Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ হেফাজতে মৃত যুবক, দিনভর অবরোধ রাজ্য সড়কে

চুরির লিখিত অভিযোগে তাঁর নাম ছিল না। স্রেফ সন্দেহভাজন হিসাবে এক রেলকর্মীর ছেলেকে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। আর বুধবার ভোরে বাড়ির লোক খবর পেলেন, ছেলেটি মারা গিয়েছে। ওই ঘটনার জেরে বুধবার দিনভর উত্তপ্ত রইল পুরুলিয়ার পাড়া থানার আনাড়া এলাকা। পুলিশের মারেই এরিক সোরেন (২১) নামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে এবং দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিতে বুধবার সকাল থেকে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এরিক সোরেন

এরিক সোরেন

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
আনাড়া (পুরুলিয়া) শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

চুরির লিখিত অভিযোগে তাঁর নাম ছিল না। স্রেফ সন্দেহভাজন হিসাবে এক রেলকর্মীর ছেলেকে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। আর বুধবার ভোরে বাড়ির লোক খবর পেলেন, ছেলেটি মারা গিয়েছে।

ওই ঘটনার জেরে বুধবার দিনভর উত্তপ্ত রইল পুরুলিয়ার পাড়া থানার আনাড়া এলাকা। পুলিশের মারেই এরিক সোরেন (২১) নামে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে এবং দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিতে বুধবার সকাল থেকে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা অবরোধের জেরে রাস্তায় ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। প্রশাসন ও পুলিশকর্তারা বিশাল বাহিনী গিয়েও অবরোধ তুলতে পারেননি। ছোট গাড়িগুলিকে অন্য রাস্তা দিয়ে পার করালেও সার দিয়ে ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ে। আজ, বৃহস্পতিবার আনাড়ায় ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে বিজেপি।

এরিকের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এ দিনই রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের মাধ্যমে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের কাছে আনাড়া ফাঁড়ির ইন-চার্জ ও পাড়া থানার পুলিশের বিরুদ্ধে ছেলেকে মেরে ফেলার অভিযোগ জানিয়েছেন এরিকের বাবা। দুপুরে মহকুমাশাসকের উপস্থিতিতে রঘুনাথপুর হাসপাতালে দেহের সুরতহাল করেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “মৃতদেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে।” কোন পরিস্থিতিতে এরিক মারা গেলেন, তা নিয়ে পুলিশ অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছে। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য শুধু জানান, আনাড়া ফাঁড়ির দায়িত্বে থাকা এএসআই পঙ্কজ গুপ্তকে ক্লোজ করা হয়েছে। ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।

মৃত যুবকের বাবা এসএল সোরেন আনাড়াতেই রেলে চাকরি করেন। পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন আনাড়া রেল কলোনিতে। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনাড়া ফাঁড়ি থেকে দুই পুলিশকর্মী এসে মোটরবাইকে চাপিয়ে ছেলেকে থানায় নিয়ে যান। কারণ জানতে চাওয়া হলে, তাঁরা জানান, এলাকায় এক চুরির ঘটনায় জড়িত রয়েছে অ্যারিক।” এরিকের বোন লিলির কথায়, “আনাড়া ফাঁড়িতে গেলে আমাদের বলা হয়, ভাইকে পাড়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতেই আমরা পাড়া থানায় গিয়ে দেখি, ভাইকে থানার লক-আপে আটক রেখেছে পুলিশ। ওসিকে অনেক বার বলেছিলাম, এরিক নির্দোষ, ওকে ছেড়ে দিন। কিন্তু, ওসি বলে দেন, বুধবার রঘুনাথপুর আদালত থেকে ছাড়িয়ে নিতে।”

সেই সুযোগ আর পেল না এরিকের পরিবার। বুধবার ভোরে পাড়া থানার পুলিশ ওই যুবককে রঘুনাথপুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে সুপার শান্তনু সাহু বলেন “ওই যুবককে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়েছিল।” এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মৃত যুবকের পরিবারের লোকজনকে ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন আনাড়ার বহু বাসিন্দা। অঝোরে কেঁদে চলেছেন এরিকের দুই বোন, মা এবং আত্মীয়-পরিজন। এরিকের বাবা বলেন, “লক-আপে ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় দেখে আমরা বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু, এ দিন সকালে দু’জন পুলিশকর্মী এসে আমাদের জানান, ছেলে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে জানতে পারি, ছেলেকে আসলে মৃত অবস্থাতেই নিয়ে এসেছিল পুলিশ।” তাঁর অভিযোগ, এর থেকেই স্পষ্ট, পুলিশি হেফাজতে এরিকের উপরে অত্যাচার করা হয়েছে। তার জেরেই তিনি মারা গিয়েছেন।

মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই উত্তেজনা ছড়ায়। এরিকের মৃত্যুর জন্য পাড়া থানার ওসি নীলরতন ঘোষ ও আনাড়া ফাঁড়ির ইন-চার্জ পঙ্কজ গুপ্ত দায়ী এবং তাঁদের গ্রেফতার করে খুনের মামলা দায়ের করতে হবে, এই দাবিতে সকাল ১০টা থেকে রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু হয়। প্রশাসনিক কর্তারা মৃতের পরিবার ও অবরোধকারীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও বরফ গলেনি। রাত পর্যন্ত অবরোধ ওঠেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE