Advertisement
E-Paper

ফ্ল্যাটের ভিতেই নদীর কোপ, ভয়ে বাসিন্দারা

রাতের সতীঘাটে চোখ টানত আলো ঝলমলে আবাসনটি। অনেকেই লক্ষাধিক টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন গন্ধেশ্বরী নদী লাগোয়া এই এলাকায় থাকবেন বলে। কিন্তু, বছর ভর যে নদী নামেই নদী, চেহারা নালার মতো, নিম্নচাপের এক বৃষ্টিতেই সেই নদীর রোষে পড়েছে লাগোয়া আবাসনটির একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৩
বছরভর নিরীহ। কিন্তু বান এলে গন্ধেশ্বরীর অন্য রূপ।

বছরভর নিরীহ। কিন্তু বান এলে গন্ধেশ্বরীর অন্য রূপ।

রাতের সতীঘাটে চোখ টানত আলো ঝলমলে আবাসনটি। অনেকেই লক্ষাধিক টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন গন্ধেশ্বরী নদী লাগোয়া এই এলাকায় থাকবেন বলে। কিন্তু, বছর ভর যে নদী নামেই নদী, চেহারা নালার মতো, নিম্নচাপের এক বৃষ্টিতেই সেই নদীর রোষে পড়েছে লাগোয়া আবাসনটির একাংশ। নদীর জলের তোড়ে বেশ ভাল রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিল্ডিংয়ের একাংশ। এই অবস্থায় ইতিমধ্যেই যাঁরা আবাসনে ফ্ল্যাট কিনে থাকতে শুরু করেছেন, তাঁদের বড় অংশই প্রমাদ গুনছেন। আবাসনটি আদৌ বৈধ কিনা, তা নিয়েও খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

বাঁকুড়া জেলা জুড়ে রবিবার রাতভর প্রবল বৃষ্টির পরে সোমবার গন্ধেশ্বরীর জলের তোড় আছড়ে পড়ে কেশিয়াকোল এলাকার ওই আবাসনটিতে। আবাসনের সীমানা প্রাচীর তলিয়ে যায় নদীতে। সেই সঙ্গে আবাসনের একাধিক ব্লকের এক দম নীচের তলার সিমেন্ট, বালি খসে লোহার বিম বেরিয়ে পড়ে। গোটা আবাসন চত্বরেই ঢুকে পড়ে গন্ধেশ্বরীর জল। এই ঘটনায় ভীত হয়ে পড়ে ফ্ল্যাট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নেন বাসিন্দারা। খবর পেয়ে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা ওই আবাসনে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আসেন।

মঙ্গলবার বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “ওই আবাসনটি আদৌ বৈধ কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে গন্ধেশ্বরীর বানের তোড়ে আবাসনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিষয়ে মহকুমাশাসককে যা করার করতে বলেছি।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাঁকুড়া মহকুমাশাসক অসীম কুমার বালার তরফে ইতিমধ্যেই নোটিস দিয়ে আবাসনের বাসিন্দাদের আবাসন ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিডিও (বাঁকুড়া ২)-কে ওই আবাসনের দরজায় ‘বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে নোটিস সাঁটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসকের নির্দেশ যাতে সব পক্ষই মেনে চলে, তা দেখতে বলে হয়েছে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশকে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, নদীর এত কাছে কোনও নির্মাণকাজ করাই নিয়মবিরুদ্ধ।

চেঁছেপুছে নিয়ে গিয়েছে ফ্ল্যাটবাড়ির ভিতের মাটি, ইটও (ইনসেটে)।—নিজস্ব চিত্র

কেশিয়াকোলের ক্ষতিগ্রস্ত আবাসনটি নদীর গা ঘেঁষেই উঠেছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, নদীর এত কাছে ওই আবাসন গড়ার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল কী ভাবে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই আবাসনটি বাঁকুড়া পুরসভার বাঁকুড়া মৌজা এবং বিকনা পঞ্চায়েতের মিথিলা মৌজার মধ্যে রয়েছে। বছর পাঁচেক আগে বিকনা পঞ্চায়েতের কাছ থেকে নদী সংলগ্ন কেশিয়াকোলের দু’বিঘার কিছু বেশি জমিতে ওই আবাসন করার অনুমোদন নেয় নির্মাণকারী সংস্থা। আবাসন গড়ে তোলার পরে একটি বিল্ডিং বা টাওয়ার বাঁকুড়া মৌজায় পড়ে। এর পর নির্মাণকারী সংস্থা ওই একটি বিল্ডিংয়ের ছাড়পত্র নেয় বাঁকুড়া পুরসভার কাছে।

এ বারের দুর্ঘটনার পরে আবাসন তৈরির ছাড়পত্র কারা দিল, তা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে বিকনা পঞ্চায়েত ও বাঁকুড়া পুরসভার মধ্যে। পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান শান্তপদ মাল এই ঘটনার দায় চাপিয়েছেন পূর্বতন বাম পরিচালিত বোর্ডের উপরে। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে এই ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তাই ঠিক কী ভাবে ওই এলাকায় আবাসন হল, তা ফাইল না দেখে বলা সম্ভব নয়। সেই ফাইল খুঁজে দেখতে হবে।’’

অন্য দিকে, বাঁকুড়ার তৃণমূল পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমি ওই সময় পুরপ্রধান ছিলাম না। এটা অবশ্যই জানা দরকার, নিয়মের বাইরে বেরিয়ে কেন তখন ছাড়পত্র দেওয়া হল আবাসন গড়তে। আমি এ বিষয়ে তদন্ত করব।’’ যে সময়ে এই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তখনকার পুরপ্রধান তথা বর্তমানে বাঁকুড়ার কংগ্রেস বিধায়ক শম্পা দরিপা অবশ্য ছাড়পত্র দেওয়ার কথাই অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “আমরা ছাড়পত্র দিইনি। যেখানে পঞ্চায়েত গোটা প্রকল্পটির জন্য ছাড়পত্র দিয়েই দিয়েছিল, তখন আমাদের আর ছাড়পত্র দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে যেহেতু বাঁকুড়া মৌজায় ওই আবাসনের একটি বিল্ডিং গড়া হয়েছিল তাই কেবল ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ নিয়েছিলাম নির্মাণকারী সংস্থার কাছ থেকে।’’

চাপানউতোর যাই থাক, আবাসনটির বাসিন্দারা এখন সঙ্কটে। তাঁদেরই অন্যতম তথা আবাসন পরিচালন কমিটির সম্পাদক সমরেশ মুখোপাধ্যায় জানালেন, এই মুহূর্তে ওই আবাসনের ছ’টি ব্লকের ১০২টি ফ্ল্যাটে ৬৪টি পরিবার বসবাস করছে। সোমবারের ঘটনার পরে অনেকেই ফ্ল্যাট ছেড়ে নিজের বাড়ি চলে গিয়েছেন। যাঁদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাঁরা আতঙ্কে ঘরে থাকতে পারছেন না।

ফলে এখন খোলা আকাশের নীচে ওই আবাসন চত্বরেই বসবাস করছেন তাঁরা। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আবাসনটিকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দিক, এটাই চাইছেন বাসিন্দারা।

Flat River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy