহাড় কেটে গ্রানাইট বের করার কাজ চললেও গত কয়েক মাস ধরে সেখানেও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার দাবিতে পাহাড় বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন কিছু লোক। যদিও ওই গ্রামেরই কিছু মানুষ এলাকার উন্নয়নের দাবিতে এবং কর্মসৃষ্টির সম্ভাবনার কথা গুরুত্ব দিয়ে হাবের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলেন।

এরই মধ্যে রবিবার দুপুরে বেড়ো গ্রামে পাহাড়ের নীচে সভা ডাকা হয়। সেখান থেকেই কমিটির শতাধিক লোকজন পাহাড়ে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। তাঁরা ঘেরাও করে রাখেন পাহাড় কাটার কাজের বরাতপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থার লোকজনদেরও। কমিটির কর্মকর্তা কেশব আচারিয়া দাবি করেন, ‘‘এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্যই বাসিন্দারা পাহাড় কাটার বিরোধিতা করছেন। সংস্থাটি ও প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছে কাজ বন্ধ রাখার জন্য। কিন্তু কর্ণপাত না করায়, এ দিন গ্রামের লোকজন গিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’’

বস্তুত, বেড়ো পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ে উন্নতমানের গ্রানাইট রয়েছে বলেই এখানে গ্রানাইট হাব তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এমডিটিসিএল সূত্রের খবর, এই এলাকার গ্রানাইট মানের দিক থেকে রাজস্থানের সমতূল্য। তাই হাব হলে এই এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি।

বিরোধিতা করা লোকজনের মধ্যে আগে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের কেউ কেউ ছিলেন। পরে দলের নির্দেশে কমিটি থেকে তাঁরা সরে দাঁড়ান। তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধী সিপিএম ও বিজেপি স্থানীয় বাসিন্দাদের ভুল বুঝিয়ে এলাকার উন্নয়ন ব্যাহত করতে চাইছে। যদিও কেশববাবুরা সেই অভিযোগ মানতে চাননি।

এত দিন সভা, সমিতি, মিছিলের মাধ্যমে প্রকল্পের বিরোধিতার পরে সরাসরি কাজ বন্ধ করার পথে কমিটি হাঁটায়, রঘুনাথপুরের এই গ্রানাইট হাব নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছ পুলিশ, প্রশাসন। কাশীপুরেও এ ভাবেই এলাকার লোকজন কমিটি গড়ে এমডিটিসিএল-এর পাহাড় কাটার একটি প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রীকেও। একই ভাবে রঘুনাথপুরের এই প্রকল্পে সক্রিয় বিরোধিতা শুরু হওয়ার ঘটনায়, চিন্তায় প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার আশঙ্কা, ‘‘যে ভাবে বেড়োতে কাজ বন্ধ করা হয়েছে, তাতে কাশীপুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hills Committee Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE