Advertisement
০২ জুন ২০২৪

একশো দিনের কাজে দুর্নীতির নালিশ মুরারইয়ে

প্রথমে সিপিএম। পরে কংগ্রেস। এ বার বিজেপি-ও! তৃণমূল পরিচালিত মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি অভিযোগ তুলে অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি করল রাজ্যের ওই বিরোধী দল। বুধবার এই মর্মে পনেরো দফা দাবি জানিয়ে মুরারই ১ বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিজেপি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সিপিএম ও কংগ্রেস ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে ইন্দিরা আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৪
Share: Save:

প্রথমে সিপিএম। পরে কংগ্রেস। এ বার বিজেপি-ও!

তৃণমূল পরিচালিত মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি অভিযোগ তুলে অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি করল রাজ্যের ওই বিরোধী দল। বুধবার এই মর্মে পনেরো দফা দাবি জানিয়ে মুরারই ১ বিডিও-র কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিজেপি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সিপিএম ও কংগ্রেস ওই পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে ইন্দিরা আবাস যোজনা এবং একশো দিনের কাজ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল। এসডিও (রামপুরহাট) এবং জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করাও হয়েছিল। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর নির্দেশে এসডিও উমাশঙ্কর এস অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

এ দিনের কর্মসূচিতে দলের পক্ষে হাজির ছিলেন বিজেপি-র জেলা সম্পাদক সুধীররঞ্জন দাসগোস্বামী, মুরারই ১ ব্লক মণ্ডল কমিটির সভাপতি জয়দেব দত্ত প্রমুখ নেতৃত্ব। সুধীরবাবুর অভিযোগ, ‘‘ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্পে দুর্নীতির নিরিখে মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতি জেলায় সবার উপরে। এলাকার সাতটি পঞ্চায়েতে সমস্ত জায়গায় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির মধ্যে স্কোর অনুযায়ী ‘পি-১’ বা ‘পি-২’ তালিকাভুক্তদের বঞ্চিত করে অপেক্ষাকৃত নীচে নাম থাকা উপভোক্তাদের সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, শুধু মাত্র তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের সুবিধে পাইয়ে দিতেই এমনটা করা হচ্ছে। বিজেপি-র আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত সমিতির অধীন তৃণমূল পরিচালিত মুরারই পঞ্চায়েতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। সুধীরবাবু উদাহরণ দিয়ে দাবি করেন, এলাকার ভাদিশ্বর গ্রামে তালবোনা পুকুরে মাটি কাটার কাজ করার নামে এক কোদাল মাটি না কেটেও প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ দিন মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের মুরারই এলাকায় পানীয় জল সঙ্কট নিয়েও বিজেপি সরব হয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি ধীমানকুমার সাহার দাবি, ‘‘দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের তালিকাতেই গলদ আছে। বাম আমলে তৈরি ওই তালিকায় অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারকেও দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী উপভোক্তার তালিকায় নাম রাখা হয়েছে।’’ তাঁদের নাম বাদ দিতে গিয়েই ‘স্কোর জাম্প’ করতে হচ্ছে বলে সভাপতির বক্তব্য। যদিও তালিকা সংশোধন না করে এ ভাবে ‘স্কোর জাম্প’ করা যায় কিনা, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। এ দিকে, ধীমানবাবু আরও দাবি করেছেন, এলাকার বেশ কিছু পঞ্চায়েতে ‘পি-১’ তালিকাভুক্ত উপভোক্তাদের তালিকা শেষ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ‘পি-২’ স্কোর পাওয়া পরিবারদের ‘ইন্দিরা আবাস যোজনা’য় গৃহ নির্মাণের টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। অন্য দিকে, মুরারই এলাকার জলসঙ্কট নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘গোপালপুর গ্রামে নতুন জল প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। গুসকিরা গ্রামে জল প্রকল্পের কাজ চলছে। মুরারইয়ের ভাদিশ্বর গ্রামে নতুন জলপ্রকল্পের কাজের অনুমোদনও মিলেছে। আশা করা যায় এপ্রিল মাসের শেষে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’’ এই সমস্ত কাজগুলি শেষ হলে মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দূর হবে বলে তাঁর আশ্বাস।

এ দিকে, জেলা প্রশাসনের তদন্তে পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত কয়েকটি পঞ্চায়েতে কিছু কাজে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। এ দিন এসডিও (রামপুরহাট) উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট বিডিও আমাকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। আমি সেই রিপোর্ট প্রকল্পের জেলা দফতরে পাঠিয়েছি। ইন্দিরা আবাস নিয়ে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। তবে, তদন্তে একশো দিন প্রকল্পের কিছু কাজে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।’’ তিনি আরও জানান, মঙ্গলবারই জেলাশাসক বিডিও-কে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মুরারই ১ বিডিও আবুল কালাম বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা হবে।’’ এ বিষয়ে ধীমানবাবু যদিও দাবি করেন, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে বরাদ্দ টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE