Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাঙ্কে হঠাৎ ৪৫ হাজার, ফেরালেন দম্পতি

ইয়াসিন আখতারকেও জানানো হয়। বৃহস্পতিবার ব্লক অফিসে গিয়ে জানতে পারি, ওই টাকা আমার নয়। অন্যের টাকা কেন নেব, তাই ফেরত দিলাম

নজির: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা ফেরত দিলেন বেলি বিবি। নিজস্ব চিত্র

নজির: ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আসা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা ফেরত দিলেন বেলি বিবি। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৮ ০০:৫৩
Share: Save:

বেলি বিবির একটা বাড়ি আছে বটে। অবশ্য যদি তাকে বাড়ি বলা যায়, তবেই। খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘুপচি ঘর। দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা, একটা ভদ্রগোছের মাথাগোঁজার ঠাঁই হোক। সাধপূরণ হয়নি আজও। সেই মহিলাই তাঁর অ্যাকাউন্টে ‘ভুল’ করে চলে আসা অন্য কারও বাড়ি তৈরির টাকা হেলায় ফিরিয়ে দিলেন প্রশাসনকে।

টাকার অঙ্কটা খুব কম নয়, ৪৫ হাজার! সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা ভাটিপাড়ার বাসিন্দা ওই বধূর সততায় মুগ্ধ বিডিও মহম্মদ বদরুদ্দোজা। বলে দিচ্ছেন, এটা সততার নজির। বেলি বিবির অবশ্য স্পষ্ট কথা, ‘‘যে টাকা আমার নয়, তা আমি নেব কেন!’’

বেলি বিবি অবসর সময়ে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর স্বামী শেখ আকাল দিনমজুর। সিউড়িতে প্রাক্তন কাউন্সিলর ইয়াসিন আখতারের বাড়িতেও কাজ করেন তাঁরা। টাকা ফেরানোর ইচ্ছার কথা প্রথমে তাঁকেই জানিয়েছিলেন। তিনি ওই মহিলাকে সাহায্য করেন। বিড়ি বাঁধার সামান্য উপার্জন থেকে কিছু টাকা ভবিষ্যতের জন্য জমিয়ে রাখতে কড়িধ্যায়, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বেলি বিবি। সোমবার ব্যাঙ্কের পাসবই ‘আপডেট’ করতে গিয়ে দেখেন, অ্যাকউন্টের ব্যালান্স এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ৪৫ হাজার।

সে কথা শুনে কেউ কেউ ওই মহিলাকে বলেছিলেন— ‘বাড়ি তৈরির টাকা এসেছে’। প্রথমে আনন্দ পেলেও পরে সন্দেহ হয়। বেলি বিবির কথায়, ‘‘আমাদের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ছিল না। স্বামীকে সে কথা জানাই। ইয়াসিন আখতারকেও জানানো হয়। বৃহস্পতিবার ব্লক অফিসে গিয়ে জানতে পারি, ওই টাকা আমার নয়। অন্যের টাকা কেন নেব, তাই ফেরত দিলাম।’’ শুক্রবার ব্লক অফিসে গিয়ে বিডিও-র হাতে নগদ ৪৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন ইয়াসিন। তিনি বলেন, ‘‘একটা ভাল ঘটনার সাক্ষী থাকলাম।’’

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছিলেন কড়িধ্যারই নিমডাঙালের আদিবাসী জনজাতির এক মহিলা। তাঁর প্রাপ্য টাকা কোনও ভাবে ঢুকে যায় বেলি বিবির অ্যাকাউন্টে। বিডিও বলছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই উপভোক্তা এবং বেলি বিবির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর এক হয়ে গিয়েছিল। ব্যাঙ্কের ভুলেই বেলি বিবির অ্যাকাউন্টে অন্যের টাকা ঢুকেছিল। উনি না ফেরালে তা জানতেও পারতেন না কেউ। ওঁদেরও পাকা বাড়ি নেই। কিন্তু, অনটন থাকলেও যে সততা উনি দেখালেন, সেটা এক জন সু-নাগরিকের কাজ।’’ তাঁর আশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ওই পরিবারের নাম নেই। কিন্তু গীতাঞ্জলি প্রকল্পে যাতে উনি বাড়ি পান, সেটা দেখা হবে।

প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম তোলার জন্য একটি আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে যাঁদের পাকা বাড়ি নেই, তাঁদের নাম তালিকায় তোলা হয়েছিল। কোনও কারণে হয়তো বেলি বিবিদের নাম বাদ গিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বীরভূমের ‘লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার’ রাজীবকুমার সিংহ বলেন, ‘‘এমন হয়ে থাকলে মারাত্মক ভুল। কী ভাবে ব্যাঙ্কের ওই শাখা এটা করল, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Honesty Banking Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE