Advertisement
১০ জুন ২০২৪

এক দিনেই উঠে গেল অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট

মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বাস মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। তারপরেই বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা বাস ধর্মঘট তুলে নেওয়া হল।

নাকাল: বাস মালিক সমিতির হঠাৎ ডাকা ধর্মঘটে পথে বের হওয়া মানুষজন ভুগলেন। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষাই সার। ছবি: সুজিত মাহাতো

নাকাল: বাস মালিক সমিতির হঠাৎ ডাকা ধর্মঘটে পথে বের হওয়া মানুষজন ভুগলেন। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষাই সার। ছবি: সুজিত মাহাতো

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

দিনভর বাস চালানো বন্ধ রেখে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট এক দিনেই তুলে নিল পুরুলিয়া জেলা বাস মালিক সমিতি। মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বাস মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। তারপরেই বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা বাস ধর্মঘট তুলে নেওয়া হল। মন্ত্রী বলেন, ‘‘পুজোর ছুটির পরে অফিস-আদালত খোলার ঠিক পরের দিনেই এ ভাবে জেলা জুড়ে বাস ধর্মঘট ডেকে মানুষজনকে অসুবিধার মধ্যে ফেলা ঠিক হয়নি। এ কথা ওঁদের বোঝানো হয়েছে। ওঁরা ধর্মঘট তুলে নিয়েছেন।’’

তবে পুজোর ছুটির পরে অফিস-আদালত খোলার ঠিক পরের দিনেই আচমকা বাস ধর্মঘটে মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বহু মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। সোমবার দুপুরে পুরুলিয়া শহরেই বাস মালিকদের সংগঠনের তরফে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘটের প্রচার করা হয়। কিন্তু তা সর্বত্র প্রচারিত হয়নি।

তাই মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, যথারীতি যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যেও অনেকে বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন। কিন্তু বাসের চাকা না ঘোরায় পথে বাস নামেনি। ফলে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে যথেষ্ঠ বেগ পেতে হয়েছে।

অনেকেই জানান, ধর্মঘটের কথা তাঁরা জানতেন না। তাঁদের এলাকায় এ নিয়ে কোনও প্রচার করা হয়নি। তবে রাত থেকে বৃষ্টির জেরে সকালের দিকে বাসস্ট্যান্ডগুলিতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে যাঁরা পথে বেরিয়েছেন, বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টি মাথায় তাঁদের নাকাল হতে হয়।

সরকারি বাস পথে নামলেও তা নগন্য ছিল। সেই সুযোগে কোথাও ছোট ভাড়াগাড়ির চালকেরা মোটা দর হাঁকেন বলে অভিযোগ। নলকুঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা উমা মাহাতো বলেন, ‘‘বাস না থাকায় মানবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক বেশি টাকা দিয়ে গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছতে হয়েছে।’’

বলরামপুরের বাসিন্দা দীপালি সাও বলরামপুর থেকে পুরুলিয়া সদরে এসেছিলেন। ফেরার বাস না পেয়ে তিনি দুর্ভোগে পড়েন। ঝাড়খণ্ডের চন্দনকিয়ারি থেকে পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে এসে সমস্যায় পড়েন সৃষ্টিধর ধীবর। তিনি জানান, ‘‘একটা অটো ধরে পুরুলিয়া পৌঁছালাম। যাব জামশেদপুর। এসে দেখছি কোনও বাসই নেই। ধর্মঘটের কথা জানতাম না।’’

বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কলকাতা থেকে ট্রেনে পুরুলিয়া ফিরছিলেন উজ্জ্বল পণ্ডিত। আদ্রা পর্যন্ত এসে বাসের জন্য তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়। অটো ধরে রঘুনাথপুরে পৌঁছে সেখান থেকে সরকারি বাসে তিনি পুরুলিয়ায় পৌঁছন। যাত্রীদের প্রশ্ন, ‘‘বাস মালিকদের দুষ্কৃতীদের হুমকির শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ভাবে কি গোটা জেলার বাস পরিষেবা বন্ধ করে দিতে পারেন?’’

রবিবার পুরুলিয়া-বোকারো (৩২ নম্বর) জাতীয় সড়কে ধানবাদ-পুরুলিয়া রুটের যাত্রিবাহী বাস ও খড় বোঝাই গাড়ির সংঘর্ষে কয়েকজনকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাস মালিক সংগঠনের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ৬০-৭০ জন লোক তাঁদের অফিসে হাজির হয়ে আহতদের কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে হবে বলে টাকা চেয়ে হুমকি দেয়। এই ঘটনার জেরেই রবিবার রাতে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায় বাস মালিক সমিতি। পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করায় সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ জেলা জুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট ডাকা হয়।

মঙ্গলবার দিনভর জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা জানতে চেয়েছেন, ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে, না উঠে গিয়েছে? বাস মালিক সমিতির সদস্যেরাও সন্ধ্যার আগে জানাতে পারেননি, তাঁরা বুধবার ধর্মঘট জারি রাখবেন কি না।

পরিস্থিতি দেখে মঙ্গলবার বিকেলে বাস মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মন্ত্রী। ছিলেন পরিবহন বোর্ডের সদস্য সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়, পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস-সহ প্রশাসনিক কর্তারা।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে বাস মালিক সমিতির সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রশাসন আমাদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দেওয়ায়, আমরা ধর্মঘট তুলে নিলাম। আমাদের উপরে যে ভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাতে ধর্মঘটে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা ছিল না।’’

জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওঁদের অভিযোগের তদন্ত করবে প্রশাসন। এ কথা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

পরিবহণ বোর্ডের সদস্য সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার প্রতি আস্থা রাখা দরকার। যাই হোক তাঁরা ধর্মঘট তুলে নেওয়ায় আজ, বুধবার থেকে বাস স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indefinite bus strike Bus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE