Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তা চেয়ে অবরোধে রাইপুরের হস্টেল-ছাত্রীরা

বাঁকুড়ার রাইপুরে প্রীতিলতা ছাত্রী আবাস ঘিরে ঝামেলা মেটার লক্ষণ নেই। এ বার আন্দোলনে নামলেন আবাসিক ছাত্রীরা। হস্টেলে বিনা অনুমতিতে বহিরাগতেরা গিয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে এবং বারবার জানিয়েও পুলিশ-প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাস্তা অবরোধ করলেন ওই হস্টেলের প্রায় ৫০ জন ছাত্রী। এ দিন সকাল ১০টা থেকে রাইপুর সাব-স্টেশনের কাছে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কের উপরে অবরোধ করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০১
রোদ মাথায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ আবাসিক ছাত্রীদের।  নিজস্ব চিত্র

রোদ মাথায় বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ আবাসিক ছাত্রীদের। নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়ার রাইপুরে প্রীতিলতা ছাত্রী আবাস ঘিরে ঝামেলা মেটার লক্ষণ নেই। এ বার আন্দোলনে নামলেন আবাসিক ছাত্রীরা। হস্টেলে বিনা অনুমতিতে বহিরাগতেরা গিয়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে এবং বারবার জানিয়েও পুলিশ-প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার রাস্তা অবরোধ করলেন ওই হস্টেলের প্রায় ৫০ জন ছাত্রী।

এ দিন সকাল ১০টা থেকে রাইপুর সাব-স্টেশনের কাছে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কের উপরে অবরোধ করা হয়। টানা চার ঘণ্টার অবরোধে রাজ্য সড়কে যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ ব্যাহত হয়। পরে খাতড়ার এসডিপিও কল্যাণ সিংহ রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ২টো নাগাদ অবরোধ তুলে নেন ছাত্রীরা।

এই কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসে গণ্ডগোলের সূত্রপাত গত ২২ অগস্ট। ওই দিন ছাত্রী আবাসের অব্যবস্থা নিয়ে সুপারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন তৃণমূল পরিচালিত রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আশা মণ্ডল। অভিযোগ, হস্টেলের মধ্যেই তাঁকে আটকে রেখে হেনস্থা করা হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে আশাদেবীকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশের কাছে হস্টেলের সুপার তাপসী দে-র বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেন ওই কর্মাধ্যক্ষ। সুপার অবশ্য গত সোমবার খাতড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। পরে রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাসও হস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। তারই পাল্টা হিসেবে তাপসীদেবী বিডিও-র বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পুলিশের কাছে।

এখানেই শেষ নয়, ছাত্রীদের তরফে হস্টেলেরই এক আবাসিক খাতড়া আদালতে রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা শান্তিনাথ মণ্ডল, রাইপুর কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, টিএমসিপি নেতা চিরঞ্জিত মাহাতো, বিডিও দীপঙ্কর দাস-সহ পাঁচ জনের নামে একাধিক ধারায় অভিযোগ করেন। এতগুলি অভিযোগের পরেও অবশ্য পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “রাইপুরের ওই ছাত্রী আবাসের ঘটনায় সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

হস্টেলের ছাত্রীদের অভিযোগ, ২২ আগস্ট বিনা অনুমতিতে হস্টেলে ঢুকেছিলেন কর্মাধ্যক্ষ আশাদেবী। তাঁর সঙ্গে কিছু বহিরাগত ছাত্রছাত্রীও ছিল। তাঁরা সবাই মিলে হস্টেলে ঝামেলা পাকান। পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ করার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবাসিক ছাত্রীদের একাংশ বলছেন, “ওই ঘটনার পর থেকেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই অভিযুক্তদের অবিলম্বে ধরার দাবিতে এ দিন বাধ্য হয়ে রাস্তা অবরোধে নেমেছি।” গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় আচমকা অবরোধের জেরে চূড়ান্ত নাকাল হন সাধারণ যাত্রীরা। রাস্তার দু’পাশেই সার সার বাস, ট্রাক-সহ বিভিন্ন গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। বেলপাহাড়ির বাসিন্দা মাধব মাহাতো এ দিন বাঁকুড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, “স্থানীয় একটি ঝামেলা নিয়ে এ ভাবে পথ অবরোধ হল। দীর্ঘক্ষণ পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখল। আর সাধারণ মানুষকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হল।” লালগড়ের বাসিন্দা নেপাল বাউরি বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি এক আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন। তাঁর আক্ষেপ, “অবরোধে আটকে গোটা দিনটাই নষ্ট হয়ে গেল!” কেন দ্রুত অবরোধ তুলতে পারল না পুলিশ? এসডিপিও-র বক্তব্য, “ছাত্রীরা এই অবরোধ করছিলেন। তাই আন্দোলনকারীদের সরাতে আমরা জোর খাটাতে পারিনি।”

ছাত্রী আবাস নিয়ে গণ্ডগোল প্রকাশ্যে এনেছে শাসক দলের স্থানীয় দুই গোষ্ঠীর বিরোধকেও। যে দ্বন্দ্বের এক দিকে রয়েছে তৃণমূলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর গোষ্ঠী। আর অন্য দিকে, ব্লকের যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহ এবং দলের জেলা কমিটির সদস্য অনিল মাহাতোর গোষ্ঠী। দুই গোষ্ঠীর বিবাদ অনেক দিনের। রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা জগবন্ধুবাবুর গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে। সমিতির সহ-সভাপতি শান্তিনাথবাবু, কর্মাধ্যক্ষ আশা মণ্ডল ব্লক সভাপতির অনুগামী হিসাবেই পরিচিত। তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের একাংশই জানাচ্ছেন, প্রীতিলতা ছাত্রী আবাসের সুপার এবং আবাসিকদের মদত জোগাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আবার হস্টেল নিয়ে খড়্গহস্ত হতে দলের একাংশকে ইন্ধন দিচ্ছে অন্য গোষ্ঠী।

বস্তুত, এ নিয়ে রাইপুরে রাজনৈতিক জলঘোলা চরমে উঠেছে। যদিও দুই গোষ্ঠীর নেতারাই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন বলে দাবি করেছেন। শান্তিনাথবাবু বলেন, “ওই হস্টেলের সুপার শুধু কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই নয়, আমি আর আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের নামেও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। অথচ ওই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই আমরা যুক্ত নই।” দলের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতাদের নাম সরাসরি না নিয়েও শান্তিনাথবাবুর দাবি, “কারও প্ররোচনাতেই তিনি (সুপার) এই কাজ করেছেন বলে আমার ধারণা।” অনিলবাবু ও রাজকুমারবাবুরও বক্তব্য, “হস্টেলের ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। তবে, ওই হস্টেলে ছাত্রীদের নিরাপত্তা যাতে সুনিশ্চিত থাকে, বহিরাগতেরা যাতে তাদের ভয় দেখাতে না পারে, এ ব্যাপারে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।”

হস্টেলে নিরাপত্তা নিয়ে কেন ওই দুই নেতা এত ‘উদ্বিগ্ন’? দলের কিছু কর্মীই বলছেন, “ওই হস্টেলে ঢুকে হুজ্জুতি পাকানোর অভিযোগ উঠেছে ব্লক সভাপতির কিছু অনুগামীর বিরুদ্ধে। বিরুদ্ধ গোষ্ঠী কি সেই সুযোগ এত তাড়াতাড়ি হাতছাড়া করবে? আবার এটাও ঠিক, ওই দিন হস্টেলে বহিরাগত নিয়েই ঢুকেছিলেন কর্মাধ্যক্ষ।”

raipur hostel security gherao bankura state new online news latest news online news latest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy