Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সামনেই গরমের দিন, জল আতঙ্কে পাথর শিল্পাঞ্চল

পাঁচামি ও তালবাঁধ পাথর খাদান এলাকার জল সমস্যা দীর্ঘ দিনের। গরমের সময় তা তীব্র আকার ধারন করে। সমস্যা দূর করতে বাম আমলে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাটগাছা জল প্রকল্প’ গড়ে তোলা হয়েছিল।

হাটগাছা জলপ্রকল্প। নিজস্ব চিত্র।

হাটগাছা জলপ্রকল্প। নিজস্ব চিত্র।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৩
Share: Save:

পাঁচামি ও তালবাঁধ পাথর খাদান এলাকার জল সমস্যা দীর্ঘ দিনের। গরমের সময় তা তীব্র আকার ধারন করে। সমস্যা দূর করতে বাম আমলে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘হাটগাছা জল প্রকল্প’ গড়ে তোলা হয়েছিল। অনেকের অভিযোগ, জল প্রকল্পের নামে ব্যয় করা টাকা কার্যত জলে গিয়েছে। প্রথম থেকেই অধিকাংশ কলে ঠিক মতো জল পড়ে না। প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা পিএইচই কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘নানা কারণে কোথাও কোথাও কলে জল পড়ে না। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে।’’

জল নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই মহম্মদবাজারের সীমান্তবর্তী অধিকাংশ এলাকাতেই। বিশেষ করে ভাঁড়কাটা অঞ্চলের পাঁচামি ও হিংলো অঞ্চলের তালবাঁধ পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকার জল সমস্যা দীর্ঘদিনের। গরমের সময় এলাকার সমস্ত জলাশয়, খাল, কুয়ো শুকিয়ে যায়। পানীয় বা ব্যবহারের জল পর্যন্ত পাওয়া যায় না। দূর-দূরান্ত থেকে জল আনতে বাধ্য হন। জল সমস্যা দূর করতে ২০০২-২০০৩ আর্থিক বর্ষে হাটগাছা জল প্রকল্প ঘোষণা হয়। রূপায়ণে ৩.৮৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করে। জগৎপুরের দাঁড়কা নদীতে তিনটি গভীর নলকূপ বসিয়ে পাম্পের সাহায্যে হাফ কিলোমিটার দূরে হিংলোর ফুলপাহাড়ি জলাধারে রেখে পরিশ্রুত করা হয়। পাঁচ কিলোমিটার দূরের হাটগাছায় ৬০ হাজার গ্যালন সম্পন্ন জলাধারে সেই জল তোলা হয়। তারপর পাইপ লাইন মাধ্যমে ৪৩টি স্থানে জল দেওয়ার কথা।

২০০৪ সালে অসমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেব। উদ্বোধনের কয়েক মাস পরে ১ জুন ২০০৫ সাল থেকে জল দেওয়া শুরু হয়। তবে প্রকল্পের কাজ চলে ২০০৬-২০০৭ পর্যন্ত। স্থানীয় লোকজনের দাবি, ঘোষিত ৪৩টি স্থানের মধ্যে কিছু স্থানে কোনও দিনই জল পৌঁছায়নি।

প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৯-২০১০ এ ফের ১.১৫ কোটি টাকার কাজ হয়। তারপরও বাস্তব চিত্রটা বদলায়নি। তার কারণ পাথর বোঝাই ভাড়ি গাড়ি যাতায়াতে অনেক জায়গায় পাইপ লাইন বসে বা ফেটে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় মাঝে জল সরবরাহ একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বছর দু’য়েক আগে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরীর হস্তক্ষেপে বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ কিছু টাকা পরিশোধ ও ৭২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পাইপ লাইন মেরামতির কাজ হয়। এবং মেরামতির পরে প্রকল্প চালু হয়।

এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের দাবি, ফের জল প্রকল্প চালু হয় ঠিকই, কিন্তু তারপরও প্রকল্পের হাল ফেরেনি। খোটেপারার লেনিন সোরেন, ঢোলকাটার সোনা টুডু, সোনাগড়িয়ার জীবন মুর্মু, বারমেসিয়ার পঞ্চায়েত সদস্যা মানি হেমব্রম, বাথানের ডরথি হেমব্রম, গিরিজোড়ের মঙ্গল হেমব্রম, লক্ষী টুডু হাবরাপাহাড়ির সুকুমার সাহাদের কথায়, এই জল প্রকল্প প্রথম থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রকল্পের মূল দায়িত্বে থাকা পিএইচই’র সহকারি বাস্তুকার বলাই সাহা বলেন, ‘‘আগের চেয়ে পরিস্থিতি ভাল।’’

জেলার সভাধিপতি বলেন, ওই প্রকল্পের পরিকল্পনাতেই ভুল ছিল। তাই এখনও জল সমস্যার সমাধান করা যায়নি। ওই এলাকার জল সমস্যা দূর করা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

summer season Water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE