Advertisement
E-Paper

নজরে চার

দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, শহরের ১৯টি আসনই দখল করবে তৃণমূল। ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণমূলের নেতাদের অবশ্য মত, খুব ভাল ফল হলে দলের খাতায় আসবে ১২টি ওয়ার্ড। ভোটের পরে বিরোধীরা যদিও দাবি করছেন, ৯-১০টির মধ্যেই আসন ঘোরাফেরা করবে শাসকদলের। আর সে ক্ষেত্রেই জমে উঠতে পারে জেলা সদরের ভোট-পরবর্তী রাজনীতি।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৮

সিউড়ি

দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, শহরের ১৯টি আসনই দখল করবে তৃণমূল। ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণমূলের নেতাদের অবশ্য মত, খুব ভাল ফল হলে দলের খাতায় আসবে ১২টি ওয়ার্ড। ভোটের পরে বিরোধীরা যদিও দাবি করছেন, ৯-১০টির মধ্যেই আসন ঘোরাফেরা করবে শাসকদলের। আর সে ক্ষেত্রেই জমে উঠতে পারে জেলা সদরের ভোট-পরবর্তী রাজনীতি। সে রকম সম্ভাবনা তৈরি হলে বিরোধীরা একজোট হলেই কপালে ভাঁজ পড়তে পারে তৃণমূল নেতৃত্বের। এমনটাই বিশ্লেষণ বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের। তাই সিউড়ি পুরভোটের লড়াইটাকে মোটেই সহজ ভাবে নেয়নি তৃণমূল। সর্ব শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে।

যে অনুব্রতকে বিধানসভা ভোটেও এতা খাটতে দেখা যায়নি, তিনিই এ বার শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে সভা করেছেন। বিজেপি-র হয়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে লড়া দীপক দাসের বিরুদ্ধে দলের প্রার্থী অঞ্জন কর থেকে বিদায়ী পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বা উপপুর প্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়— প্রতিটি ওয়ার্ড চষে ফেলেছে তৃণমূল। কিন্তু, তার পরেও তৃণমূলের পিছু ছাড়ছে না পুরপরিষেবা এবং জলপ্রকল্প নিয়ে পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে বাসিন্দাদের ক্ষোভ। সে সব সামলে এ বার জেলায় সব থেকে কঠিন লড়াইয়ে শাসকদল। বিরোধীদের দাবি, শহরের ১৫, ১২, ১৭, ৫, ৬, ২, ৩, ৮ ও ১৬ নম্বরে তৃণমূলকে তারা যথেষ্ট শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য ভোটের দিন শহর লাগায়ো বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা দলের মনোবল বাড়াতে হাজির ছিলেন। ভোটের দিন বিভিন্ন কাজের জন্য শাসকদলের তরফে প্রায় ১০০ টোটোও ভাড়া করা হয়েছিল। সংখ্যায় কম হলেও টোটোয় সওয়ার হয়েছিল বিরোধীরাও।

বোলপুর

গত ভোটে শহরে ১৯টি র মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ৯টি ওয়ার্ড। কংগ্রেস ৮টি এবং সিপিএম দু’টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়। বর্তমানে ওয়ার্ড সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে আবার বোলপুরে ৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। বিরোধীদের দাবি, এ বারের ভোটে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডেই সব থেকে কঠিন লড়াইয়ে শাসক দল। ওই ওয়ার্ড বরাবর কংগ্রেসের দখলে। তৃণমূল চাপে রয়েছে ১৩, ১৯ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েও। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের লড়াই খানিকটা সম্মান রক্ষারও। কারণ, ওই ওয়ার্ডেই দলেরই এক প্রাক্তন নেতা সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন।

অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় এই ওয়ার্ডেই প্রায় সব রকম ভাবে প্রচারে লজর দিয়েছে জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই রোড-শো করতে এসে একমাত্র এই ওয়ার্ডেই পথে নেমে পড়েছিলেন খোদ পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে বোলপুর পুরসভার ২, ৯, ১০, ১৩, ১৮, ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি শাসকদল তৃণমূল থেকে এগিয়ে থাকলেও এ বার আর সেই হওয়া নেই। রাজনৈতিক কারবারিদের মত, শুধু মাত্র ১৩ নম্বর ওয়ার্ডই বিজেপি-র দখলে যেতে পারে। সব মিলিয়ে নেতৃত্বের দাবি, শহরের ২০টির মধ্যে ১৭টি ওয়ার্ডই দখল করবে তৃণমূল। বিরোধীরা শাসকদলের এই একাধিপত্য কতটা রুখতে পারেন, তা সময়ই বলবে।

সাঁইথিয়া

বরাবর কংগ্রেসের দখলে থাকা এই পুরসভার ফল এ বার কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে কৌতূহলী জেলার রাজনৈতিক মহলে। শেষ পুরভোটেও দাপট বজায় রেখেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বছরখানেক আগে দল বদলের জেরে পুরবোর্ড হাতছা়়ড়া হয় কংগ্রেসের। লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ বার ভোটে জিতে নীহার দত্তের সাঁইথিয়া দখলে মরিয়া তৃণমূল। সে যতই তারা লোকসভা ভোটের ফলে বিজেপি-র থেকে মাত খেয়ে থাকুক। বিরোধীদের যদিও দাবি, পুরবোর্ড দখল করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে শাসকদলকে। শহরের ১৬টির মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে যেমন সরাসরি দ্বিমুখী ও ত্রিমুখী লড়াই হবে। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেযণ, ২, ৩, ৪, ৮, ৯ ও ১২ নম্বরে বিজেপি, ১১ নম্বরে সিপিএম এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সরাসরি লড়াই হবে। অন্য দিকে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার হাড্ডাহড্ডি লড়াই হবে তৃণমূল, বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে।

একই সম্ভাবনা ১০ নম্বর নিয়েও। এই ১০ নম্বর ওয়ার্ডটিতেই শহরের তিন হেভিওয়েট নেতা প্রার্থী হয়েছেন। শহর তৃণমূল চেয়ারম্যান মানস সিংহ, ওই ওয়ার্ডে কংগ্রেসের দু’বারের কাউন্সিলর হিল্লোল ঘোষ এবং বিজেপি-র শহর সভাপতি কাশিনাথ মণ্ডল। ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পরপর তিন বার জিতলেও এ বার ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হওয়ায় কাশীনাথবাবু ১০ নম্বরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিরোধীরা না মানলেও বাকি সব ক’টি ওয়ার্ডে তৃণমূলকেই এগিয়ে রাখছেন বিশ্লেষকেরা।

রামপুরহাট

শেষ দশ বছরে চার বার নির্বাচিত বোর্ডকে ভেঙে যেতে দেখেছে এই শহর। ফলে তার জেরে শহরের উন্নয়ন ধাক্কা খেয়েছে অনেকটাই। এ বার একক বোর্ড গড়তে তাই ১৮টি ওয়ার্ডই ছিনিয়ে নিতে বদ্ধ পরিকর শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু, তাতে কি! রামপুরহাটে প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের ভিতরে প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে যেন ‘ছায়া-তৃণমূল’ তৈরি হয়ে গিয়েছে। ‘ছায়া-তৃণমূলী’রাই রামপুরহাটে তৃণমূলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে প্রধান বাধা বলে মনে করছেন খোদ দলীয় নেতৃত্বই।

তার উপর শহরের ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৭, ১১, ১২ ও ১৫— এই ওয়ার্ডগুলি দীর্ঘ দিন থেকে বিরোধীদের দখলে। তৃণমূলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে গেলে এই সব ওয়ার্ডে ভাল ফল করতেই হবে। আর সে কাজ যে খুব কঠিন হবে, তা দাবি করছে বিরোধী দলগুলি। এর উপরে রয়েছে প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলের অন্দরেই অসন্তোষ। সেই অসন্তোষ দূর করে দখলে থাকা ৬, ১০ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ফের ছিনিয়ে নিতে পারলে বোর্ড দখলের ব্যাপারে এ বার অনেকটাই এগিয়ে যাবে শাসকদল তৃণমূল।

তথ্য: দয়াল সেনগুপ্ত, মহেন্দ্র জেনা, ভাস্করজ্যোতি মজুমদার ও অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়।

ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, সব্যসাচী ইসলাম, দয়াল সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী ও অনির্বাণ সেন।

Municipal election Anubrata Mondal mamata bandopadhyay trinamool tmc cpm congress bjp siuri bolpur sainthia rampurhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy