Advertisement
১৯ মে ২০২৪
ভোট মিটতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব শুরু তৃণমূলে

খয়রাশোলে পুড়ল বাড়ি

এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোনও নতুন ঘটনা নয়। ভোটের সময় শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ফের তা প্রকাশ্যে চলে এল। দিন কয়েক থেকেই খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানা এলাকার হরিএকতলা গ্রামে দু’পক্ষের অশান্তি চলছিলই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁকরতলা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০১:১৬
Share: Save:

এলাকায় শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কোনও নতুন ঘটনা নয়। ভোটের সময় শীর্ষ নেতৃত্ব কিছুটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও ফের তা প্রকাশ্যে চলে এল। দিন কয়েক থেকেই খয়রাশোলের কাঁকরতলা থানা এলাকার হরিএকতলা গ্রামে দু’পক্ষের অশান্তি চলছিলই। এ বার ওই গ্রামেই এক তৃণমূল কর্মীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় পিছনে নাম জড়াল বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল পঞ্চায়েত এক সদস্যের দলবলের বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে এমনই অভিযোগ জমি পড়েছে কাঁকরতলা থানায়।

পুলিশে ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবুইজোড় পঞ্চায়েতের হরিএকতলা গ্রামে ভোর ৩টে নাগাদ আগুন লাগে জনৈক তৃণমূল কর্মী বদরুদ্দিন শেখের বাড়িতে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় বসতবাড়ি, রান্নাঘর ও গোয়াল। ওই অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ নুর আকতামের নেতৃত্বে বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন বদরুদ্দিন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত নুর অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা দাবি করেছেন, আগুন নেগেছে শর্ট সার্কিট থেকে। তিনি বা তাঁর সঙ্গীরা মোটেই এর সঙ্গে যুক্ত নন।

তৃণমূলেরই সূত্রের খবর, খয়রাশোলের এই পঞ্চায়েতে দু’টি গোষ্টীর মধ্যে বিবাদ দীর্ঘ দিনের। পঞ্চায়েতের দখল কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, তা নিয়েই নিহত তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের ভাই আব্দুর রহমানের সঙ্গে মৃণাল ঘোষ ওরফে কেদার গোষ্ঠীর বিবাদ চলছেই। পঞ্চায়েতে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হলেও দুই নেতার ছত্রছায়ায় আড়াআড়ি বিভাজিত রয়েছেন নির্বাচিত সদস্য ও সমর্থকেরা। এ নিয়ে প্রশাসন ও থানায় ভুরিভুরি অভিযোগ। ওই অঞ্চলে এমনটা চলতে থাকায় ভোটের সময় একটি রফাসূত্র বের করেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দুই নেতাকে দু’টি অংশের দায়িত্ব দিয়ে তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোট পেরতে না পেরতেই ফের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দিন কয়েক আগে ওই গ্রামে কে কাকে ভোট দিয়েছেন, এ নিয়ে মহিলাদের মধ্যে বচসা হয় বলে খবর। তাকে কেন্দ্র করে বিষয়টি গড়ায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ, রক্তারক্তিতে। দু’পক্ষের কয়েক জনকে পুলিশ ধরে। প্রায় দিনই অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। বহু পুরুষ ঘরছাড়া। শনিবারের ঘটনা সেই ঘটনারই জের বলে মনে করছেন অনেকে।

কেদার-গোষ্ঠীর ওই তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে ভোররাতে আগুন লাগার পরে পড়শিরা প্রথমে তা নেভানোর চেষ্টা করেন। ঘণ্টা দুয়েক পরে সিউড়ি থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাঁচানো যায়নি ক্ষয়ক্ষতি। বদরুদ্দিনের দাবি, ‘‘ভোর রাতে নুরের নেতৃত্বে বেশ কিছু দুষ্কৃতী বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার পুরো বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। সমস্ত জিনিস, গোয়ালের চারটি ছাগল পুড়ে মরেছে। পুড়ে গিয়েছে মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা লক্ষাধিক টাকাও।’’ বদরুদ্দিনের ছেলে আমিরুলের অভিযোগ, অশান্তির জেরে গ্রামের বাইরে রাত কাটাতে হচ্ছে। ভোরে বাবার কাছে খবর পান বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

যদিও আব্দুর রহমানের ছত্রছায়ায় থাকা শেখ নুর আকতামের দাবি, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। শর্ট সার্কিট থেকে আগুন। দায় চাপানো হচ্ছে আমাদের ঘাড়ে। তদন্ত হলেই সব জানা যাবে।’’ আব্দুর রহমানও আকতামের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তিনি অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়িয়ে দায় চাপাচ্ছেন সিপিএমের কাঁধে। তাঁর দাবি, ‘‘পক্ষ বিপক্ষের কথা বলতে পারব না। তবে সিপিএম বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য দায় অস্বীকার করেছে। অন্য দিকে খয়রাশোলের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের এক কর্মীর বাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দলগত ভাবে দেখা হচ্ছে, বাড়িটি পুড়ে যাওয়ার সঠিক কারণ কী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc assembly election tmc group clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE