Advertisement
E-Paper

হোমে ফিরেও ভয় কাটেনি লক্ষ্মণের

মাথার পিছন দিক সামান্য ফুলে থাকলেও সিটি স্ক্যান রিপোর্টে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মত মত চিকিৎসকদের। তাই শনিবার সিউড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে হোমে ফিরল লক্ষ্মণ কিস্কু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০২:১৮

মাথার পিছন দিক সামান্য ফুলে থাকলেও সিটি স্ক্যান রিপোর্টে উদ্বেগের কিছু নেই বলে মত মত চিকিৎসকদের। তাই শনিবার সিউড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে হোমে ফিরল লক্ষ্মণ কিস্কু। তবে, হোমে ফিরলেও বছর বারোর ওই পড়ুয়ার মানসিক উদ্বেগ এখনও কাটেনি— দাবি হোম কর্তৃপক্ষের। সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাকলি কুণ্ডু বলছেন, ওর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘা শুকোতে সময় লাগাবে।

বুধবার স্কুল থেকে ফেরার পথে এক পুলিশ আধিকারিকের বাড়িতে ঢুকে গাছ থেকে ফল চুরির চেষ্টা করেছিল সিউড়ির সরকারি হোমের আবাসিক লক্ষ্মণ—এমনই অভিযোগ ওই পুলিশকর্তার পরিবারের। সেই ‘অপরাধে’ বছর বারোর লক্ষ্মণকে মাটিতে আছড়ে ফেলে ও লাঠিপেটা করে মারধর করার অভিযোগ ওঠে দুর্গাপুর আইবি-তে কর্মরত ডিএসপি পদমর্যাদার ওই পুলিশ আধিকারিক গৌর চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার জেলা প্রশাসনের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগও জানান হোম কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নজরে আসতেই প্রশাসন ওই কিশোরকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর নির্দেশে এর পরেই ওই পুলিশ আধিকারিকের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিউড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন জেলা জনশিক্ষা প্রসার আধিকারিক মহম্মদ হাসিমুদ্দিন। প্রশাসন সূত্রের খবর, ঘটনাটি জানতে পেরে জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যের শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। পুলিশ সূত্রের খবর, অন্যায় ভাবে আটকে রাখা, একত্রিত হয়ে মারধর করা-সহ একাধিক ধারায় মামলা হয়েছে। মহম্মদ হাসিমুদ্দিন শনিবার বলেন, ‘‘সোমবার অতিরিক্ত জেলাশাসকের (উন্নয়ন) কাছে গিয়ে তদন্তের বিষয়ে সব জানাব। পদমর্যাদায় তিনিই চেয়ারম্যান।’’

সিউড়ির কলেজ পাড়ায় রয়েছে স্টেট ওয়েলফেয়ার হোম। অর্থনৈতিক ভাবে পিছনের সারিতে থাকা পরিবারগুলি থেকে পড়ুয়ারা এখানে থেকে পড়াশোনা করে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৯৬ জন পড়ুয়া রয়েছে এই হোমে। লক্ষ্মণ ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া।

হোম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এক সহপাঠীর কাছ থেকে লক্ষ্মণকে মারধরের খবর জেনে গৌরবাবুর বাড়িতে তাঁরা কয়েক জন গেলে তাঁদের সঙ্গে পরিবারের লোকজন দুর্ব্যবহার করেন। তাঁরা জানিয়ে দেন, লক্ষ্মণকে তাঁরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। কাকলিদেবীরা শেষে সিউড়ি থানা থেকে লক্ষ্ণণকে যখন উদ্ধার করেন, তখনও সে ভয়ে কাঁটা! কিন্তু, সে মুখ খোলেনি। শেষে বৃহস্পতিবার তার কাছ থেকে অত্যাচারের বর্ণনা শোনেন হোম কর্তৃপক্ষ। কাকলিদেবীর ক্ষোভ, ‘‘কী করে একটা বাচ্চা ছেলের সঙ্গে ওঁরা এত নিষ্ঠুর ব্যবহার করলেন, বুঝতে পারছি না!’’ গৌরবাবুর অবশ্য মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

যদিও জেলা প্রশাসন এই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। হাসিমুদ্দিনের প্রশ্ন, ‘‘উনি (গৌরবাবু) এক জন সরকারি আধিকারিক। তার উপরে তিনি আইনের লোক। কী ভাবে তাঁর পরিবার নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়ে এ ভাবে সরকারি হোমের আবাসিককে মারধর করলেন, ভেবে অবাক হচ্ছি। যদি ছেলেটি অন্যায় করেই থাকে, তা হলে প্রথমেই পুলিশের হাতে ওঁরা তুলে দিলেন না কেন?’’ একই বক্তব্য হোম কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল এ দিন হোমে এসেও জড়তা কাটেনি লক্ষ্মণের। খুব আস্তে সে বলে, ‘‘ওরা সেদিন খুব মেরেছিল। এমন ভুল আর করব না।’’

Police Lynched
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy