অনটন: এই বাড়িতেই পরিবার নিয়ে থাকেন সুধন। নিজস্ব চিত্র
ভোরবেলায় ট্রেনের আওয়াজে ঘুম ভাঙত। এখন ঘুমই আসে না দু’চোখে। সুনসান স্টেশন। তবু প্রতিদিনের অভ্যাসমতো সকাল হলেই এখনও ছুটে যাই স্টেশনে। বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করা আছে স্টেশনে যাওয়ার পথ। বাঁশ ডিঙিয়েই প্ল্যাটফর্মে যাই। হেঁটে বেড়াই। দুপুরে বাড়ি ফিরে যাই।
ঘরের ভিতরে অভাব, আর বাইরে করোনা রোগের আতঙ্ক। আমাদের কাছে লড়াইটা আরও কঠিন। পাঁচ দিন ধরে রুজি বন্ধ। যমজ দুই ছেলে লব আর কুশ স্কুল থেকে চাল আর আলু পেয়েছে। দিন দু’য়েকেই তা শেষ। ভাত জোটে না সব দিন। শুকনো মুড়ি কিংবা চালের খুদ সিদ্ধ করে রাখেন বৃদ্ধ মা। কোনও দিন ভাগ্য ভাল হলে ফেন-ভাত জুটে যায়। স্ত্রী লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করত। এখন বাবুরা রোগের ভয়ে তাকে যেতে বারণ করেছে। খাব কী?
বাবার হাত ধরেই এক দিন রেলের কুলিগিরি করতে এসেছিলাম। তাঁর মৃত্যুর পরে পাকাপাকি ভাবে কুলির কাজ পেয়ছি। ১৩ বছর এক টানা বিষ্ণুপুর রেল স্টেশনে কুলিগিরি করে এখন আর মন টিকছে না ঘরে।
পাকা ঘর-বাড়ি না করতে পারলেও খড়ের চালের উপরে পলিথিন বিছিয়ে মাটির ঘরেই ছিলাম সুখে। কিন্তু শরীরে জোর থাকতেও ভাতের অভাব হবে, ভাবিনি কোনও দিন। দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার করেছি। রবিবার সব কিছুই বন্ধ ছিল। সোমবার স্টেশনে গিয়ে দেখলাম, হাত বাড়িয়ে দিলেও লোকে ব্যাগপত্র দিতে চাইল না। পরিচিতেরাও ট্রলি, ব্যাগ দিলেন না। শুনলাম, দেশ জুড়ে করোনা নামে একটা রোগ ছড়াচ্ছে। ট্রেন চলছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy