Advertisement
E-Paper

দুর্নীতিতে সরব হওয়ায় হেনস্থা

স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে শৌচাগার নির্মাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এক বিধবা। অভিযোগ, তারই প্রতিহিংসায় ওই মহিলার দুই ছেলে-সহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে ঠিকাদার সংস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৫৫

স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে শৌচাগার নির্মাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এক বিধবা। অভিযোগ, তারই প্রতিহিংসায় ওই মহিলার দুই ছেলে-সহ চার জনের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছে ঠিকাদার সংস্থা। ময়ূরেশ্বরের কানাচি পঞ্চায়েতের ভেলিয়ান গ্রামের ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদেরও। সম্প্রতি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে চিঠি লিখে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বিধবা। দাবি তুলেছেন নিরপেক্ষ তদন্তেরও। ঠিকাদার সংস্থা অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। উল্টে তাদের দাবি, ওই মহিলাই লোকজন জুটিয়ে সংস্থার মিস্ত্রি-মজুরদের মারধর করেছেন। ময়ূরেশ্বর ১ বিডিও সুশান্তকুমার বসু বলেন, ‘‘মহিলার অভিযোগ খতিয়ে নেওয়া হবে।’’

বিরোধীদের দাবি, সাম্প্রতিক জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একশো দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ষাটপলশা পঞ্চায়েতে। ইন্দিরা আবাস যোজনায় আবার উপভোক্তাদের ছবিতে দেদার ফটোশপ করার অভিযোগও উঠেছে। প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে একই রকম ক্ষোভের ছবি দেখা গিয়েছে বোলপুরের কিছু পঞ্চায়েতেও। দুর্নীতির ক্ষেত্রে শাসকদলের নেতাদের সঙ্গে প্রশাসনের একাংশও জড়িত বলে বিরোধীদের দাবি। ভেলিয়ানের ঘটনা তার ব্যতিক্রম নয় বলে দাবি।স্থা নীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অরূপ বাগের অভিযোগ, ‘‘শুধু ভেলিয়ানই নয়, জেলার তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলেই ভয় দেখিয়ে, মারধরে করে চুপ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই অসহায় বিধবার ক্ষেত্রেও তৃণমূল একই কৌশল নিয়েছে।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই বিধবা স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে শৌচাগার নির্মাণের জন্য তৃণমূল পরিচিত স্থানীয় কানাচি পঞ্চায়েতে ৯০০ টাকা জমা দেন। নিয়ম অনুযায়ী, ওই প্রকল্পে উপভোক্তা ৯০০ টাকা জমা দিলেই তাঁর নামে সরকারি ভর্তুকি যুক্ত ১০,৯০০ টাকার শৌচাগার বরাদ্দ করা হয়। স্থানীয় একটি ঠিকাদার সংস্থা ওই শৌচাগার নির্মাণের দায়িত্ব পায়। প্রকল্পের নিয়ম বলছে, এক নম্বর মানের ইট দিয়ে ৩/১ ভাগে বালি ও সিমেন্টের গাঁথনি দিয়ে সৌচার নির্মিত হবে। কিন্তু ওই মহিলার অভিযোগ, ‘‘ঠিকাদার অত্যন্ত নিম্নমানের ইট এবং কম সিমেন্ট দিয়ে কাজ করছিল। আমরা আপত্তি তুলতেই স্থানীয় শাসকদলের ছেলেদের জুটিয়ে এনে কাজ বন্ধ করে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়।’’ বিডিও-কে লেখা চিঠিতে মহিলা জানিয়েছেন, ওই নিম্নমানের সামগ্রী ফেরত নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ায় বিধবার পরিজনদের একশো দিন-সহ নানা সরকারি প্রকল্পে কাজ না দেওয়ার শাসানিও দেয়। পরে ঠিকাদার সংস্থা তাঁর দুই ছেলে-সহ চার জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মারধরের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে বলে অভিযোগ। ওই মহিলার প্রশ্ন, ‘‘আমি সহায় সম্বলহীন এক বিধবা। আমি কোন সাহসে লোকজন জুটিয়ে ওদের মারধর করতে যাব?’’ প্রতিবাদের মাসুল যে তাঁকে এ ভাবে দিতে হবে, তা তিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি বলে জানান। এই পরিস্থিতিতে প্রতিকার চেয়ে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।

ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার ভীম মণ্ডল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘সরকারি সিডিউল অনুযায়ীই ওই মহিলার শৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা সিডিউল বহিভূর্ত উদ্বৃত্ত উপকরণ দিয়ে কাজ করানোর দাবি করেন।’’ তাঁর অভিযোগ, সংস্থার মিস্ত্রিরা তাতে রাজি না হওয়ায় ওই বিধবার ছেলেরা লোক জুটিয়ে তাঁদের মারধর করে। ঘটনার পরে প্রশাসনের নির্দেশেই তাঁরা থদানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে ঠিকাদার সংস্থার ওই কর্ণধারের দাবি।

এ দিকে, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কানাচি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সুরভি মণ্ডল। তবে, ভেলিয়ানের ঘটনায় অভিযোগকারী বিধবার পাশে দাঁড়াননি এলাকার বিধায়ক তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অভিজিৎ রায়। এমনকী, ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত নন বলেও বিধায়কের দাবি। সোমবার বিধায়ক বলেন, ‘‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণেই মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করা হলে সেই অভিযোগ তো প্রশাসনকে জানালেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। তা না করে ওই বিধবার পরিবারের লোকেরা মিস্ত্রিদের মারধোর করে ঠিক করেননি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মারধরের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Elderly woman Assault corruption
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy