হাতে-কলমে: শিক্ষা সফরে পলিটেকনিক কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনার পাট চুকিয়ে চাকরির সন্ধান নয়, বরং নিজেরাই তাঁরা উদ্যোগপতি হওয়ার চেষ্টা করুক। বিষ্ণুপুরের একটি পলিটেকনিক কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে স্বাবলম্বী হওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে এ বার এলাকার বিভিন্ন কারখানায় নিয়ে গিয়ে সেই সব কাজের সুলুক সন্ধান দেওয়া হল।
বিষ্ণুপুরের শিরোমণিপুরের ওই বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কলেজের সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন, কম্পিউটার সায়েন্স ও টেকনোলজি বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তাঁরা বেরিয়েছিলেন। বিষ্ণুপুর শহরের বালুচরি, ফ্লোর টাইলস, শঙ্খ শিল্প, মোটরবাইক বা স্কুটারের সার্ভিসিং, কাঠের আসবাবপত্র কী ভাবে তৈরি হয়, বাজার কেমন, কী ভাবে উৎকর্ষতা বাড়িয়ে আরও বাজার ধরা যাবে, বর্তমানে কিসের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে— এ সব খোলা মনে ছাত্রছাত্রীরা শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চান। কলেজের চেয়ারম্যান সত্যসাধন দত্ত বলেন, ‘‘পড়া শেষে সবাই বাঁধা বেতনের চাকরি পাবেন, সে নিশ্চয়তা কোথায়? কিন্তু নিজেরা শিল্প উদ্যোগী হলে, ছোট ছোট শিল্পতালুক গড়ে তুলতে পারলে মন্দ নয়। সেখানে বহু লোকের কর্মসংস্থানও হবে। সেই স্বপ্নটাই ছাত্রাবস্থায় ওঁদের মধ্যে তৈরি করতে এই প্রয়াস।’’
পলিটেকনিক কলেজের মেকানিক্যালের পড়ুয়া সুদীপ কাইতি, ইলেকট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশনের অঙ্কিতা চৌধুরী, কম্পিউটার সায়েন্স ও টেকনোলজির বুদ্ধদেব কুণ্ডুদের কথায়, ‘‘সত্যি বলতে আমাদের এই শিল্পগুলো এবং এর ব্যবসা সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। এখন বুঝতে পারছি, ঠিক ভাবে কাজ করতে পারলে, এবং বাজার ধরা গেলে উদ্যোগপতিদের রোজগার অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের বেতনকেও লজ্জা দেবে।’’
চাহিদা অনুযায়ী শিল্প বাছাই করতে পারলে আখেরে যে লাভের সম্ভাবনা রয়েছে তা মানছেন বিষ্ণুপুরের অনেক উদ্যোগপতিই। বিষ্ণুপুরে ফ্লোর টাইলস তৈরি করে ব্যবসা করেন বিপ্লব নন্দী। তিনি বলেন, ‘‘চেষ্টা করলে আমি একটা সরকারি চাকরি হয়তো পেতাম। কিন্তু নতুন কিছু করা আরও পাঁচটা মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার মতো আনন্দ দশটা–পাঁচটার চাকরিতে নেই। ওই ছাত্রছাত্রীদের কাছে বড় সুযোগ, পড়তে পড়তে তাঁরা সরাসরি অভিজ্ঞতা নিতে পারছেন। পথ চলতে বিভিন্ন বাধাগুলো এখনই তাঁরা জানতে পারছেন। ভবিষ্যতের উদ্যোগপতি হওয়ার এর থেকে ভাল উপায় আর কী আছে?’’ বিষ্ণুপুরের আরেক উদ্যোগপতি বালুচরি ব্যবসায়ী ফাল্গুনী দাস নিজেও পলিটেকনিকের ছাত্র ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘চাকরি করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সাফল্য পেয়েছি।’’
ওই বেসরকারি কলেজের রেজিস্ট্রার কৌশিক পাল বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা ভবিষ্যৎ জীবনে স্বাবলম্বী হলে দেশ এগিয়ে যাবে। সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy