Advertisement
E-Paper

সৌধের পাশে নির্মাণ কেন, প্রশ্ন বিষ্ণুপুরে

রাজবাড়ির চারপাশের পরিখা রয়েছে। সেই পরিখার উঁচু পাড়ের উপরে রয়েছে গুমঘর বা ফোয়ারাখানা। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েকদিন ধরে গুমঘরের দু’পাশে ইট তুলে নির্মাণ কাজ চলছিল।

শুভ্র মিত্র

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:২৩
বিতর্কে: গুমঘর বা ফোয়ারাখানার সামনে উঠছে ইটের গাঁথনি। এই নিয়েই শোরগোল শুরু হয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

বিতর্কে: গুমঘর বা ফোয়ারাখানার সামনে উঠছে ইটের গাঁথনি। এই নিয়েই শোরগোল শুরু হয়েছে বিষ্ণুপুর শহরে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

প্রাচীন সৌধের লাগোয়া ফাঁকা জায়গায় ফের নির্মাণ কাজের অভিযোগ উঠল বিষ্ণুপুরে। পর্যটকদের কাছে এই মন্দিরনগরীর আকর্ষণ বাড়াতে যে দিন বিষ্ণুপুর মিউজিক ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করা হচ্ছে, সেই শুক্রবারই গুমঘর বা ফোয়ারাখানা কাছে ওই নির্মাণের কাজ ঘিরে অভিযোগ ওঠায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। খবর শুনে থানায় অভিযোগ করতে যাবেন বলে জানিয়েছেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের বিষ্ণুপুর মণ্ডল কর্তৃপক্ষ।

মল্লরাজাদের সাবেক রাজধানী বিষ্ণুপুর শহরের আনাচে কানাচে বহু ঐতিহাসিক সৌধ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তার কিছু ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ করছে। গুমঘর বা ফোয়ারাখানা সেই তালিকায় নেই। তবে ওই সৌধের কাছেই রয়েছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের অধিগৃহীত শ্যামরাই ও জোড়বাংলা মন্দির। নিয়ম অনুযায়ী, তাদের অধিগৃহীত সৌধের নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে কোনও প্রকার নির্মাণ করা যায় না। তাই গুমঘর বা ফোয়ারাখানার কাছে যে নির্মাণকাজ চলছে, তা অবৈধ বলেই মনে করছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতরের আধিকারিকেরা।

রাজবাড়ির চারপাশের পরিখা রয়েছে। সেই পরিখার উঁচু পাড়ের উপরে রয়েছে গুমঘর বা ফোয়ারাখানা। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েকদিন ধরে গুমঘরের দু’পাশে ইট তুলে নির্মাণ কাজ চলছিল। তবে এ দিন থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা সঙ্গীত উৎসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, সেই সুযোগে জোরকদমে ইট গাঁথার কাজ শুরু হয়। তাতেই অনেকের নজর পড়ে।

বস্তুত, সংরক্ষিত মন্দিরের পাশে মাটি কাটা, মন্দির ঘেঁষে নির্মাণের ভূরি ভূরি অভিযোগ বিষ্ণুপুর থানায় জমা হয়েছে। সেই তালিকায় হয়তো এই অভিযোগের সংযোজন হবে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না কেন? ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিষ্ণুপুর মণ্ডলের সহায়ক সংরক্ষক সুনীল কুমার বলেন, ‘‘আসলে পর্যটন দফতরের সঙ্গীত মেলা নিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। ফুরসত পাচ্ছি না। কর্মীদের কাছে ওই নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ শুনেছি। আমি নিজে গিয়ে সরেজমিনে দেখে অবশ্যই বিষ্ণুপুর থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাব।’’

কয়েক বছর আগে মহকুমা প্রশাসন জোড় শ্রেণি মন্দিরের কাছে কংক্রিটের নির্মাণ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরেও নির্মাণের অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। প্রশাসন থেকে কয়েক বছর আগে এই জায়গাটি সাফসুতরো করে ‘গুমঘর’ বলে চিহ্নিত করে বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। তবে বিষ্ণুপুরের ইতিহাস গবেষক চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্ত দাবি করেছেন, ‘‘এটি মূলত ইটের তৈরি প্রাচীন ফোয়ারাখানা। রাজবাড়ির চারপাশে পরিখার জল নিয়ন্ত্রণ করা হত এখান থেকেই।’’ তিনি জানান, কয়েক বছর আগে এই সৌধের পাশ থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছিল শুনে প্রতিবাদ করেছিলেন। বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন কয়েক বছর আগে উদ্যোগী হয়ে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করল। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তাহলে প্রাচীন ফোয়ারাখানার নজর রাখা হচ্ছে না কেন?’’

যাঁর বিরুদ্ধে ওই নির্মাণ কাজের অভিযোগ উঠেছে, তিনি রাজবাড়িরই একজন সদস্য। তিনি দাবি করেছেন, ‘‘মা মৃন্ময়ী ঠাকুরের রান্নার সরঞ্জাম রাখার জায়গা নেই। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর মৃন্ময়ী মন্দির লাগোয়া জায়গায় সরঞ্জাম রাখার জন্য গুদাম তৈরি করতে দেয়নি। তাই ওই জায়গায় গুদাম তৈরি করছি।’’ যদিও তাঁর ওই কাজের সমর্থন করছেন না রাজবাড়ির অধিকাংশ সদস্যই।

পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের বিষ্ণুপুর মণ্ডলের আধিকারিকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, ওই প্রাচীন সৌধের কাছেও নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কাজেই ওই নির্মাণ চলতে পারে না।

Memorials Construction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy