Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্যার, রাস্তায় অসুবিধা হয়নি তো!

পুরুলিয়ার মানবাজার শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম। কিন্তু, মানবাজার যাওয়ার বড় রাস্তায় উঠতে গ্রাম থেকে কাঁচা পথ ধরে যেতে হয় পাক্কা তিন কিলোমিটার। শীতে ধুলো, বর্ষায় কাদা। দু’পা অন্তর খানাখন্দ।

এই রাস্তা সারাতেই টুর্নামেন্টের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

এই রাস্তা সারাতেই টুর্নামেন্টের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১১
Share: Save:

তিনি এলেন। যেমন ভাবা হয়েছিল, সেই রাস্তা ধরেই এলেন। অবশ্য আর উপায়ও ছিল না। গ্রামে ঢোকার ওই একটিই পথ। সেই আসাতেই কাজ হলো। রাস্তা সারবে, এই মর্মে খোদ মহকুমাশাসকের আশ্বাস পেল হরেকৃষ্ণপুর।

এমনিতে সাদামাটা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। শীতকালে আকছার যেমন হয় গ্রামেগঞ্জে। কিন্তু, গ্রামবাসীর ফন্দিটা ছিল অন্য। প্রশাসনিক কর্তাদের নেমন্তন্ন করে বেহাল রাস্তা দিয়ে এনে দেখানো, নিত্যদিন কী ভোগান্তিটা হয়। রবিবার ফাইনালের উদ্বোধন করতে এসে মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল মানলেন, রাস্তা সত্যিই খারাপ।

পুরুলিয়ার মানবাজার শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে হরেকৃষ্ণপুর গ্রাম। কিন্তু, মানবাজার যাওয়ার বড় রাস্তায় উঠতে গ্রাম থেকে কাঁচা পথ ধরে যেতে হয় পাক্কা তিন কিলোমিটার। শীতে ধুলো, বর্ষায় কাদা। দু’পা অন্তর খানাখন্দ। কোনও এক কালে পাথর ফেলা হয়েছিল। সমান করা হয়নি। কথায় কথায় সাইকেলের চাকা পাংচার। গ্রামের বাসিন্দা মিলন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামে কংসাবতীর একটা পাম্প হাউস আছে। পাম্পে যদি কোনও সমস্যা হয়, রাস্তা খারাপ বলে সারাই করার লোকজন আসতে গড়িমসি করে।’’ গ্রামের কালীমাতা ক্লাবের আড্ডাতেও প্রায়ই রাস্তার কথা উঠতো। দরকারে রাস্তা অবরোধের কথাও বলেছিলেন কেউ কেউ।
কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়, বলে বলেও যখন কাজ হচ্ছে না, তখন প্রশাসনের কর্তাদেরই গ্রামে ডেকে এনে দেখাতে হবে।

সে জন্যই ক্রিকেট টুর্নামেন্ট!

কালীমাতা ক্লাবের সভাপতি জয়দেব চট্টোপাধ্যায় ও সম্পাদক দেবদাস চট্টোপাধ্যায় জানান, ৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬টি দল নিয়ে খেলা শুরু হয়। ফাইনাল উদ্বোধনের জন্য ডাকা হয়েছিল মহকুমাশাসক। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ মহকুমাশাসক ওই রাস্তা দিয়েই গ্রামে আসেন। আপ্যায়ন করতে এগিয়ে যান ক্লাবকর্তারা। দস্তুর মাফিক জিজ্ঞেস করেন, স্যার, রাস্তায় কোনও সমস্যা হয়নি তো? সঞ্জয়বাবু অবশ্য ওই প্রশ্নেই যা বোঝার বুঝেছেন। মুচকি হেসে তিনি বলেন, ‘‘রাস্তাটার দশা খুব খারাপ। দেখি, কী করা যায়।’’

মুন্নাভাইয়ের ঢঙেই হরেকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা রাজেশ চট্টোপাধ্যায়, তুফান চট্টোপাধায়রা বলছেন, ‘‘অবরোধ, বিক্ষোভের পথে না হেঁটে মাথা ঠান্ডা রেখেও অনেক কাজই তো হয়। দেখাই যাক না।’’ তাঁদের আশা দেখিয়েই পরে মহকুমাশাসক ফোনে বলেন, ‘‘ওই রাস্তা পাকা করা নিয়ে বিডিও-র সঙ্গে কথা বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE