Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

খেজুর রসের ব্যবসা আর নয়

পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে আগুন লাগার কারণ বের করুক, চাইছেন সে দিন বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া গৃহকর্তা কালীপদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাতে ঝুপড়িতে আগুন লেগে কালীপদবাবুর স্ত্রী খুশবু, দুই সন্তান রাহুল ও রাধিকা, শ্যালক সুনীল, শ্যালিকা গীতা ও প্রিয়াঙ্কা এবং গীতার মেয়ে গঙ্গার মৃত্যু হয়।

আতঙ্ক: ছেলে শিবচরণের সঙ্গে কালীপদ চৌধুরী। ছবি: সঙ্গীত নাগ

আতঙ্ক: ছেলে শিবচরণের সঙ্গে কালীপদ চৌধুরী। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়া শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

মহাদেবপুর গ্রামের প্রান্তে ঝুপড়িতে আগুন লাগার ঘটনার কারণ জানতে ফরেন্সিক তদন্ত করতে চাইছে জেলা পুলিশ। কিন্তু আগুন লাগার চার দিন পরেও তদন্তে এল না ফরেন্সিক দল। ফলে, কী ভাবে আগুন লেগেছে সেই বিষয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। রবিবার রাতে জেলার প্রায় সর্বত্রই বৃষ্টি হয়েছে। তাতে ঘটনাস্থলে থাকা প্রমাণের কিছুটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে পুলিশেরই একাংশ। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, দমকল আগুন নেভানোর পরেই ঘটনাস্থলটি প্লাস্টিকের চাদর ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ফলে বৃষ্টিতে প্রমাণ নষ্টের সম্ভবনা কার্যত নেই।

পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে আগুন লাগার কারণ বের করুক, চাইছেন সে দিন বরাত জোরে বেঁচে যাওয়া গৃহকর্তা কালীপদ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার রাতে ঝুপড়িতে আগুন লেগে কালীপদবাবুর স্ত্রী খুশবু, দুই সন্তান রাহুল ও রাধিকা, শ্যালক সুনীল, শ্যালিকা গীতা ও প্রিয়াঙ্কা এবং গীতার মেয়ে গঙ্গার মৃত্যু হয়। ঝুপড়ির বাইরে ছেলে শিবচরণ ও শ্যালিকার দুই ছেলেকে নিয়ে শুয়েছিলেন কালীপদ। ভিতরে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে দগ্ধ হন তিনি। তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। রবিবার ছাড়া পেয়ে কাশীপুরের ধতলা গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন কালীপদবাবু।

এ দিন বাড়ির খাটিয়ায় শুয়ে শোনাচ্ছিলেন সেই রাতের ঘটনার কথা। জানান,শ্যালক-শ্যালিকারা আসায় খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিলেন। শুতে একটু রাতই হয়েছিল। ছোট্ট ঝুপড়ি। ভিতরে বাচ্চাদের নিয়ে মহিলারা শুয়েছিলেন। অন্যরা বাইরের দাওয়ায়। তাঁর কথায়, ‘‘রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আগুনের প্রচণ্ড তাপে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখি দাউদাউ করে জ্বলছে ঝুপড়িটা। প্রথমে কী করব বুঝে উঠতে পারিনি। হুঁশ হতেই তিনটে বাচ্চাকে ঝুপড়ি থেকে দূরে রেখে আসি।’’ তাঁর দাবি, ঝুপড়ির ভিতরে ঢুকতে গিয়ে গায়ে আগুন লেগে যায়। তাঁর আগে ভিতরে ঢুকে পড়েছিলেন শ্যালক সুনীল। তিনি আর বেরোতে পারেননি।

রাত ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল পুলিশ। কালীপদ জানান, দাউদাউ করে জ্বলা ঝুপড়িতে বালতি দিয়ে আগুন নেভানোর কাজে পুলিশের সঙ্গে হাত লাগিয়েছিলেন তিনিও। কিন্তু বালতিতে জল নিয়ে সেই আগুনের সঙ্গে এঁটে ওঠা যাচ্ছিল না। দমকল আসার পরেই আগুন নেভে। তত ক্ষণে অবশ্য কালীপদ ও তিনটি বাচ্চাকে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। কালীপদ বলেন, ‘‘থানাতেই শুনেছিলাম ঝুপড়ির ভিতরে সাত জনই মারা গিয়েছে।”

কী ভাবে আগুন লাগল, সেই বিষয়ে পুলিশের মতোই অন্ধকারে কালীপদ। তাঁর দাবি, রাতে সচরাচর লম্ফ নিভিয়েই শুতেন। সেই রাতে লম্ফ জ্বলছিল কি না সেই বিষয়ে অবশ্য নিশ্চিত নন তিনি। বলেন, ‘‘হয়তো ওরা কেউ লম্ফ জ্বালিয়ে থাকতে পারে। সেখান থেকেই হয়তো আগুন লেগেছে। ভিতরে তিন লিটার মতো কেরোসিন ছিল। সেটা থেকেই মনে হয় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে।”

স্ত্রী ও সন্তানদের হারিয়ে আর খেজুর রসের ব্যবসা করতে চান না কালীপদ। তাঁর মা সোমাদেবীও বলছেন একই কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Fire Slum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE