Advertisement
E-Paper

পুকুরে গৌতমের দেহ ঘিরে ধোঁয়াশা

সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধানের জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে রহস্য ঘনিয়েছে রঘুনাথপুরে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিঁখোজ ছিলেন রঘুনাথপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌতম মুখোপাধ্যায় (৫৯)। শনিবার ভোরে দত্তবাগান এলাকায় বাড়ির কাছে একটি পুকুরে তাঁর দেহ ভাসতে দেখা যায়। তাঁর মুখের সামনের দিকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০০:৩৭
প্রাক্তন পুরপ্রধানের রহস্য মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে রঘুনাথপুর থানায় বাসিন্দারা।

প্রাক্তন পুরপ্রধানের রহস্য মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে রঘুনাথপুর থানায় বাসিন্দারা।

সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধানের জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে রহস্য ঘনিয়েছে রঘুনাথপুরে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিঁখোজ ছিলেন রঘুনাথপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌতম মুখোপাধ্যায় (৫৯)। শনিবার ভোরে দত্তবাগান এলাকায় বাড়ির কাছে একটি পুকুরে তাঁর দেহ ভাসতে দেখা যায়। তাঁর মুখের সামনের দিকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। তবে বাসিন্দারা ঘটনাটি সাধারণ জলে ডুবে মৃত্যু বলে মানতে নারাজ। তাঁদের কয়েকজন থানায় গিয়ে ওসি দীপঙ্কর সরকারের কাছে তদন্তের দাবি জানিয়ে আসেন। রঘুনাথপুরের এসডিপিও পিনাকী দত্ত বলেন, ‘‘গৌতমবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় আপাতত রঘুনাথপুর থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে হয়েছে। এ দিনই দেহের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।”

এলাকায় জনপ্রিয় গৌতমবাবুকে অধিকাংশ মানুষ তাঁর ডাকনাম ‘উতু’ হিসাবেই বেশি চিনতেন। তিনি ১৯৯৫-২০০০ সাল পর্যন্ত রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ছিলেন। তিনি দলের রঘুনাথপুর শহর লোকাল কমিটির সদস্য থাকলেও গত দুই-তিন বছর যাবৎ দলের সঙ্গে তাঁর কার্যত সম্পর্ক ছিল না। গত বছর দলের সদস্য পদও পুনর্নবীকরণ করাননি। তাই বাসিন্দাদের অনেকের মতে, গৌতমবাবুকে খুন করা হলে তার পিছনে রাজনৈতিক কারণ থাকার সম্ভাবনা কম। আবার পেশায় বিমা সংস্থার এজেন্ট হলেও সম্প্রতি জমি কেনাবেচার ব্যবসা শুরু করেছিলেন গৌতমবাবু। তাই তাঁর মৃত্যুর পিছনে ব্যবসায়িক কারণ রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। তাঁর মৃত্যুতে এ দিন পুরসভায় শোকপালন করে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, তৃণমূলের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। শহরের নতুন বাজার, হাটতলা এলাকার ব্যবসায়ীরা মৃত্যুর খবর পেয়ে এক বেলার জন্য দোকান বন্ধ করে দেন।

এ দিন শহর জুড়েই ছিল গৌতমবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে আলোচনা। নতুনবাজার, দত্তবাগান এলাকার বহু বাসিন্দাই দাবি করেছেন, এই মৃত্যুর পিছনে রহস্য রয়েছে এবং তার উন্মোচনে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। একই দাবি করেছেন সিপিএমের রঘুনাথপুর লোকাল কমিটির সম্পাদক লোকনাথ হালদার এবং গৌতমবাবুর পরিবার।

এই মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরির পিছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। গৌতমবাবু বাড়ি না ফেরায় তাঁর স্ত্রী কবিতাদেবী বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় ঘনিষ্ঠদের ফোন করে তাঁর সম্পর্কে খোঁজ নেন। অথচ তাঁর বন্ধু তরুণ ঘোষ, কাজলকৃষ্ণ সিংহ বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় তাঁকে অনেকেই বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে খাদি ভাণ্ডারের সামনে কয়েকজনের সাথে গল্প করতেও দেখেছে। তাঁরাই জানিয়েছেন, উতু সেখান থেকেই বাড়ির পথ ধরেছিল। তখন পরনে ছিল গেঞ্জি ও পাজামা। অথচ এ দিন দেহ উদ্ধাদের সময়ে ওর পরনে ছিল প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি। জামা পড়েছিল পুকুরের পাড়ে গাছের ডালে। পুরো ব্যাপারটাই খুবই রহস্যজনক।’’ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গৌতমবাবুর বাড়ির রাস্তাও পুকুরের পাশ দিয়ে নয়। বাড়ি ফেরার জন্য কাজেই তাঁর পুকুরের পাশ দিয়েও যাওয়ার কথা নয়। তা হলে তিনি পুকুরে গেলেন কেন? তবে কি কেউ বা কারা তাঁকে পুকুরের কাছে নিয়ে গিয়েছিল, না কি মেলে পুকুরে ফেলে দিয়েছে? জবাব খুঁজছেন বাসিন্দারা। ঘনিষ্ঠেরা দাবি করেছেন, গৌতমবাবু ভালই সাঁতার জানতেন। তাই ডুবে মারা যাওয়ার কথা তাঁরা মানতে চাইছেন না।

কবিতাদেবীও জানান, তাঁর স্বামী বাড়িতেই স্নান ও শৌচকর্ম সারতেন। কাজেই তাঁর পুকুরে যাওয়ার কারণ নেই। তাঁর দাবি, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ অন্য দিনের মতোই বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিলেন উনি। বৃষ্টির জন্য সঙ্গে ছাতা নিলেও মোবাইল ফোন নিয়ে যাননি। রাত ১০টাতেও বাড়ি না ফেরায় ছেলেকে ও কয়েকজন পরিচিতকে ফোন করে খোঁজ নিয়েছিলাম। কেউই কিছু জানাতে পারেনি। রাতে খোঁজ করেও কোথাও পাওয়া যায়নি। শুক্রবার থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করা হয়।’’

Dead body CPM pond Raghunathpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy