Advertisement
১৭ মে ২০২৪

হাঁসনে ঘর গোছাতে সভা অধীরের

গত ছ’বারই বিধানসভা কেন্দ্রটি তাদের দখলে এসেছে। কিন্তু, সেই বিধায়কই মাঝপথে দল ছেড়ে দিয়েছেন। বাম জমানার প্রবল দাপটের দিনেও এই এলাকা থেকে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই দল সাফল্যের সঙ্গে জিতে এসেছে।

সমর্থকদের মাঝে। চাঁদপাড়ায় ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

সমর্থকদের মাঝে। চাঁদপাড়ায় ছবিটি তুলেছেন সব্যসাচী ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

গত ছ’বারই বিধানসভা কেন্দ্রটি তাদের দখলে এসেছে। কিন্তু, সেই বিধায়কই মাঝপথে দল ছেড়ে দিয়েছেন। বাম জমানার প্রবল দাপটের দিনেও এই এলাকা থেকে পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই দল সাফল্যের সঙ্গে জিতে এসেছে। অথচ বিধায়কের পথ ধরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ এলাকার ৯টি পঞ্চায়েতের সংখ্যগরিষ্ঠ জয়ী সদস্য তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন।

এ রকমই এক প্রতিকূল অবস্থায় দাঁড়িয়ে হাঁসন বিধানসভা কেন্দ্রে ঘর সামলাতে মাঠে নেমে পড়লেন খোদ প্রদেশ কং‌গ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। রবিবার মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়ায় অধীরের নেতৃত্বে জনসভা, তারই সূচনা বলে দাবি করলেন জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব। জনসভায় অধীরবাবু বলেন, ‘‘বীরভূমে কংগ্রেস দুর্বল হলেও হাঁসন কেন্দ্রের মানুষ বরাবর আমাদের সমর্থন করেছেন। হাঁসন এলাকার মানুষের ভালবাসা, আশীর্বাদ ও দোয়া পেয়ে কংগ্রেস এখানে জয়ী হয়েছে। তাই ব্যক্তিকে নয়, কংগ্রেসকে ভালোবেসে আগামী দিনেও হাঁসন এলাকায় কংগ্রেস জয়ী হবে। আমি আশাবাদী।’’

ঘটনা হল, জেলার একমাত্র এবং ছ’বারের কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল গত ২১শে জুলাই কলকাতায় শহিদ দিবসের মঞ্চে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তার কিছু দিন পরেই কংগ্রেস পরিচালিত রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি-সহ দলের প্রতীকে জয়ী অনেকেই কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমূলে নাম লেখান। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বর্তমানে হাঁসন বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেসের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। জনসমর্থনও নেই।

এ দিন যেন তারই জবাব দিতে মঞ্চে উঠেছিলেন অধীর চৌধুরী। জেলায় মাঝে বেশ কয়েক বার এলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হাঁসন এলাকায় এই প্রথম দলীয় জনসভা করলেন প্রদেশ কং‌গ্রেস সভাপতি। দলত্যাগী বিধায়কের নাম না করে অধীর বলেন, ‘‘কংগ্রেস দলে কোনও কোনও ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হয়ে যাওয়ার পরে মনে করেন যে দল নয়, মানুষের আশীর্বাদ, দোয়া নয়— ব্যক্তিই বড়। কংগ্রেস দল কারও কারও ভাল না লাগতেই পারে। কিন্তু, দলের প্রতীকে জেতার পরে সেই দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করে বা মতামত না নিয়েই রং পাল্টান।’’ এর পরেই কংগ্রেসের ওই দাপুটে নেতার চ্যালেঞ্জ, ‘‘রাজনৈতিক সততা থাকলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ্য ভাই হিসেবে তৃণমূলের প্রতীকে জিতে তৃণমূলে গেলে হিম্মত বুঝতাম।’’ অসিতবাবুর দলত্যাগে কোনও ক্ষতি হয়নি বলেই তাঁর দাবি। অধীরের বক্তব্য, ‘‘আমরা খুশি। কারণ বদ রক্ত বেরিয়ে গেলে কংগ্রেসের রক্ত আরও সতেজ এবং সজীব হবে।’’

সভায় ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি, কার্যকরী সভাপতি রবিউল ইসলাম, খড়গ্রামের বিধায়ক আশিস মারজিৎ, কান্দির বিধায়ক তথা পুরপ্রধান অপূর্ব সরকার, আইএনটিইউসি-র জেলা সম্পাদক মিলটন রশিদ প্রমুখ। নিজের বক্তব্যে জিম্মি দাবি করেন, ‘‘প্রলোভন দেখিয়ে কংগ্রেসের বিধায়ককে তৃণমূলে ঢোকানো হয়েছে। কংগ্রেস কর্মীরা কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে নেই। আজকের সভার উপস্থিতিই তার প্রমাণ।’’ দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মিলটন রশিদও। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘মিরজাফরদের তাড়াতে বাংলার নবাব অধীর চৌধুরী উপস্থিত হয়েছেন। বেইমানি, বিশ্বাসঘাতকদের জবাব দেওয়ার জন্য আজ থেকে হাঁসন কেন্দ্রে বীজ বোনা হল। আগামী দিনে এই বীজই মহিরুহ হয়ে যোগ্য জবাব দেবে।’’ বারবার চেষ্টা করা হলেও অসিতবাবু এ দিন ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE