Advertisement
০২ জুন ২০২৪

স্কুলে ফিরল চার কিশোরী

ওরা আবার রোজ বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে স্কুলের পথ ধরবে। কারও পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি নেই, মাঝপথেই মেয়ের পড়াশোনা ছাড়িয়ে দিয়েছিল। কারও বাবার মৃত্যুর পরে ঠাঁই হয়েছিল আত্মীয়ের বাড়িতে। পড়াশোনা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:১৪
Share: Save:

ওরা আবার রোজ বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করে স্কুলের পথ ধরবে।

কারও পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি নেই, মাঝপথেই মেয়ের পড়াশোনা ছাড়িয়ে দিয়েছিল। কারও বাবার মৃত্যুর পরে ঠাঁই হয়েছিল আত্মীয়ের বাড়িতে। পড়াশোনা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ রকমের কিশোরীদের খুঁজে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করল রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা পঞ্চায়েত। সোমবার স্থানীয় গোসাইডাঙা গ্রামের চার জন কিশোরীকে সবলা কন্যাশ্রী প্রকল্পে বড়বাগান জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন রঘুনাথপুর মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায় ও ব্লকের সিডিপিও আনন্দময়ী ভট্টাচার্য। দেবময়বাবু বলেন, ‘‘সবলা-কন্যাশ্রী প্রকল্পে স্কুলছুট কিশোরীদের স্কুলে ভর্তি করানো একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। আমরা মহকুমার সব পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প শুরু করেছি।’’ মহকুমার মধ্যে আড়রা পঞ্চায়েতই প্রথম স্কুলছুট কিশোরীদের ভর্তি করাতে সক্ষম হল বলে জানান মহকুমাশাসক।

স্কুলছুট কিশোরীদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে তাদের সবলা ও কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আনতে একটি প্রকল্প শুরু করেছে রাজ্য। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সবলা-কন্যাশ্রী’ প্রকল্প। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রর কর্মী ও আশা কর্মীদের মাধ্যমে স্কুলছুট কিশোরীদের সন্ধান করে তাদের স্কুলে ভর্তি করানো হবে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে। মাস দুয়েক আগে আড়রা পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল। পঞ্চায়েত প্রধান মধুসূদন দাস বলেন, ‘‘প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই সবলা প্রকল্প চলে। স্থানীয় কিশোরীরা এই প্রকল্পে পুষ্টিকর খাবার পায়। ফলে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এলাকার কোন কিশোরী মাঝপথে স্কুল ছেড়ে দিয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই সেই খোঁজ পাওয়া যায়। আশা কর্মীরা যেহেতু স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি যান, তাঁদের পক্ষেও এই খবর আনা সম্ভব। শুরুর পরেই তাঁদের সেই নির্দেশ দেওয়া হয়।’’

পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, সম্প্রতি জানা যায়, গোসাইডাঙা গ্রামের চার কিশোরী মাঝপথেই স্কুল ছেড়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান ওই চার জনের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের বুঝিয়ে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। দুই কিশোরী সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিল। তাদের অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্য দু’জন ভর্তি হয়েছে পঞ্চম শ্রেণিতে।

প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘স্কুল ছাড়ানোর পরে শ্রমিকের কাজে লাগিয়ে দেওয়া বা নাবালিকা অবস্থাতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সেই ব্যাপারটাই বন্ধ করা আমাদের লক্ষ্য।’’ স্কুলে ভর্তি হতে পেরে উচ্ছ্বসিত চার কিশোরী। তারা বলে, ‘‘খরচের জন্য পড়তে পারিনি। কিন্তু আমরা পড়তে চেয়েছিলাম। বান্ধবীদের স্কুলে যেতে দেখে মন খারাপ হয়ে যেত। এ বার থেকে ওদের সঙ্গে আমরাও স্কুলে যাব।’’ মধুসূদনবাবু জানান, পরবর্তী কালেও পঞ্চায়েত যথাসম্ভব ওই কিশোরীদের পাশে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE