Advertisement
E-Paper

দফতর ঘুরেও চেকের টাকা পাননি স্ত্রী

হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল স্বামীর। ক্ষতিপূরণ বাবদ বন দফতরের দেওয়া ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চেকও হাতে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বিধবা মহিলার এই ‘ক্ষতিপূরণে’র অঙ্ক চেকেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে। মাস দু’য়েক পরেও হাতে টাকা পাননি দুবরাজপুরের পছিয়াড়া গ্রামের গুলেনুর বিবি!কিন্তু, মাস দু’য়েক আগে সরকারের দেওয়া চেক ব্যাঙ্কে জমা করার পরেও কেন টাকা পেলেন না ওই মহিলা? গাফিলতি বা দোষ—বন দফতর নাকি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না সহায় সম্বলহীন গুলেনুর।

দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০০:০১
কবে মিলবে ক্ষতিপূরণ? উত্তরের অপেক্ষায় গুলেনুর। —নিজস্ব চিত্র।

কবে মিলবে ক্ষতিপূরণ? উত্তরের অপেক্ষায় গুলেনুর। —নিজস্ব চিত্র।

হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছিল স্বামীর। ক্ষতিপূরণ বাবদ বন দফতরের দেওয়া ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চেকও হাতে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, বিধবা মহিলার এই ‘ক্ষতিপূরণে’র অঙ্ক চেকেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে। মাস দু’য়েক পরেও হাতে টাকা পাননি দুবরাজপুরের পছিয়াড়া গ্রামের গুলেনুর বিবি!

কিন্তু, মাস দু’য়েক আগে সরকারের দেওয়া চেক ব্যাঙ্কে জমা করার পরেও কেন টাকা পেলেন না ওই মহিলা? গাফিলতি বা দোষ—বন দফতর নাকি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের, কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না সহায় সম্বলহীন গুলেনুর।

প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর একটি দলছুট দাঁতাল অজয় পেরিয়ে ঢুকে পড়েছিল বীরভূমে। দিনভর দুবরাজপুর থানা এলাকার হেতমপুর লাগোয়া এলাকায় ধান জমি, লোকালয় ও বন দফতরের জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল। বিকেলে পানাগড়-দুবরাজপুর ১৪ নম্বর রাজ্য সড়ক পেরিয়ে হাতিটি ধানমাঠে নেমেই সামনে পেয়ে যায় যশপুর পঞ্চায়েত এলাকার পছিয়াড়া গ্রামের জাকির হোসেনকে। হাতির আক্রমণে মারাত্মক ভাবে জখম হন সেই সময় মাঠে ঘাস কাটতে আসা জাকির। জখম ওই ব্যক্তিকে প্রথমে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতালে, সেখান থেকে সিউড়ি এবং ওই দিনই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। দিন চারেক পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্ধমানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

নিয়ম মাফিক বন দফতর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নগদ ২৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিল মৃতের স্ত্রী গুলেনুরের হাতে। গত ৩০ মার্চ বীরভূমের ডিভিশনাল ফরেস্ট রেঞ্জারের কার্যালয় থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লক্ষ ২৫ হাজারের চেক পান গুলেনুর বিবি। চেক ভাঙানোর শেষ দিন ছিল ১০ এপ্রিল। সেই মতো পরের দিনই গ্রামের কাছে থাকা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় চেক জমা দেন ওই মহিলা। কিন্তু, বেশ কিছু দিন পরেও টাকা না মেলায় খোঁজ নিলে ব্যাঙ্ক মহিলাকে জানায় চেকটি বাতিল হয়ে গিয়েছে! সে খবর শোনার পর থেকেই অথৈ জলে পড়েন গুলেনুর। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার ব্যাঙ্কে যাচ্ছি। এক বার যাচ্ছি বন দফতরের আধিকারিকের কাছে। কিন্তু, কবে ক্ষতিপূরণের টাকা পাব সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারেছে না। শুধু একে অপরকে দোষারোপ করছেন, আর বলছেন দেরি হবে। জেলা প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু, কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি।’’ স্বামীর মৃত্যুর পরে পরিবারের হাল টানা এমনিতেই দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। দুই নাবালক সন্তান এবং এক মেয়েকে নিয়ে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না মহিলা।

সমস্যাটা কোথায়?

ডিএফও-র বক্তব্য, ‘‘অর্থবর্ষের শেষে ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ হওয়ায় স্বল্প সময়কাল দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য আমি নিজের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক ওই মহিলার হাতে দিয়েছিলাম। দ্রুত ব্যাঙ্ক থেকে সেটা ভাঙিয়ে নিতেও বলেছিলাম। এটা পুরোপুরি ব্যাঙ্কের গাফিলতি। একটি চেক ক্লিয়ার হওয়ার জন্য ১০-১২ দিনে যথেষ্ট সময়। তার পরেও মহিলা কেন টাকা পেলেন না, তা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।’’ এ দিকে, ব্যাঙ্কের যশপুর শাখার প্রবন্ধক লক্ষ্মীনারায়ণ জানাচ্ছেন, মহিলা ৩১ মার্চ চেক জমা দিয়েছিলেন। পরের দিন ব্যাঙ্ক ছুটি থাকায় সেটি সিউড়ি শাখায় পাঠানো যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘হাতে সময় কম ছিল বলে ডাক মারফত বা ক্যুরিয়ারে তা না পাঠিয়ে লোক মারফত ২ এপ্রিলই সিউড়িতে চেক পাঠানো হয়েছিল। ওই দিনই সিউড়ি শাখা থেকে অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে তা জমা করা হয়।’’ তাঁর দাবি, সব কিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও ‘এন্ডোর্সমেন্ট রিকয়ার্ড’ জানিয়ে চেকটিকে সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ফের সিউড়ি ব্যাঙ্কে পাঠায়। সেটা আবার যখন যশপুর থেকে সিউড়ি শাখা হয়ে পুনরায় ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা হয়, তত দিনে চেকের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে!

প্রায় একই বক্তব্য যশপুরের ব্যাঙ্কটির সিউড়ি শাখার প্রবন্ধক মৃণ্ময় চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের একটি প্রত্যন্ত শাখা থেকে এ ভাবে চেক যাতায়াত করতে সময় লাগে। সাধারণত চেকে তিন মাস সময় দেওয়া থাকে। ওই চেকটির ক্ষেত্রে মেয়াদের এত অল্প সময় দেওয়াতেই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু, যে টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ, কোনও কারণে ভাঙানো যায়নি, সেই চেক পুনরায় ইস্যু করতে তো সমস্যা নেই।’’ অন্য দিকে, দ্বিতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটির মুখ্য প্রবন্ধক ছবি সরকারের বক্তব্য, যে কোনও সরকারি চেকের ক্ষেত্রে ‘এন্ডোর্সমেন্ট’ প্রয়োজন। এখানে মহিলা টিপসই করে থাকলে সংশ্লিষ্ট শাখা প্রবন্ধকের সই-সিল প্রয়োজন। সেটা না থাকলে সেই চেক ফেরত যাবেই। ‘‘তবে, আমাদের সিউড়ির মূল শাখা থেকে ঠিক কী কারণে ‘এন্ডোর্সমেন্ট রিকয়ার্ড’ বলে লেখা হয়েছিল, সেটা রিটার্ন মেমো না দেখে বলা সম্ভব নয়,’’—বলছেন ছবিদেবী।

এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য জানাচ্ছেন, বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পরেই ডিএফও-কে নতুন চেক ইস্যু করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ওই কর্তা আরও বলেন, ‘‘যেহেতু ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ হলেও সেটা উপভোক্তা পাননি, সেই জন্য পুনর্বরাদ্দের আবেদন করতে হবে। সেটা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু, ব্যাঙ্কই বা এত উদাসীন কেন হবে। শুধু পছিয়াড়াই নয়, সাঁইথিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটিয়েছে অন্য ব্যাঙ্ক। এটা অবশ্যই শোধরানো উচিত।’’

Gulenur Bibi elephant attack bank money birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy