Advertisement
E-Paper

নাছোড় বৃষ্টিতে নাকাল বাঁকুড়া

নিম্নচাপের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি চলছিলই বেশ কিছু দিন ধরে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে হঠাৎই শুরু হল দমকা হাওয়ার সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টি। চলল রাতভর। আর তাতেই কার্যত লন্ডভন্ড অবস্থা বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের। কালবৈশাখীর মতো মতো ভরা শ্রাবণেও ঝড়ের দাপটে ঘরবাড়ি ঝড়ে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে সোনামুখী ব্লকে। জঙ্গলমহলের রাইপুর, সিমলাপালের পাশাপাশি জেলার অধিকাংশ ব্লকেই বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে ঘরবাড়ি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৪৮
জলের তলায় গ্রামে ঢোকার রাস্তা। ওন্দার চন্দ্রহাটি থেকে জন্দা যেতে দুর্ভোগ।

জলের তলায় গ্রামে ঢোকার রাস্তা। ওন্দার চন্দ্রহাটি থেকে জন্দা যেতে দুর্ভোগ।

নিম্নচাপের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি চলছিলই বেশ কিছু দিন ধরে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে হঠাৎই শুরু হল দমকা হাওয়ার সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টি। চলল রাতভর। আর তাতেই কার্যত লন্ডভন্ড অবস্থা বাঁকুড়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের। কালবৈশাখীর মতো মতো ভরা শ্রাবণেও ঝড়ের দাপটে ঘরবাড়ি ঝড়ে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে সোনামুখী ব্লকে। জঙ্গলমহলের রাইপুর, সিমলাপালের পাশাপাশি জেলার অধিকাংশ ব্লকেই বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে ঘরবাড়ি। বাঁকুড়া শহরে দেওয়াল চাপা পড়ে জখম হয়েছেন এক মহিলা। সোনামুখীর শালি নদীর কজওয়ে ডুবে গিয়েছে বৃষ্টির জলে। নানা জায়গায় বিপর্যস্ত জনজীবন।
জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী, রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত বাঁকুড়া শহরে বৃষ্টি হয়েছে ১০১.২ মিলিমিটার। গোটা জেলায় গড় বৃষ্টিপাত ৩৭.২ মিলিমিটার। জেলা জুড়ে প্রায় ১৩৮৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৪টি বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু।
রবিবার সন্ধ্যায় সোনামুখী ব্লকের পাঁচাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কানাইপুর ও বনগ্রামে কিছুক্ষণের ঝড়েই উপড়ে গিয়েছে রাধানগর বনাঞ্চলের পাঁচাল এলাকার বহু শাল-মহুল গাছ। কানাইপুর প্রাথমিক স্কুলের স্টোররুমের টিনের চালাও উড়ে গিয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত চক্রবর্তী বলেন, “স্টোররুমের চালা প্রায় ৩০ মিটার দূরে গিয়ে পড়েছে।’’ তবে স্কুলের ক্লাসরুমের কোনও ক্ষতি না হওয়ায় সোমবার পড়াশোনা স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। বন দফতরের রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিক অলক আচার্য বলেন, “বহু দামি গাছ পড়ে গিয়েছে ঝড়ে। ক্ষতির পরিমাণ কত, তার হিসেব করা হচ্ছে।’’ এ দিকে শালি নদীর জল বেড়ে যাওয়াতে যানচলাচল বন্ধ বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী হয়ে দুর্গাপুর যাওয়ার রাস্তায়। কজওয়ে ভেসে যাওয়ায় বহু বাস চলছে না। আর কিছু বাস ঘুরপথে বেলিয়াতোড় হয়ে যাতায়াত করছে।

বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জমি জলের তলায় চন্দ্রহাটি গ্রামে তোলা ছবি।

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে বহু ব্লকই। ওন্দা ব্লকের ওলা গ্রামের ভিতরে রাস্তায় জল জমে রয়েছে। বেশ কিছু গ্রামবাসীর ঘরেও জল ঢুকেছে। ওন্দা ব্লকের কোষ্ঠিয়া, নটরার মতো বেশ কিছু গ্রামে একই চিত্র। বাঁকুড়া ২ ব্লকের আইলঠা গ্রামের একটি মানাজোড়ের কজওয়ের উপর দিয়ে জল যাচ্ছে। এই কজওয়ের উপর দিয়ে বহু মানুষ ব্যবসার তাগিদে ওন্দা থেকে বাঁকুড়া শহরে আসেন। ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা ডোবা কজওয়ে পারাপার করছেন। জেলার জঙ্গলমহলের চারটি ব্লকই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক’দিনের বৃষ্টিতে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সিমলাপাল ও রাইপুর ব্লকে। এলাকার নদনদীগুলিও ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সোমবারও দিনভর নিম্নচাপের বৃষ্টি হয়েছে জেলায়।

ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়েছে সোনামুখী থানার বনগ্রামে।

রবিবার রাতে বাঁকুড়া শহরের লোকপুর এলাকার বধূ সোনালি বিশ্বাস দেওয়াল চাপা পড়ে জখম হন। মাটির বাড়ির টালির চালার ঘরে পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি। টানা ক’দিনের বৃষ্টিতে বাড়ির দেওয়াল ক্ষয় হতে শুরু করেছিল। রাতে হঠাৎই ভেঙে পড়ে তিন দিকের দেওয়াল। তখন ঘরের ভিতরে সোনালিদেবী ও বারান্দায় ছিলেন তাঁর স্বামী মধু বিশ্বাস। হুড়মুড়িয়ে বাড়ি ভেঙে পড়ার পরে মধুবাবু পড়শিদের সহযোগিতায় স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। মাথায় আঘাত পেয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি ওই বধূ। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, টানা বৃষ্টিতে বস্তি বহু মাটির বাড়িই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। কিন্তু বাঁকুড়া পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করছে না। পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “আমি সমস্ত কাউন্সিলরকে বলেছি, তাঁদের এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে প্রাথমিক স্কুলে আপাতত পুনর্বাসন দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছি। সরকারি সাহায্যের জন্য আধিকারিকেরা আমাকে ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িগুলির ছবি করে পাঠাতে বলেছেন।’’

ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও শুভ্র মিত্র।

bankura Heavy rain storm
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy