সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জমে গিয়েছে জল। —ফাইল চিত্র।
শ্রাবণের শেষ। বৃষ্টিও হচ্ছে। তবে চাষের জন্য তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়।
বৃষ্টির অভাবে গত বছর খরিফ মরসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি বাঁকুড়া জেলা। এ বার এখনও পর্যন্ত চাষের জমির পরিমাণ গতবারের থেকেও কম। তাতে উদ্বেগে কৃষি মহল। এর জেরে আগামী দিনে চালের দাম বৃদ্ধি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
সাধারণত অগস্টের শেষ পর্যন্ত ধানচারা রোপণ করা যায়। কিন্তু এ বার অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সে অর্থে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধানের ফলন নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না। বাঁকুড়ার জেলা উপকৃষি অধিকর্তা নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা কার্যত নেই। তবে চারা বসানোর জন্য হাতে এখনও দু’টি সপ্তাহ রয়েছে। ভাল বৃষ্টি হলে বা কংসাবতী জলাধার থেকে জল ছাড়া হলে কিছুটা হলেও চাষ বাড়তে পারে।’’
এ দিকে বৃষ্টির ঘাটতিতে কংসাবতী জলাধারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল নেই। সেচ দফতর সূত্রে খবর, সাধারণত অগস্টের মাঝামাঝি জলাধারে জলস্তর থাকে প্রায় ৪৩০ ফুট। অথচ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত জলাধারে জলস্তর ছিল ৪১৩.৭০ ফুট। কংসাবতী সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার চিত্তরঞ্জন রায় বলেন, ‘‘জল কম থাকায় এখনও পর্যন্ত সেচের জন্য জল ছাড়ার পরিকল্পনা নেই। প্রশাসনিক বৈঠকও হয়নি।’’
স্বভাবতই সঙ্কটে চাষিরা। সিমলাপালের পার্শ্বলা গ্রামের চাষি অজিত মাহাতো বলেন, “বৃষ্টির জলে ধান রোয়ার কাজ করা গিয়েছে। কিন্তু ধান গাছে অবিলম্বে সেচের জল দেওয়ার প্রয়োজন। কংসাবতী সেচ দফতর খালে দ্রুত জল না ছাড়লে যেটুকু চাষ করেছি, তা-ও নষ্ট হয়ে যাবে।’’
ঘটনা হল, এ বার অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের কাছাকাছি হলেও গত জুন ও জুলাই মাসে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতিই এ বার জেলায় ধান চাষ পিছিয়ে দিয়েছে।
চাষের জন্য বৃষ্টি-নির্ভর বাঁকুড়া ২ ব্লকের চাষি কানাইলাল মাজি জানান, তাঁর পাঁচ বিঘা জমি থাকলে বৃষ্টির অভাবে অর্ধেকের বেশি জমিতে চাষই করতে পারেননি। তিনি বলেন, “এ বার অর্ধেক চাষ না হওয়ায় রোজগারও কমবে। মাঝে বৃষ্টি না হলে যেটুকু চাষ করেছি, তা-ও নষ্টও হতে পারে। গত বছর বৃষ্টি না হওয়ায় ধান লাগিইয়েও ফলন পাইনি। লোকসানের মুখে পড়েছিলাম।”
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়ের আশ্বাস, “চাষের বর্তমান পরিস্থিতি কী, সেচের জল ছাড়ার মতো অবস্থা রয়েছে কি না, এ নিয়ে দ্রুত
আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে।” (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy