Advertisement
২০ মে ২০২৪
Dengue at Bankura

লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি, প্রশ্নে বেহাল নিকাশি

প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রামাঞ্চলে ব্লক স্বাস্থ্যকর্তা ও বিডিওরা সমন্বয় রেখে কাজ করে চলেছেন। প্রতিটি পঞ্চায়েতে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে দল গড়া হয়েছে।

পাকা রাস্তা হলেও, নিকাশি ব্যবস্থা নেই। নোংরা জল জমে রয়েছে ইঁদপুরের হিরাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে।

পাকা রাস্তা হলেও, নিকাশি ব্যবস্থা নেই। নোংরা জল জমে রয়েছে ইঁদপুরের হিরাশোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৪
Share: Save:

বৃষ্টি বাড়তে বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলায় লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা। গত দেড় মাসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য জানাচ্ছে। আক্রান্তের নিরিখে এত দিন বাঁকুড়া পুরশহর এগিয়ে থাকলেও সাম্প্রতিক তথ্যে জেলার প্রত্যন্ত ব্লকগুলিতে তা লাফিয়ে বেড়েছে। বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, “ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ পেলেই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে।”

জুলাই পর্যন্ত জেলায় বৃষ্টির ভাল ঘাটতি থাকলেও অগস্ট ও সেপ্টেম্বরে এ পর্যন্ত স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্যও বলছে, ২৬ জুলাই পর্যন্ত বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২। ৮ সেপ্টেম্বর তা হয়েছে ২৫১। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রাইপুর, রানিবাঁধ ও সিমলাপাল ব্লকের প্রতিটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই থেকে সাম্প্রতিক তথ্য বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৮, ২৯ ও ১২। ইঁদপুর, হিড়বাঁধ, খাতড়া ব্লকেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বাঁকুড়া শহরে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ থেকে হয়েছে ৫৪।

কেন এই পরিস্থিতি? আঙুল উঠছে গ্রামাঞ্চলের অপর্যাপ্ত ও বেহাল নিকাশি পরিকাঠামোর দিকে। বৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলগুলিতে জল জমার সমস্যা বাড়তেই ডেঙ্গি আক্রান্ত লাফিয়ে বাড়ছে বলে মত স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশের।

প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পরিস্থিতি সামাল দিতে গ্রামাঞ্চলে ব্লক স্বাস্থ্যকর্তা ও বিডিওরা সমন্বয় রেখে কাজ করে চলেছেন। প্রতিটি পঞ্চায়েতে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে দল গড়া হয়েছে। তারা এলাকায় ঘুরে ঘুরে জমা জলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পঞ্চায়েতে খবর দিচ্ছেন। কোথাও জল জমলে দ্রুত সরাতে পদক্ষেপ হচ্ছে। এ ছাড়া, নিয়মিত মশা মারার তেল স্প্রে করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমা জলের পরিস্থিতি দেখা, কোথাও এক সঙ্গে অনেকে জ্বরে আক্রান্ত হলে বিশেষ সমীক্ষা করা ও আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে সেমিনার করে মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়তে হবে, তা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করা হচ্ছে।

তৃণমূল পরিচালিত বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদার বলেন, “ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে শহর জুড়ে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। তেমন মানুষকে সচেতন করতেও উদ্যোগী হয়েছি আমরা।”

গ্রামাঞ্চলের বেহাল নিকাশি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুনীলরুদ্র মণ্ডল বলেন, “গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা এখনও পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থার বাইরে। এ জেলা ডেঙ্গিপ্রবণ হলেও এখনও সর্বত্র নিকাশি পরিকাঠামো গড়ে তুলতে না পারা সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতা।”

সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অভয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “বাম আমলে গ্রামাঞ্চল ধরে ধরে পরিকল্পনামাফিক নিকাশি পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে কিছু ক্ষেত্রে নিকাশি নালা গড়া হলেও পরিকল্পনার অভাবে জল জমার সমস্যা রয়েই গিয়েছে।”

অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, “বাম আমলে নিকাশি ব্যবস্থা তো দূর, গ্রামে চলাফেরার রাস্তাও ছিল না। যা হয়েছে এই সরকারের আমলে। গত কয়েক বছরে জেলা জুড়ে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ার কাজ হয়েছে। ডেঙ্গি রুখতে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর পরিকল্পনামতো কাজ করে চলেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE