Advertisement
E-Paper

খুনই হয়েছেন গৌতম

প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার কিনারার দাবিতে মোমবাতি মিছিল হল রঘুনাথপুরে। বৃষ্টি থামতে শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ মিছিল করে থানায় যান স্থানীয় নবীন সঙ্ঘের সদস্যেরা এবং শহরের ৪ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৫
প্রাক্তন পুরপ্রধানের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে মোমবাতি মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

প্রাক্তন পুরপ্রধানের মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে মোমবাতি মিছিল।—নিজস্ব চিত্র।

প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌতম মুখোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার কিনারার দাবিতে মোমবাতি মিছিল হল রঘুনাথপুরে। বৃষ্টি থামতে শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ মিছিল করে থানায় যান স্থানীয় নবীন সঙ্ঘের সদস্যেরা এবং শহরের ৪ এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। মিছিলে সামিল হয়েছিলেন গৌতমবাবুর স্ত্রী কবিতাদেবী, মেয়ে গার্গী ও ছেলে দেবব্রত। মিছিল করে তাঁরা রঘুনাথপুর থানায় যান। সেখানে কবিতাদেবী তাঁর স্বামীকে খুন করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গণস্বাক্ষর করে একই অভিযোগ থানায় জানিয়েছেন এলাকার শতাধিক বাসিন্দাও। পুলিশ জানিয়েছে, গৌতমবাবুর স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। যদিও শুক্রবার পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

গত ২ জুলাই বৃহস্পতিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন রঘুনাথপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌতম মুখোপাধ্যায়। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দত্তবাগাগানের বাসিন্দা এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় গৌতমবাবু অবশ্য ডাক নাম ‘উতু’ হিসাবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। পরে শনিবার ভোরে বাড়ির অদূরে পোদ্দার পুকুরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু গৌতমবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরছে এলাকায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এলাকায় তাঁকে যে পোশাকে দেখা গিয়েছিল, দেহ উদ্ধারের সময় পরনে সেই পোশাক না থাকায় এবং শৌচকর্মে বা স্নান করতে পুকুরে না যাওয়া গৌতমবাবু কেন সেই রাতে পুকুরে গিয়েছিলেন, সাঁতার জানা সত্ত্বেও কী ভাবে জলে ডুবে তাঁর মৃত্যু হল— এই ধরনের বেশ কিছু প্রশ্ন ভাবাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বস্তুত দেহ উদ্ধারের পর থেকেই এলাকার বাসিন্দারা গৌতমবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। শনিবার সকালে থানায় গিয়ে ওসির কাছে ওই দাবি জানিয়েছিলেন বাসিন্দাদের একাংশও। তবে সে দিন মৃতের পরিবার লিখিত ভাবে কোনও অভিযোগ করেননি।

পুলিশের একটি সূত্রে জানানো হয়েছিল, ময়নাতদন্তের প্রাথমিক তথ্য যা তারা পেয়েছে, তাতে খুন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে না। পুলিশ ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু খুনের অভিযোগ না হওয়ায় এতদিন সে ভাবে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারেনি। এ বার গৌতমবাবুর স্ত্রীর সঙ্গে বাসিন্দারাও লিখিত ভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোয় পুলিশও খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ৭টা নাগাদ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই গৌতমবাবুর ক্লাব নবীন সঙ্ঘ থেকে মোমবাতি হাতে নিয়ে মিছিল শুরু হয়েছিল। তাতে সামিল হয়েছিলেন ক্লাবের সদস্য-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। খুনের ঘটনার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানানো প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় মহিলা ও কিশোরদের। নবীন সঙ্ঘ থেকে মিছিল শুরু হয়ে ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজার, হাটতলা হয়ে রঘুনাথপুর থানায় পৌঁছয়। কবিতাদেবী বলেন, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস খুন করে স্বামীর দেহ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।’’

নবীন সঙ্ঘের কর্মকর্তাদের মধ্যে তরুণ ঘোষ, শান্তনু দত্ত থেকে স্থানীয় বাসিন্দা কাজলকৃষ্ণ সিংহ বলেন, ‘‘গৌতমবাবুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে অনেক রহস্য রয়েছে। আমাদের বিশ্বাস কেউ বা কারা খুন করে তাঁর দেহ পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। তাই পুলিশের কাছে ঘটনার কিনারা করার দাবি জানিয়েছি।” মিছিলে আসা অনেকের অভিযোগ, ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গৌতমবাবুর মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলেও কেউ কেউ চালানোর চেষ্টা করছে।

এ দিকে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হলেও খুনের কারণ সম্পর্কে গৌতমবাবুর পরিবার বা বাসিন্দারা কোনও তথ্যই দিতে পারেনি বলে পুলিশের দাবি। তাতে তদন্ত কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ময়নাতদন্তের পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে মৃত্যুর কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর দেহে এমন কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি যাতে মনে করা যায় তাঁকে খুন করা হয়েছিল।

এ দিকে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও গৌতমবাবুর পরিবার খুনের কারণ বা কাদের প্রতি সন্দেহ রয়েছে সে ব্যাপারেও কিছুই জানতে পারেননি। তদন্তে সাহায্য হতে পারে সেই ধরনের কোনও তথ্যও জানাতে পারেননি গণস্বাক্ষর করে অভিযোগ জানানো স্থানীয় বাসিন্দারাও। ফলে তদন্ত শুরু করা হলেও এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনও গতি আসেনি।’’

Investigation Gautam Gautam Mukhapadhya raghunathpur candel rally
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy