Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের হাতে শব্দ কি জব্দ, জানা যাবে আজ

আজ, কালীপুজোর রাতে দুই জেলার পুলিশের পরীক্ষা। ধরপাকড় এবং প্রচারে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলা পুলিশ শব্দবাজির বিরুদ্ধে সফল হয় কি না তা বোঝা যাবে আজই। তবে এই দিনের কথা মাথায় রেখে অভিযানের জন্য বাহিনী তৈরি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

প্রকাশ্যে না থাকলেও শব্দবাজি কি পুরোপুরি বন্ধ? —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ্যে না থাকলেও শব্দবাজি কি পুরোপুরি বন্ধ? —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৪
Share: Save:

আজ, কালীপুজোর রাতে দুই জেলার পুলিশের পরীক্ষা। ধরপাকড় এবং প্রচারে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলা পুলিশ শব্দবাজির বিরুদ্ধে সফল হয় কি না তা বোঝা যাবে আজই। তবে এই দিনের কথা মাথায় রেখে অভিযানের জন্য বাহিনী তৈরি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

পাশে পুলিশ

নিষিদ্ধ শব্দবাজি রুখতে বাঁকুড়া জেলার শহর ও গ্রামাঞ্চলে টহল দেবে পুলিশ। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, বিষ্ণুপুর ও খাতড়ার এসডিপিও-দের মহকুমা শহরগুলির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, “শব্দবাজি বিক্রি করাও যেমন বেআইনি, কিনে ফাটানোও তাই। দু’টি ক্ষেত্রেই হাতেনাতে ধরা পড়লে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুজো কমিটিগুলিকেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।” পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, জেলার যে কোনও প্রান্ত থেকেই শব্দবাজি ফাটানো নিয়ে অভিযোগ জানানো যাবে জেলা পুলিশের কন্ট্রোলরুমে। ফোন নম্বর ৯০৮৩২৬৯৩৪৩। অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানাকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার জানান, শব্দের বদলে আলোয় উৎসব পালনের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে সাধারণ মানুষজনকে। এই মর্মে ফ্লেক্স এবং লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার করা হয়েছে। খোলা হয়েছে হেল্প লাইন। তার নম্বর ৭৮৭২২৩০০০১। এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যাবে পুলিশের সঙ্গে। মহিলাদের জন্য থাকছে আলাদা হেল্পলাইন নম্বর। লিফলেটে জেলা পুলিশের কন্ট্রোল রুম, দমকল, পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল এবং অন্য জরুরি ফোন নম্বরও প্রচার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘প্রতিটি থানার পুলিশ নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি বন্ধে নজরদারি ও অভিযান চালাচ্ছে।”

রাশ টানতে

দুই জেলার পুলিশই এ বারে দুর্গাপুজোর পরে থেকে শব্দবাজি রুখতে মাঠে নেমেছিল। লাগাতার ধরপাকড়ে বাঁকুড়ায় শব্দবাজি বিক্রিতে বেশ কিছুটা রাশ টানা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। দুর্গাপুজোর পরে নিষিদ্ধ শব্দবাজি বানানোর অভিযোগে পাত্রসায়র থানা এলাকায় এক জন ও বড়জোড়া থানা এলাকায় দু’জন গ্রেফতার হয়েছেন। ওই দু’টি থানা এলাকা থেকে লক্ষাধিক টাকার শব্দবাজি এবং মালমশলা উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিনভর শব্দবাজি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদার বিষ্ণুপুর শহর জুড়ে মাইকে প্রচার করেন। শহরের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কালীপুজোর আগের রাত পর্যন্ত পুরুলিয়ার একুশটি থানা এলাকায় মোট পঞ্চান্ন প্যাকেট নিষিদ্ধ শব্দবাজি আটক করেছে পুলিশ। গোটা জেলা নয় এই পরিসংখ্যান মূলত পুরুলিয়া ও আদ্রার। পুলিশের দাবি, পুরুলিয়াতে আটক হয়েছে গোটা চল্লিশ শব্দবাজির প্যাকেট। আদ্রায় পনেরোটি চকলেট বোমার প্যাকেট। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। কালীপুজোর রাতে পুরুলিয়া, আদ্রা, রঘুনাথপুর এবং নিতুড়িয়া এলাকায় যে পরিমান শব্দবাজি ফাটে তার তুলনায় আটক বাজির পরিমান অতি সামান্য বলে জেলার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। তবে পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার দাবি করেছেন, দুর্গাপুজোর পরে থেকেই টানা অভিযানে শব্দবাজি বিকিকিনিতে অনেকটাই রাশ টানা গিয়েছে।

কী ভাবে মোকাবিলা

কালীপুজোর রাতে শব্দ বাজি রুখতে কী পরিকল্পনা পুলিশের? বিষ্ণুপুর পুলিশ জানিয়েছে, শহরের মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে গোটা আষ্টেক পাড়াকে ‘বিশেষ সমস্যামূলক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই পাড়াগুলিতে কালীপুজোর রাতে সাদা পোশাকের পুলিশ ঠাকুর দেখতে যাওয়ার ভান করে সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে ঘোরাঘুরি করবে। দলে তিন জন পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে থাকবেন বেশ কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার। তবে কোথাও শব্দবাজি ফাটানো হচ্ছে দেখলে সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীরা নিজেরা প্রকাশ্যে আসবেন না। তাঁরা ফোন করে খবর দেবেন পাশে থাকা পুলিশের মোবাইল ভ্যানে। মোবাইল ভ্যান পাড়ায় ঢুকে ধরপাকড় চালাবে। শহর জুড়ে এ রকমের চারটি মোবাইল ভ্যান ঘুরবে। যার একটির নেতৃত্বে থাকবেন খোদ বিষ্ণুপুরের এসডিপিও। আর একটিতে থাকবেন বিষ্ণুপুর সদর থানার আইসি। বাকি দু’টি ভ্যানের দায়িত্বে থাকবেন এস আই, এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকেরা। বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ সাদা পোশাকে মোটরবাইক নিয়ে শহরের অলিগলিতেও ঘোরাঘুরি করবে বলে জানা গিয়েছে। রাতভর শহরে টহল দেবে চারটি পুলিশ ভ্যান।

তবে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পুরুলিয়ায় কালীপুজোর চেয়ে তার পরের দিন, দিওয়ালিতে শব্দবাজির উপদ্রব বেশি হয়। তবে পুলিশি ধরপাকড়ে গত কয়েক বছরে একটু হলেও স্বস্তি মিলেছে বলে কোনও কোনও এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তবে অভিযোগ, যে পরিমান বাজি ফাটে, সেটাও নেহাত কম নয়। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে অনেক রাত পর্যন্ত চলে শব্দের তাণ্ডব।

এ বারে প্রকাশ্যে বাজি বিক্রি অনেকটাই কম হচ্ছে বলে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। জেলা সদর পুরুলিয়া, মহকুমা সদর রঘুনাথপুর, রেলের বিভাগীয় সদর আদ্রার-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেও দেখা গিয়েছে, বাজির পসরা সাজিয়ে যে বিক্রেতারা বসেছেন তাঁরা চকলেট বোমা বা দোদমার মতো নিষিদ্ধ শব্দবাজি রাখেননি। খোঁজ করলে অনেকেই বলেন, ‘‘গতবারেই নগদ টাকা দিয়ে চকলেট বোমা কিনে এনেছিলাম। পুলিশ পুরোটাই উঠিয়ে নিয়ে যায়। মাঝ থেকে লোকসান হয়ে গিয়েছিল। তাই এ বারে আর ঝুঁকি নিইনি।’’

তবে বেশ কিছু বিক্রেতা এই মওকায় বাড়তি লাভের ঝাড়খণ্ড এবং কলকাতা থেকে গোপনে চকলেট বোমা এনেছেন বলে সূত্রের খবর। তবে পুলিশের ভয়ে তাঁরা সেগুলি প্রকাশ্যে বিক্রি করছেন না। পুলিশের দাবি, প্রকাশ্যে বিক্রি করলে দোকানে অভিযান চালিয়ে শব্দবাজি আটক করা যায়। কিন্তু অন্যত্র রেখে পরে ক্রেতাদের কাছে সময় মতো বাজি পৌঁছে দেওয়ার ঘটনা আটকানো খুবই মুশকিলের। আপাতত দিওয়ালির রাতে শব্দবাজি রুখতে কিছু থানা এলাকায় সাদা পোশাকে পুলিশ কর্মীরা ঘুরবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

এই সমস্ত আয়োজনে ফল কতটা মেলে তা জানতে আপাতত শুধু সামান্য সময়ের অপেক্ষা।

হেল্প লাইন

বাঁকুড়া ৯০৮৩২৬৯৩৪৩

পুরুলিয়া ৭৮৭২২৩০০০১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali puja Celebration Fire-cracker High security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE