Advertisement
E-Paper

পড়শি ডাক্তারের বাড়িতে এডিসের লার্ভা

ঝাড়খণ্ডের বেসরকারি হাসপাতালে বুধবার মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রাণীদেবীর। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেঙ্গির কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার তার ঠিক পাশের বাড়িতেই জমা জলে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেল। সেই বাড়িতে আবার থাকেন খোদ পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৪
পাশের বাড়িতে এই জলেই বেড়ে উঠছিল এডিসের লার্ভা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

পাশের বাড়িতে এই জলেই বেড়ে উঠছিল এডিসের লার্ভা। ছবি: সুজিত মাহাতো।

ঝাড়খণ্ডের বেসরকারি হাসপাতালে বুধবার মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রাণীদেবীর। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসাবে ডেঙ্গির কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার তার ঠিক পাশের বাড়িতেই জমা জলে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেল। সেই বাড়িতে আবার থাকেন খোদ পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক।

পুরুলিয়া শহরের নর্থ লেক রোড এলাকার শিব মন্দির বাই লেনে চন্দ্রাণীদেবীদের বাড়ি। এ দিন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গুরুদাস পাত্র এবং এপিডেমোলজিস্ট সতীনাথ ভুঁইয়া ওই পাড়ায় যান। চন্দ্রাণীদেবীর পাশের বাড়িতে গিয়েই তাজ্জব বনে যান তাঁরা। সেই বাড়ির পিছনে কাচের গ্লাস, টিন, থার্মোকলের বাক্স— এ রকম বিভিন্ন জিনিসে জমে রয়েছে বৃষ্টির জল। আর তার মধ্যে এডিসের লার্ভা বেড়ে উঠছে।

সতীনাথবাবু সমস্ত দেখেশুনে জানান, বুধবারের বৃষ্টিতে জল উপচে বেশ কিছু লার্ভা ধুয়ে গিয়ে থাকতে পারে। না হলে আরও লার্ভা ওই বাড়িতে পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে তিনি দাবি করেন।

চিকিৎসক তখন বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর স্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘আমরা এই বাড়িতে ভাড়া থাকি। ফলে কিছু বলতে পারব না।’’ কিন্তু জমা জল তাঁরা কেন ফেলে দেননি সেই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ দিন স্বাস্থ্যকর্তারাই সেই সমস্ত জমা জল ফেলে দেন।

তবে চন্দ্রাণীদেবীর মৃত্যু যে ডেঙ্গিতেই হয়েছে সেই বিষয়ে এখনও নিঃসংশয় নন স্বাস্থ্যকর্তারা। ঝাড়খণ্ডের বেসরকারি হাসপাতাল ডেথ সার্টিফিকেটে তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লেখা রয়েছে, ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার’ এবং ‘ডেঙ্গি শক সিন্ড্রোম’।

পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, জুলাইয়ের শেষ থেকেই জ্বরে ভুগছিলেন চন্দ্রাণীদেবী। প্রাথমিক ভাবে পুরুলিয়ার দু’টি ল্যাবরেটরি থেকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ১১ অগস্ট জামশেদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও টালবাহানার পরে তাঁদের জানানো হয়েছিল, রক্ত পরীক্ষা করে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে এনে অন্য এক চিকিৎসকের পরামর্শে জামশেদপুরেরই অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল চন্দ্রাণীদেবীকে। সেখানে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে তাঁর রক্তে প্রথম ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়।

এই বিষয়টি নিয়েই আপাতত খটকা রয়েছে স্বাস্থ্য কর্তাদের। পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্ত বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি বলা হলেও বেশ কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। ওই মহিলার একাধিক রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু নেই বলা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের যে হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছিল, সেখান থেকে বিশদ রিপোর্ট না পাওয়া ইস্তক মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’’

তবে এই প্রসঙ্গেই পুরুলিয়ার বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলির পরীক্ষার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চন্দ্রাণীদেবীর স্বামী বিকাশ রায় ও মেয়ে শ্রীপর্ণা। স্বাস্থ্যকর্তারা বাড়িতে গিয়ে চন্দ্রাণীদেবীর চিকিৎসা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানার সময় শ্রীপর্ণা তাঁদের বলেন, ‘‘শহরের বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে হাজার হাজার মানুষের চিকিৎসা হয়। তাই সেগুলির রিপোর্ট ঠিক কি না এ বার সেটা আপনাদের খতিয়ে দেখা দরকার।’’ এই প্রসঙ্গে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলবাবু বলেন, ‘‘আমরা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ল্যাবরেটরিগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরির রিপোর্ট পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে।’’

বাড়ির পিছনে যে জমা জল নিয়ে সরব হয়ে এলাকার মহিলাদের সংগঠিত করেছিলেন চন্দ্রাণীদেবী সেটি স্বাস্থ্য কর্তাদের দেখান শ্রীপর্ণা। এলাকার বাসিন্দা মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়, মল্লিকা শূ, ইলা চট্টোপাধ্যায়রাও সেই জল নিয়ে এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের দুই কর্তার সামনে সরব হন। চন্দ্রাণীদেবীর পড়শি প্রতিমা কর্মকারা বলেন, ‘‘আজ উনি মারা যাওয়ার পরে সবাই আসছেন। টনক নড়ার জন্য একটা প্রাণ যেতে হল। নতুন শপিংমল তৈরি হওয়ার পর থেকেই নোংরা জল ওই ফাঁকা জমিতে জমছে। পুরসভার লোকজন এক দিনের জন্য খবরও নিতে আসেনি।’’

উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ফিরে গিয়ে এলাকায় জমা জল নিয়ে রিপোর্ট দেব।’’

Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy