ম্যাটাডোর আটকে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে সিপিএমের কর্মীদের উপর লাঠি, ইট, টাঙ্গি নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। গাড়িও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে সিপিএম মিছিল বের করলে সেখানেও হামলা চলে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার জয়পুরের ঘটনা। তিন জন জখম হয়। সিপিএম এই ঘটনায় তৃণমূলের স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ মানতে চাননি।
ক্ষতিগ্রস্ত আলু চাষিদের কাছ থেকে সরকারি ভাবে আলু কেনা, ১০০ দিনের কাজের সুনিশ্চিত করণ-সহ নানা দাবিতে এ দিন জয়পুর ব্লকের বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা ছিল সিপিএমের। সে জন্যই একটি ম্যাটাডোর চড়ে প্রায় ৩০ জন সিপিএম কর্মী ও সমর্থক জয়পুরে তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। জয়পুর হাটতলার কিছুটা আগেই লাঠি, ইট, টাঙি নিয়ে জনা ১৫ লোকজন তাঁদের গাড়ির পথ আটকায় বলে অভিযোগ। গাড়ি থামতেই শুরু হয় ভাঙচুর। ওই গাড়িতে থাকা সিপিএম কর্মীদের অভিযোগ, গাড়ির ভিতর থেকে তাঁরা প্রতিবাদ করলে দুষ্কৃতীরা গাড়ি থেকে তাঁদের টেনে নামায়। তারপর মারধর শুরু করে রাস্তার মাঝেই। প্রায় ১০ মিনিট এ ভাবে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর চলতে থাকে বলে তাঁদের অভিযোগ। পরে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে গেলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।
এই ঘটনায় জখম সিপিএম কর্মী জিয়াউর জমাদারকে বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসা হয়। মাথায় চোট পেয়েছেন তিনি। ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, “আমরা স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই ওরা বিনাকারণে আমাদের উপর হামলা করে। কেন আমাদের মারা হচ্ছে জিজ্ঞেস করতে ওরা বলে, ‘খুব ডেপুটেশন দেওয়ার ইচ্ছে তোদের। এ বার যমের ঘরে যা’ বলে মারধর করতে শুরু করে।’’ তিনি জানান, মারখাওয়ার পরে দলীয় কর্মীরা পার্টি অফিসে গিয়ে ঘটনার কথা জানান। সেই সময়ে দলের অফিসে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ষড়ানন পান্ডে, জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী প্রমুখ। একে একে জড়ো হন অন্য এলাকার দলীয় কর্মীরাও। সবাই মিলে জয়পুর এলাকায় মিছিল করেন। পরে তাঁরা যখন বিডিও অফিসের দিকে স্মারকলিপি দিতে যখন যাচ্ছিলেন, অভিযোগ, সেই সময় ফের তৃণমূল আশ্রিক দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। তবে সেই সময় আক্রমনকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা রুখে দাঁড়ায় মিছিলে উপস্থিত বাম সমর্থকেরা। তাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে চম্পট দেয় হামলাকারীরা। বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পরে জয়পুর থানায় গিয়ে এলাকার তৃণমূল নেতা কাল্টু সেখ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ দায়ের করে সিপিএম। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে একাধিকবার উঠে এসেছে জয়পুর ব্লকের নাম। বেশ কয়েক মাস সন্ত্রাসের জেরে সিপিএমের এলাধিক শাখা, লোকাল কমিটির অফিস বন্ধ ছিল। জোনাল অফিসেরও একই অবস্থায় ছিল বলে অভিযোগ। তবে সম্প্রতি দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন করে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। এ দিন ধানের দাম, আলুর দাম, একশো দিনের বকেয়া মজুরি মেটানো-সহ বেশ কিছু দাবিতে মিছিল করে জয়পুরের বিডিওর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিল সিপিএম। সুজয়বাবুর অভিযোগ, “গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে মারতে উদ্যত তৃণমূল। এই ঘটনা তারই প্রমাণ। গরিব মানুষের স্বার্থে আমরা পথে নেমেছি দেখেই তাই ওরা পরিকল্পিত ভাবে এই হামলা চালাল।’’
অভিযোগ অস্বীকার করছে তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ দাবি করেন, “সিপিএমের মিছিলে কোনও হামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। প্রচারে আসার জন্য ওরা বানানো গল্প ফাঁদছে। আমাদের দলের কেউ এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়।” একই দাবি করেছেন তৃণমূলের জয়পুর ব্লক সভাপতি স্বপন কোলেও। তিনিও জানান, এই ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ যুক্ত নয়। যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে, তা সিপিএমের কোন্দলের জেরেই হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
বুধবারই পাশের জেলা পুরুলিয়ায় ত্রাণ বিলি নিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস সংঘর্ষ বাধে। পুরভোটের মুখে বাঁকুড়া জেলার পুরএলাকাগুলিতে যাতে রাজনৈতিক অশান্তি না ছড়ায় সে জন্য সতর্ক রয়েছে পুলিশ। তার মধ্যেই জেলার গ্রামাঞ্চলেও নতুন করে অশান্তি তৈরি হওয়ায় পুলিশ-প্রশাসন চিন্তিত। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, জয়পুরে বড় মাপের গোলমাল না হলেও ছোট ছোট গণ্ডগোলও যাতে এখন না তৈরি হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy