Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪

ঘরে ফিরতে দ্রুত টাকা চান শম্ভুরা

ফিরে এসেছে সিঁদুরে মেঘের সেই স্মৃতি। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পেতে আবারও শীত এসে যাবে না তো! লাভপুরের মাঠপাড়ায় খড়ের চালের মাটির বাড়ি মহেন্দ্রদের।

আলগা: রয়েছে কাঠামোটুকু। ধসেছে মাটি। লাভপুরের মাঠপাড়ায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

আলগা: রয়েছে কাঠামোটুকু। ধসেছে মাটি। লাভপুরের মাঠপাড়ায়। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৭ ১১:৫০
Share: Save:

বছর দু’য়েক আগেও বন্যা পরিস্থিতির জেরে ঘর ভেঙেছিল মহেন্দ্র বাগদিদের। সে বার বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণ হাতে পেতে পেতে কেটে গিয়েছিল শীতকাল! ভরা মাঘে বাচ্চাদের নিয়ে ছেঁড়া চট, তালাইয়ের খুপরি ঘরে দিন কাটাতে হয়েছে তাঁদের। এ বারও ঘর ভেঙেছে মহেন্দ্রদের। ফিরে এসেছে সিঁদুরে মেঘের সেই স্মৃতি। ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পেতে আবারও শীত এসে যাবে না তো!

লাভপুরের মাঠপাড়ায় খড়ের চালের মাটির বাড়ি মহেন্দ্রদের। ওই পাড়াতেই ৩০টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই দিনমজুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এ বারে কুঁয়ে নদীর জলের তোড়ে ১৫টি বাড়ি আংশিক কিংবা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মহেন্দ্র বাগদির বাড়ির কাঠামো দাঁড়িয়ে থাকলে মাটির দেওয়াল গলে গিয়েছে। একই অবস্থা সেভেন থান্দারের বাড়ির। দাদা বুজু বাজিকরের বাড়ির উপর হেলান দিয়ে পড়ে রয়েছে চন্দন বাজিকরের বাড়ি। পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে মঙ্গল বাজিকরের বাড়ি। ভেঙে পড়া ওই সব বাড়িকেই সাময়িক বাসযোগ্য করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বন্যা দুর্গতরা। কেউ কেউ স্যাঁতস্যাঁত মেঝের উপরে চৌকি পেতে বসবাসও শুরু করে দিয়েছেন।

সেই রকমই একটি আধভাঙা বাড়িতে নিজে চৌকির উপরে বসে কাঁথা-স্টিচের কাজ করছিলেন সন্ধ্যা থান্দার। একই রকম বাড়িতে তক্তার উপরে শুকনো বিছানা জামা-কাপড় গুছিয়ে রাখছিলেন পিঙ্কি বাজিকর। তাঁরা বলেন, ‘‘ত্রাণ শিবিরে তো সবার জায়গা হয় না। হলেও বেশি দিন সেখানে থাকা যায় না। আমাদের প্রায় সবারই গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি রয়েছে। ত্রাণ শিবিরে থেকে তো জীবজন্তু পালন করা সম্ভব নয়। তাই হাজার কষ্ট হলেও আমাদের নিজের ভিটেয় ফিরতে হয়। শুকনো জিনিসপত্র আর বাচ্চাদের তক্তার উপর রেখে আমাদের স্যাঁতসেঁতে মাটির উপরে তালাই পেতে রাত কাটাতে হয়।’’

মহেন্দ্র বাগদি, শম্ভু কর্মকাররা জানান, স্যাঁতসেঁতে মেঝের উপর তবু দিন কাটানো যায়। কিন্তু, শীত? মহেন্দ্রর কথায়, ‘‘ওই শীত বড়ো কাবু করে ফেলে। ছেঁড়া চট, ত্রিপলের ফাঁক দিয়ে নদীর হিমেল হাওয়া হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয়।’’ প্রসেনজিৎ বাজিকর, বুদ্ধদেব থান্দাররা জানান, বছর দু’য়েক আগেও অনেকের বাড়ি ভেঙেছিল। ক্ষতিপূরণ মিলেছিল শীতের পর। সে বার ভয়ানক কষ্টে কেটেছিল দিন।

গ্রামের বাসিন্দা, কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের সদস্য জগন্নাথ বাগদি জানান, বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে ১০/১২ বাড়ি আংশিক কিংবা পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পঞ্চায়েতকে তা জানানোও হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল এবং পরিবারপিছু ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা ঠিবাগ্রামের জলপাড়া, গোমস্তাপাড়া এবং সাহাপাড়ার। মেঘনাথ বাগদি, রাখাল বাগদিরা বলেন, ‘‘জলের তোড়ে প্রায় প্রতিবারই ঘর ভাঙে। ক্ষতিপূরণ পেতে কয়েক মাস গরিয়ে যায়। তাতে দুর্ভোগ বাড়ে।’’ ওই গ্রামের বাসিন্দা, ঠিবা পঞ্চায়েতের সদস্য সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘তিনটি পাড়ায় বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে দশটি বাড়ির ক্ষতি হয়েছে।’’

এই পরিস্থিতিতে সময়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করেছে। লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘এখনও বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েনি। এলেই খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Labhpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE