Advertisement
E-Paper

বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলের প্রধানেই অনাস্থা উপপ্রধানের

বিধানসভা ভোটের ফলের পর থেকেই পুরুলিয়া জেলায় একের পর এক পঞ্চায়েত সমতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা আসছে। দলীয় নেতৃত্ব এ সব চলবে না বলে সতর্ক করলেও কিন্তু নিচুতলা যে তাতে কান দিচ্ছে না তা ফের সামনে এনে দিল বান্দোয়ানের কুইলাপাল পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৭:২৬

বিধানসভা ভোটের ফলের পর থেকেই পুরুলিয়া জেলায় একের পর এক পঞ্চায়েত সমতি থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা আসছে। দলীয় নেতৃত্ব এ সব চলবে না বলে সতর্ক করলেও কিন্তু নিচুতলা যে তাতে কান দিচ্ছে না তা ফের সামনে এনে দিল বান্দোয়ানের কুইলাপাল পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব।

শাসকদলেরই প্রধানকে সরাতে উপপ্রধান অন্যদলের সঙ্গে এখানে হাত মিলিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে বান্দোয়ানের বিডিও-র কাছে অনাস্থার আবেদন জমা পড়েছে। বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দার জানিয়েছেন, কুইলাপাল পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থার আবেদন তাঁর কাছে জমা পড়েছে। পঞ্চায়েতের আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ অনাস্থার আবেদন জমা পড়লেও বিডিও পঞ্চায়েত সদস্যদের ব্লক অফিসে হাজির থেকে অনাস্থার আবেদনে সই করতে বলেন। বিকেল নাগাদ অনাস্থার পক্ষে থাকা সদস্যেরা বিডিওর সামনে আবেদন পত্রে সই করেন।

কুইলাপাল পঞ্চায়েতটি বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলার সীমানায় অবস্থিত। ৯৯ শতাংশ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। এই পঞ্চায়েতে মোট ছ’টি আসন। তার মধ্যে তৃণমূলের তিন, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার দুই ও সিপিএমের একটি আসন রয়েছে। তৃণমূলের সনকা সোরেনকে প্রধান নির্বাচিত করে পঞ্চায়েত চলছিল।

পঞ্চায়েত দখল করলেও এই পঞ্চায়েতে শুরু থেকেই তৃণমূল সদস্যদের মধ্যে গোলমাল লেগেই ছিল। দেড় বছরের মাথায় সনকাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা আসে। দলের নেতারা দু’পক্ষকে বসিয়ে সে যাত্রায় পঞ্চায়েত অনাস্থা রুখতে পেরেছিলেন। পরে আড়াই বছরের মধ্যে অনাস্থা আনা যাবে না বলে আইন তৈরি হয়। সেই মেয়াদ শেষ হতেই চলে আসে বিধানসভা নির্বাচন-পর্ব। কিন্তু প্রধানের বিরুদ্ধে বাকি পঞ্চায়েত সদস্যদের ক্ষোভ ঠেকানো যায়নি।

অনাস্থার চিঠিতে এই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের নির্মল সোরেন, সিপিমের সুজন মুর্মু, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার উপেল কিস্কু ও সনাতন বেসরা সই করেছেন । দলেরই পঞ্চায়েত প্রধানকে সরাতে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলানেন কেন?

উপপ্রধানের অভিযোগ, ‘‘শুরু থেকেই সনকাদেবী একাই পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। কোনও সদস্যের কথা তিনি শোনেন না। এমনকী একই দলের সদস্য হওয়া সস্ত্বেও আমার সঙ্গে তিনি ছ’মাস কথা বলেননি। তাঁর বাধায় আমার সংসদভুক্ত এলাকায় এ অবধি কোনও উন্নয়নের কাজও করতে পারিনি। আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দুর্নীতি করলে প্রতিবাদ করতে পারব না, এমন নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই।’’

বিরোধী নেতৃত্বই বা কী চোখে এই জোটকে দেখছেন?

বান্দোয়ানে সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক রথু সিং বলেন, ‘‘মানুষের উন্নয়নই আসল কথা। তৃণমূল প্রধানকে সরাতে স্থানীয় স্তরে এই জোট হয়েছে। এই জোট যদি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে, তাকে আমরা স্বাগত জানাব।’’ বান্দোয়ানে বেশ কয়েকটি এলাকায় ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রভাব রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য মণীন্দ্র সোরেনের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সনকা সোরেন প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর ওই এলাকায় উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁকে সরাতে নির্মলবাবু আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তাই আমাদের মহিলা সদস্য উপেল কিস্কুকে প্রধান নির্বাচিত করে নতুন ভাবে পঞ্চায়েত চালাতে অনাস্থা আনা হয়েছে।’’ তিনি জানান, নির্মলবাবুকেই তাঁরা উপপ্রধান রাখবেন। তিনিও বলেছেন, ‘‘উন্নয়নই আসল। জোটে কে বা কারা আছে, তা বড় কথা নয়।’’

যদিও প্রধান সনকাদেবী দাবি করেছেন, ‘‘ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে অনৈতিক ভাবে আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হচ্ছে। কোনও নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ করিনি।’’

বান্দোয়ানের তৃণমূল ব্লক সভাপতি রঘুনাথ মাঝি অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘কুইলাপাল পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনা হয়েছে বলে আমি জানি না। ঠিক কী হয়েছে, ওই এলাকার সদস্যদের ডেকে খোঁজ নিচ্ছি।’’

Panchayat Samithi gram panchayat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy