Advertisement
০৭ মে ২০২৪

কেকার সাফল্যে ভরসা পাচ্ছেন বাকিরা

পড়াশোনার ক্ষেত্রে বয়স যে কোনও বাধা নয়, তা ফের একবার প্রমাণ করলেন বছর বিয়াল্লিশের কেকা গোস্বামী। ইচ্ছেশক্তি আর অধ্যবসায়কে সম্বল করে সসম্মানে কেকা উতরে গেলেন উচ্চমাধ্যমিক। পাশ করেছেন, প্রায় ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়়ে। খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রামের বধূ তথা আশা কর্মী কেকা এবার খয়রাশোলের পাঁচড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। নিজের সন্তানের থেকেও কম বয়সীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই স্কুলের সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের নাম রাখতে পারায় খুশি তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০২:১০
Share: Save:

পড়াশোনার ক্ষেত্রে বয়স যে কোনও বাধা নয়, তা ফের একবার প্রমাণ করলেন বছর বিয়াল্লিশের কেকা গোস্বামী। ইচ্ছেশক্তি আর অধ্যবসায়কে সম্বল করে সসম্মানে কেকা উতরে গেলেন উচ্চমাধ্যমিক। পাশ করেছেন, প্রায় ৫৮ শতাংশ নম্বর পেয়়ে।

খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রামের বধূ তথা আশা কর্মী কেকা এবার খয়রাশোলের পাঁচড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিলেন। নিজের সন্তানের থেকেও কম বয়সীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই স্কুলের সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নিজের নাম রাখতে পারায় খুশি তিনি। খুশি, তাঁর পরিবার এবং স্কুলও। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহদেব গোপ বলেন, ‘‘এই বয়সে পড়াশুনা করার আগ্রহ ধরে রাখাই শক্ত। কেকার সাফল্য অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাবে সন্দেহ নেই।’’

স্বামী সুখময় গোস্বামী একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার হয়ে কাজ করেন। ছেলে সৌভিকও প্রায়শই বাইরে থাকেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু তাঁরা উভয়েই কেকাদেবীকে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ভাই ও সহপাঠীরা বরাবরই তাঁর পাশে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ দু’দশকের ব্যবধানে ফের পড়াশুনা শুরু করা, তার সঙ্গে পেশা ও ঘর সংসার সামলে পরীক্ষা দেওয়া, কাজটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। তবুও লড়াইটা জিতেছেন কেকা।

শুক্রবার সে সব কথাই বলছিলেন কেকা। ১৯৯০ সালে যেবার পাঁচড়া স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন, ইতিহাসে ব্যাক ছিল। সেবারই বিয়ে হয়ে যায় গ্রামেরই যুবক সুখময়বাবুর সঙ্গে। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছেটা কোথাও মনের মধ্যেই ছিল। সংসার-সন্তান এই নিয়ে সেটা আর হয়ে উঠেনি। সে সময় কেকা ভাবতেন। কীভাবে মাধ্যমিকে ফের বসা যায়। বলছিলেন সেদিনের আশঙ্কার কথা।

‘‘২০০৯ সালে অশাকর্মী হিসাবে কাজ যোগ দিই পাঁচড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধীনে। যদিও মাধ্যমিক মান থাকলেই এই কাজে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আমি সুযোগ খুঁজছিললাম পাশ করার। ২০১১ সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সেটা ইচ্ছা সম্পূর্ণ হয়। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক।’’ উচ্চমাধ্যমিক যে কী ভাবে হবে সেটা নিয়েও ঘোর চিন্তায় পড়েছিলেন কেকা। ভাবতে ভাবতেই আরও দু’বছর গড়িয়ে যায়!

‘‘জানতে পারি, আমাদেরও নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে উচ্চমাধ্যমিক করার সুযোগ রয়েছে। সেই ভেবে নিজের পুরানো স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এত ছোট ছোট ছেলে মেয়ের সামনে কী ভাবে মানিয়ে নিয়ে ক্লাস করব, সেটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল।’’

কেমন সেই অভিজ্ঞতা?

প্রথমদিন ক্লাসে যাওয়ার পর সহপাঠীরা তাঁকে শিক্ষিকা বলেই ভুল করেছিল। অচিরেই সেই ভুল ভাঙিয়ে দিয়ে ছিলেন কেকাদেবীই। তিনি যে মোটেই শিক্ষিকা নন ছাত্রীই, নিজেই সে কথা নিজের সন্তানের থেকে ছোট সহপাঠীদের জানিয়ে দিয়েছিলেন। প্রথমটায় কিছুটা জড়তা থাকলেও সহপাঠীদের সেই জড়তা কাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। তারপর থেকে সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। সাহায্য করেছেন শিক্ষকেরাও।

ভাই কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ও দিদি কেকাকে নিয়মিত সাহায্য করতেন। সাফল্যের খবরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘খুব ভাল লাগছে দিদি পাশ করেছে। সব কৃতিত্ব ওঁরই।’’

এবার কেকার সঙ্গেই উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিলেন ভাইঝি দিশা চট্টপাধ্যায়ও। বলছেন, ‘‘আমার রেজাল্ট আশানুরূপ নয়, কিন্তু এই বয়সে পিসি যা করে দেখাল দুঃখ কমে গিয়েছে।’’ তাঁর অন্যান্য সহপাঠী অষ্টম কবিরাজ, অসীম মণ্ডলেরাও খুশি। তাঁরাও বলছেন, ‘‘শিখলাম ইচ্ছে থাকলে সব হয়।’’

জীবনের দৌড়ে নতুন এই সাফল্যে কী বলছেন কেকা?

তিনি অবশ্য এখানেই থামতে চান না। চান, স্নাতক হতে। বললেন, ‘‘এবার সম্ভবত মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক করতে হবে।’’ স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে সুখময়বাবুর সংযোজন, ‘‘এতটা যখন হয়েছে, বাকিটাও ঠিক করে ফেলবে কেকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

keka goswami HS result 2015 school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE