Advertisement
E-Paper

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রচার থামল রামপুরহাট ও বোলপুরে

বিএসএনএল বাধ সেধেছিল বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত। তাই গত কালের মতো এ দিন যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য আগে থেকে সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল সব রাজনৈতিক দল। শেষ প্রচারে যাতে খামতি না থাকে সে জন্য এ দিন সকাল থেকেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘোরা শুরু করে দিয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সময় যত পেরিয়ে বিকেল তিনটের দিকে এগোছে, ততই প্রচারের গতি বেড়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:১১
শেষ বেলার প্রচারে বোলপুরে মুখোমুখি কংগ্রেস ও তৃণমূল। (ডান দিকে) রামপুরহাটে অটোয় প্রচার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী ও সব্যসাচী ইসলাম

শেষ বেলার প্রচারে বোলপুরে মুখোমুখি কংগ্রেস ও তৃণমূল। (ডান দিকে) রামপুরহাটে অটোয় প্রচার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী ও সব্যসাচী ইসলাম

বিএসএনএল বাধ সেধেছিল বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত। তাই গত কালের মতো এ দিন যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্য আগে থেকে সবরকম ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছিল সব রাজনৈতিক দল। শেষ প্রচারে যাতে খামতি না থাকে সে জন্য এ দিন সকাল থেকেই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘোরা শুরু করে দিয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সময় যত পেরিয়ে বিকেল তিনটের দিকে এগোছে, ততই প্রচারের গতি বেড়েছে। হাতের নাগালে কেউ টোটো তো কেউবা ভ্যান রিকশা। আবার কেউ আটোতে, কেউ আবার হুড খোলা গাড়িতে—এমনি দিনভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং তাদের প্রার্থীদের কার্যত দৌড়ে দৌড়ে প্রচার সারতে দেখল বোলপুর ও রামপুরহাটে।

এই ক’দিন অবশ্য অন্যান্য দিনের থেকে একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে বোলপুরের চারটি পুরসভার প্রচারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন শাসকদলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। সকালে সকালে সপার্ষদ নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা করার ফাঁকেই পাড়ায় পায়ে হেঁটে এক চক্কর দেন। জলখাবার খেয়ে বেলা ১১টা নাগাদ বোলপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী শেখ ওমরের প্রচারের জন্য বাঁধগোড়ায় হাজির হন। দলীয় কর্মী সমর্থক নিয়ে প্রচার সেরে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের শুঁড়িপাড়ায় যান। হুডখোলা জিপে সওয়ার হয়ে জোড় হাতে কার্যত ভোট চান দলীয় প্রার্থীর জন্য। এক টানা নাগাড়ে নতুন ওয়ার্ড ২০ নম্বরে গিয়ে মরিয়াপাড়া প্রচার করেন তিনি। তৃণমূল অবশ্য ৬, ৮, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রচারে বাইক মিছিল করেছে। যা নিয়ে বিরোধীরা বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন। বাকি ওয়ার্ডগুলিতে টোটোতে প্রচারে নামেন দলীয় প্রার্থী এবং কর্মী সমর্থকেরা। এ দিকে সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ কর্মী সমর্থক নিয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের দর্জিপাড়ায় পাঁচ পাঁচটা স্ট্রিট কর্নার করেন তিনি। নিজের স্ত্রী কুন্তলা সিংহের হয়ে ১৬ নম্বরে প্রচার সেরে ১৭ নম্বরে প্রচারে যান। তিনটের কিছু আগে সকলের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে প্রচারের যাবতীয় বিষয় বুঝে নেন মন্ত্রী।

মাথার ঘাম তোয়ালে মুছে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অবশ্য সমান তালে প্রচারে নেমেছে। বোলপুর পুরভোটের বামফ্রন্টের একাধিক প্রার্থী এবং কর্মী সমর্থকেরা সকাল সকাল প্রথমে সাইকেল মিছিল বের করে ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। পুরসভার ১০,১১ এবং ১২ নম্বর ওয়ার্ডে স্ট্রিট কর্নার করে বামফ্রন্ট। ছোট নেতা থেকে বর্ষীয়ান বামেদের নিয়ে সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্য এ দিন শেষ বেলার প্রচারে কার্যত জোর বাড়িয়েছেন পাড়ায় পাড়ায়। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে হাতে পদ্মফুল নিয়ে প্রচারে নামেন বিজেপি’র দলীয় প্রার্থী এবং কর্মী সমর্থকেরা। এ ছাড়াও ২, ১১, ১৭, ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় সমর্থক মহিলাদের নিয়ে মিছিল করেন প্রার্থীরা। ঘোরেন বাড়ি বাড়িও। শুধু তাই নয়, দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ওয়ার্ড ধরে ধরে ২০টি ওয়ার্ডে তিনটে পর্যন্ত কার্যত ছুটে বেড়িয়েছেন বিজেপি’র সহসভাপতি তথা বোলপুর পুরভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দিলীপ ঘোষ। অন্য রাজনৈতিকদলগুলি থেকে কিছুটা হলেও প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন কম ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে, ঠিক তেমনই প্রচারেও রয়েছে একটু পিছন সরিতে কংগ্রেস। তবে বোলপুরের ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮-সহ ন’য়টি ওয়ার্ডে চালিয়েছে জোর কদমে প্রচার। দলীয় প্রার্থীদের হয়ে টোটো সাজিয়ে বোলপুর বাজারে প্রচারে নেমেছিল কংগ্রেস। এআইসিসি সদস্য বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ও চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রদেশ কংগ্রেস অন্যতম সম্পাদক কিশোর ভট্টাচার্য, বোলপুর ব্লক সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, জেলা কংগ্রেস নেতা তপন সাহাকে মাঠে নামিয়ে প্রচারে গতি বাড়িয়ে মেক-আপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এক প্রকার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচার সারতে দেখা গেল বোলপুরে।

পিছিয়ে নেই রামপুরহাটও। সকাল ৮টা থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধূলাডাঙা রোডে তৃণমূল প্রার্থী সুপর্ণা সাহার সমর্থনে প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার করতে দেখা যায় স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। একটু বেলা গাড়াতেই দেখা যায় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী মিঠু চক্রবর্তীর সমর্থনে প্রচার চলাতে দেখা যায় বিজেপিকে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী শুভাশিস চৌধুরীর সমর্থনে শেষ বেলা পর্যন্ত পথসভা হয়। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল বের হয়। বিকেলে রামপুরহাট পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

তবে রামপুরহাট পুরসভায় এ বার প্রচারে এককভাবে নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে স্থায়ী বোর্ড করার জন্য যে আবেদন পুরবাসীর কাছে রাখা হয়েছিল, সেই সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে যথেষ্ট সন্ধিহান তৃণমূলের অনেক নেতৃত্ব। কারণ, তাঁরা মনে করেন তৃণমূলের ভিতরে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছু ওয়ার্ডে যে ক্ষোভ ছিল সেই ক্ষোভে যেমন তৃণমূল বেশ কিছু ওয়ার্ড হারাতে পারে। আবার কিছু তৃণমূল কর্মী মনে করছেন, বেশ কিছু ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন পদে যাঁরা দায়িত্ব সামাল দিয়েছেন তাঁদের কয়েকজনকে যেমন প্রার্থী করেছে তেমনি কয়েকজনকে প্রার্থী করা হয়নি। এর ফলে দলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে। আবার যে সমস্ত ওয়ার্ডগুলি বিরোধীদের দখলে সেখানে তৃণমূল মরিয়া চেষ্টা চালাতে গিয়ে গণ্ডগোল পাকাতে পারে বলে বিরোধীদের আশঙ্কা। আবার বিজেপি তাদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভে জরাজীর্ণ। ইতিমধ্যে লোকসভা ভোটে ১৮টির মধ্যে যে ১৪টি ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়েছিল, সেখানে বেশ কিছু ওয়ার্ডে ‘গোষ্ঠীকোন্দল’ বিজেপি লোকসভা ভোটের জয়ের ধারা ধরে রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন অনেকে।

আর কংগ্রেস? রামপুরহাটে দীর্ঘদিন থেকে কখনও কংগ্রেসের সমর্থনে জয়ী নির্দল কাউন্সিলররা আবার কংগ্রেস ও তৃণমূল উভয় দলের সমর্থনে জয়ী নির্দল কাউন্সিলররা বোর্ড গঠনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে এসেছে। তবে কংগ্রেস দলের সেনাপতি তথা ছ’বারের কাউন্সিলর সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এ বারে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থেকেও নিজের রণকৌশলে কংগ্রেসের ঝাঁপিতে বেশ কিছু ওয়ার্ড দখলে আনতে সচেষ্ট হবেন বলে আশাবাদী জিম্মি। কিন্তু রামপুরহাটে কংগ্রেস কর্মীরা প্রচারে এ বার অধীর চৌধুরীকে পাননি। সবটাই একক ভাবে জেলা সভাপতি হিসাবে সৈয়দ সিরাজ জিম্মির রণনীতির উপর নির্ভরশীল দলীয় কর্মীরা। বামফ্রন্ট অবশ্য তাদের গত বারের তিনটে আসন ধরে রাখতে পারলেই খুশি থাকবে।

সব মিলিয়ে প্রচারের শেষ দিন বেলা তিনটে পর্যন্ত দুই শহরের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্তে মাইকের শব্ধ যুদ্ধ কানকে ঝালাপালা করে তুলেছিল, তিনটের পর সেই শব্ধ যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর পুরবাসী অন্তত দু’দিনের জন্য কিছুটাও হলেও স্বস্তিতে বলে দাবি, অধিকাংশ ভোটারের।

Rampurhat Bolpur municipal election BJP Congress Election Trinamool
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy