Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হয়েও যাযাবর

ঘর থেকেও তাঁরা ঘরছাড়া। কবে ফের ঘরে ফিরবেন, অনিশ্চিত সেটাও। লক্ষাধিক টাকা খরচ গন্ধেশ্বরী নদীর পাড়ে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকায় গড়ে ওঠা আবাসন কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাঁরা। অথচ গন্ধেশ্বরীর জলের তোড়ে সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কার্যত যাযাবর হয়েছেন!

জেলা পরিষদই বালি দিয়ে বাঁকুড়ার গন্ধেশ্বরী নদী তীরের সেই আবাসন বাঁচানোর প্রাথমিক কাজ করছে।—নিজস্ব চিত্র

জেলা পরিষদই বালি দিয়ে বাঁকুড়ার গন্ধেশ্বরী নদী তীরের সেই আবাসন বাঁচানোর প্রাথমিক কাজ করছে।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৬
Share: Save:

ঘর থেকেও তাঁরা ঘরছাড়া। কবে ফের ঘরে ফিরবেন, অনিশ্চিত সেটাও।

লক্ষাধিক টাকা খরচ গন্ধেশ্বরী নদীর পাড়ে বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকায় গড়ে ওঠা আবাসন কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তাঁরা। অথচ গন্ধেশ্বরীর জলের তোড়ে সেই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা কার্যত যাযাবর হয়েছেন! বানের জলে বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় প্রশাসন কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের ঘর ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে মাথা গুঁজেছেন, কেউ চলে গিয়েছেন দেশের বাড়ি। কেউ কেউ আবার ঠাঁই নিয়েছেন হোটেলে। কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে জীবন সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন ওই সব ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।

সম্প্রতি নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে দু’কূল ছাপিয়ে বইতে থাকে বাঁকুড়ার ‘মরা নদী’ হিসেবে পরিচিত গন্ধেশ্বরী। আর তাতেই নদীর গা ঘেঁষে গড়ে ওঠা কেশিয়াকোল এলাকার ওই আবাসন কমপ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবাসনের সীমানা প্রাচীর ও রাস্তা বানের জলে ভেসে যায়। ক্ষতি হয় আবাসনের ‘এ-১’ বিল্ডিং-এর একেবারে নীচের তলা। এর পরই মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা ওই বহুতলের বাসিন্দাদের ফ্ল্যাট খালি করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বহুতলটির মেরামতি করতে বলেন। ওই ঘটনার পরে এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে। অথচ এখনও নির্মাণকারী সংস্থা বিল্ডিং মেরামতির কাজ শুরু করেনি বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে বন্যা এলে কী হবে, সেই আশঙ্কা নিয়ে আবাসনের বাসিন্দারা বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দ্বারস্থ হয়েছিলেন। অরূপবাবুর উদ্যোগে জেলা পরিষদের তরফে আপাতত ওই আবাসনের ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিংটি শালবল্লা ও বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে বান আটকানোর অস্থায়ী ব্যবস্থা করে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আবাসিকেরা চাইছেন দ্রুত নিজেদের ফ্ল্যাটে ফিরতে।

ক্ষতিগ্রস্ত ‘এ-১’ বহুতলটির বাসিন্দা তাপস মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের বিল্ডিংয়ে মোট ১৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সেগুলির মধ্যে ১২টিতে থাকা শুরু হয়েছিল। সপ্তাহ দুয়েক আগে জলের তোড়ে বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেই প্রশাসনের নির্দেশে তাঁরা সবাই ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কেউ থাকছেন হোটেলে। কেউ ফিরে গিয়েছেন দেশের বাড়ি। কয়েক জন বাঁকুড়া শহরেই আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

তাপসবাবু নিজে ওই বিল্ডিং-এ একটি দু’কামরার ফ্ল্যাটে পরিবারের ছ’জনকে নিয়ে থাকতেন। ওই আবাসনের অন্য একটি বহুতলেও একটি এক কামরার ফ্ল্যাট কেনা ছিল তাঁর। আপাতত সেই ঘরেই পরিবার নিয়ে গিয়ে উঠেছেন তিনি।

তাঁর কথায়, “একটা রুমের মধ্যে ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী সহ ছ’জনকে নিয়ে কী ভাবে রয়েছি, তা বলে বোঝাতে পারব না। কত দিন এই দুর্ভোগ চলবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ তাঁর আক্ষেপ, “লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে স্বপ্নের বাড়ি কিনেছিলাম। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে পড়ব কখনও ভাবিনি।’’

এই আবাসন পরিচালন কমিটির সম্পাদক সমরেশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা জেলা সভাধিপতির দ্বারস্থ হওয়ার পরে তিনি অস্থায়ী ভাবে বন্যা আটকানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তবে প্রশাসন দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশ দিলেও আবাসন নির্মাণকারী সংস্থা কোনও পদক্ষেপ না করায় বাসিন্দারা ফ্ল্যাটে ঢুকতে পারছেন না।’’ জেলা প্রশাসন সব দিক খতিয়ে দেখে যাতে আবাসিকদের দ্রুত ফ্ল্যাটে ফেরানোর ব্যবস্থা করে সেই দাবি তুলেছেন তাঁরা। মহকুমাশাসক অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং মেরামতি না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসন কোনও ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে বাসিন্দাদের ঘরে ফেরার অনুমতি দেবে না। অরূপবাবু বলেন, “আমি আবাসিকদের বলেছিলাম, সকলে মিলে চাঁদা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং মেরামতির ব্যবস্থা করতে পারেন। না হলে নির্মাণকারী সংস্থা যদি এগিয়ে না আসে, সে ক্ষেত্রে আইনের সাহায্যও পেতে পারেন আবাসিকেরা।’’

কিন্তু কেন ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং মেরামতির কাজ শুরু করা যাচ্ছে না? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আবাসন নির্মাণকারী সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সব দিক খতিয়ে দেখছেন। আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গেও নিয়মিত আলোচনা চলছে। আবাসনের যা ক্ষতি হয়েছে, সে সবই মেরামতি করে দেওয়া হবে। তবে কিছু জটিলতার কারণে এখনও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’’ জটিলতা কোথায়, তা অবশ্য খোলসা করেননি ওই আধিকারিক।

ফলে ঘরছাড়ারা ঘরে ফিরবেন কখন, কাটছে না সংশয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flats’ resident River Landslide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE