Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাঁধ ভেঙে বালির নীচে চাষের জমি

তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন নদের গতিপথ পাল্টে চাষের জমির ক্ষতি হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, ১২ জুলাই জারি করা নিষেধজ্ঞার তোয়াক্কা না করে, তার পরেও খাদান মালিকেরা যন্ত্র দিয়ে বালি কেটে রাঙামাটি গ্রামের কাছে জড়ো করে রেখেছিলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনামুখী শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৬:৫০
Share: Save:

দামোদরের বাঁধ ভেঙে সোনামুখী ব্লকের ডিহিপাড়া এবং রাধামোহনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাঙামাটি, কেনিটি মানা, নিত্যানন্দপুর, সমিতি মানার দামোদর সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় সদ্য রোয়া আউশ ধান, পটল, বরবটি, কাঁকরোল, শশার খেত বালির তলায় চলে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাঙামাটি গ্রামে দামোদরের চরে গিয়ে গিয়ে দেখা গেল, জল সরে যাওয়ার পরে বালির মধ্যে থেকেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ধান। স্থানীয় চাষি আনান্দ সরকার, নগেন শিকদাররা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন জমি থেকে বালি তোলার। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা এই সময়টায় খরচাপাতি রে আউশ ধান লাগাই। মোটামুটি ৭০ দিনের মাথায় ধান উঠে গেলে জমিতে আলু বুনতে পারি। কিন্তু বাঁধ ভেঙে সব দফারফা হয়ে গেল।’’ রাঙামাটি গ্রামের প্রবীণ সুশান্ত সরকার, বিভূতি বৈদ্যরা বলেন, ‘‘গত ৪০ বছরে এমন বন্যা আমরা দেখিনি।’’ তাঁরা জানান, গ্রাম লাগোয়া বছর ১৫ আগে পঞ্চায়েত থেকে মাটি দিয়ে একশো দিনের কাজে দামোদরের পাড় তৈরি করেছিল। এ বার বর্ষায় জলের তোড়ে সেটি ভেঙে গিয়েছে। কেনিটি মানা গ্রামের নন্দলাল ধাড়া, সুনীল সরকার, মনোরঞ্জন বিশ্বাসদের দাবি, ২০৪ টি পরিবারের প্রায় ২০০ বিঘা চাষজমির পুরোটাই দামোদরের বন্যার বালিতে ডুবে গিয়েছে। মানা সমিতির গৌরাঙ্গ চৌধুরী, ধীরেন মণ্ডল, বিমল সরকাররা বলেন, ‘‘৯০ জন বাসিন্দার মধ্যে আমরা ৬০ জনই চাষ করে সংসার চালাই। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হয়। আশ্বিনে বান এলে মাচা থেকে আনাজ উঠে যায়। এ বার আগেভাগে এসে সর্বনাশ করে দিল।’’

এই অবস্থার জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বাদি খাদানের দিকে আঙুল তুলছেন। তাঁদের কথা, ‘‘রাঙামাটির পাশেই কুলডাঙর গ্রামে বালি খাদানের অনুমতি যখন দেওয়া হল, তখনই সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলাম।’’ তাঁদের দাবি, অনেক বার খাদানে অপরিকল্পিত বালি তোলা নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। তাঁরা আশঙ্কা করেছিলেন নদের গতিপথ পাল্টে চাষের জমির ক্ষতি হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, ১২ জুলাই জারি করা নিষেধজ্ঞার তোয়াক্কা না করে, তার পরেও খাদান মালিকেরা যন্ত্র দিয়ে বালি কেটে রাঙামাটি গ্রামের কাছে জড়ো করে রেখেছিলেন। রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে চুরিয়ে সেই বালি ট্রাকে করে পাচার করা হচ্ছিল।

সোনামুখী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তপন হাজরা বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনও গ্রামবাসী অপরিকল্পিত বালি তোলা নিয়ে অভিযোগ জানাননি। তবু আমরা পুলিশ প্রশাসনকে দেখতে বলছি। কোনও অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না।’’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবারই এনআরইজিএস প্রকল্প নিয়ে মহাকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর)-এর সঙ্গে বৈঠক ছিল। তপনবাবু বলেন, ‘‘আমি জানি প্রচুর জমি বালি ঢাকা আছে। সেই সব জমির সমীক্ষা চলছে। একশো দিনের কাজের মধ্যে সেই বালি তুলে নেওয়া যায় কি না তা দেখা হচ্ছে।’’

সোনামুখী ব্লক কৃষি আধিকারিক দিনেশ সিংহ বলেন, ‘‘আমি নজরে রেখেছি। সরজমিন দেখে, চাষিদের সঙ্গে কথা বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিয়েছি।’’ বিডিও (সোনামুখী) রিজাউল আহমেদ বলেন, ‘‘আমি নিজে ওই অঞ্চল ঘুরে দেখেছি, প্রচুর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কৃষকদের জমি চাষ যোগ্য করে দেওয়ার জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Heavy Rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE