Advertisement
০২ মে ২০২৪

ওয়ার্ডে বাতিল নোট বদলালেন ডাককর্মীরা

হঠাৎ জ্বরে অসুস্থ বন্ধুকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের বাসিন্দা নয়ন রায়। ভর্তি করলে কী হবে, রক্ত পরীক্ষা, ওষুধ কেনা-সহ দরকারি কাজ মেটাতে সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। কারণ তাঁর পকেটে পড়ে কয়েকটি পাঁচশো টাকার নোট।

হাতে-হাতে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।—সুজিত মাহাতো।

হাতে-হাতে। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে।—সুজিত মাহাতো।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

হঠাৎ জ্বরে অসুস্থ বন্ধুকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের বাসিন্দা নয়ন রায়। ভর্তি করলে কী হবে, রক্ত পরীক্ষা, ওষুধ কেনা-সহ দরকারি কাজ মেটাতে সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। কারণ তাঁর পকেটে পড়ে কয়েকটি পাঁচশো টাকার নোট।

শুধু তিনিই নয়, এমন সমস্যায় পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি বহু রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। বুধবার সেই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াল পুরুলিয়া জেলা ডাকবিভাগ। কর্মীরা এ দিন সদর হাসপাতালে গিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে সরাসরি ভর্তি থাকা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের টাকা বদলে দিলেন। কোথাও ওয়ার্ডে নার্সের টেবিলের কাছে এসে টাকা বদলে দিয়েছেন, যাঁরা শয্যা ছেড়ে উঠতে পারেননি, সেই সব রোগীর বেডের কাছে গিয়েও টাকা পাল্টে দিয়েছেন ডাকবিভাগের কর্মীরা।

জেলার গ্রামীণ এলাকার বহু ডাকঘরে যেখানে এখনও বদলানোর জন্য টাকা পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ উঠছে, সেখানে হাসপাতাল উজিয়ে কেন টাকা দিতে এলেন ডাকবিভাগের কর্মীরা?

পুরুলিয়া ডাকবিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পুরুলিয়া মুখ্য ডাকঘরে টাকা বদলাতে আসা অনেকেই বলছিলেন, তাঁদের রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাই বদলে দিতে হবে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই, সরাসরি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে গিয়েই আমরা রোগীদের বা তাঁদের পরিজনদের টাকা বদলে দেব।’’ এ দিন কমবেশি শতাধিক রোগীকে প্রায় চার লক্ষ টাকা বদলে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ডাক বিভাগের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই রোগীদের টাকা বিনিময়ের খবর দেওয়া হয়। সঙ্গে সচিত্র পরিচয়পত্রের প্রতিলিপিও রাখতে বলা হয়েছিল। এ দিন কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে তপনবাবু নিজেই হাসপাতালে বেলা ১২টায় আসেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে তাঁরা নার্সদের রোগীদের খবর দিতে বলেন। রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা বাতিল টাকা নিয়ে লাইন লাগান। একে একে ডাক কর্মীরাই ফর্ম পূরণ করে দেন। কারও পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি না থাকলে তাঁদের কাছ থেকে সেই পরিচয়পত্রের নম্বর সংগ্রহ করে নেওয়া হয়। ক’দিন ধরে ব্যাঙ্ক, এটিএম, ডাকঘর ঘুরেও যাঁরা টাকা বদলাতে পারেননি, এ দিন সরাসরি ডাকবিভাগের কর্মীদের এসে টাকা বদলে দিতে দেখে তাঁরা হতভম্ব!

আজিমগঞ্জের বাসিন্দা নয়ন রায় জানান, তাঁরা পুরুলিয়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। কয়েকদিন ধরে জ্বরে অসুস্থ বন্ধুকে মঙ্গলবার তিনি ভর্তি করিয়েছেন। কিন্তু ডাক্তারের কথা মতো রক্ত পরীক্ষা করাতে গিয়ে ৩০০ টাকার খুচরো তাঁর কাছে না থাকায় তিনি বিপাকে পড়েন। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন এটিএম ঘুরেছি। সব বন্ধ। তখন আমার কাছে থাকা দুশো ও বন্ধুর কাছ থেকে একশো টাকা ধার করে রক্ত পরীক্ষা করালাম।’’ হুড়ার জোজোডি গ্রামের বিবেক চট্টোপাধ্যায়ের বাবা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘টাকা নিয়েও জিনিস কিনতে পারছি না, এমন সমস্যায় কোনও দিন পরিনি। ওষুধের দোকান বলছে খুচরো নেই। পাঁচশো টাকা দিলে পুরো টাকার ওষুধ কিনতে হবে। খাবারের দোকানে বা হোটেলে পাঁচশো টাকার নোটই নিতে চাইছে না।’’ বরাবাজারের মানপুর গ্রামের বধূ মালতী কুম্ভকার বলেন, ‘‘আমি রোগীর তদারকি করব না, ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দেব? হাসপাতালে খাবার দিচ্ছে বটে, কিন্তু ওষুধপত্র, খাবার দাবার বা নানা টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতে গেলে আগে জিজ্ঞেস করছে খুচরো রয়েছে কি না।’’ পুরুলিয়া ১ ব্লকের ঘাগরজুড়ি গ্রামের প্রৌঢ়া ভানুমতী রাজোয়াড়ের স্বামী নন্দ রাজোয়াড় ভর্তি রয়েছেন। ভানুমতীদেবী বলেন, ‘‘খুচরো টাকার অভাবে খুব কষ্টে ছিলাম। ডাকবাবু যা করলেন তা ভুলবার নয়।’’

বস্তুত হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা বাতিল নোটই জমা করতে পারবেন বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তা যে সব ক্ষেত্রে হচ্ছে না, বুধবারই আনন্দবাজারে বাঁকুড়া মেডিক্যালের রোগীদের এই সংক্রান্ত সমস্যার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালে সেই অর্থে রোগীদের খরচ নেই। তবু বাইরে থেকে কেনাকাটা বা পরীক্ষা করাতে গেলে তখন খুচরো টাকা না থাকায় সমস্যা হচ্ছিল। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডাকবিভাগের এই ভূমিকার প্রশংসা করতেই হয়।’’

তবে ডাকবিভাগের কর্মীরা জানাচ্ছেন, টাকার জোগানের সমস্যা থাকায় এবং কর্মীর অভাবে তাঁরা ইচ্ছা থাকলেও সদর হাসপাতালে রোজ এইরকম শিবির করার আশা দিতে পারছেন না। ডাকবিভাগের সুপারিন্টেডেন্ট জানান, এ দিন যাঁদের সঙ্গে পরিচয়পত্র ছিল না, তাঁরা হাসপাতাল সুপারের কাছে প্রতিলিপি জমা করলে ডাককর্মীরা একদিন গিয়ে টাকা বদলে দিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, ‘‘লেপ্রসি মিশন, বৃদ্ধাশ্রম প্রভ়়ৃতি জায়গায় অনেক অসহায় মানুষ রয়েছে। তাঁদেরও এই পরিষেবা দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে আমাদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctors Hospital stuff Patient Currency note
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE