Advertisement
০৬ মে ২০২৪

অল্প বৃষ্টিতে বাড়ল অস্বস্তি

কালো মেঘে আঁধার হতে দেখে সবাই ভেবেছিলেন এ বার একটু স্বস্তি মিলবে। বিগত বেশ কিছু দিন ধরে দাবদাহে হাঁসফাস করছিলেন জেলার বাসিন্দারা। হা পিত্যেশ করে সবাই বসেছিলেন, কবে বৃষ্টি হবে সেই আশায়। সোমবার ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হল বটে, কিন্তু তাতে অস্বস্তি বাড়ল বই কমল না। বৃষ্টি থামতেই প্যাচপ্যাচে গরমে ঘেমে নেয়ে একসা হলেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারা।

পুরুলিয়ার চাকোলতোড় গ্রামের শ্যাকড়া বাঁধে জল শেষ। চলছে পলি তোলার কাজ।  —নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়ার চাকোলতোড় গ্রামের শ্যাকড়া বাঁধে জল শেষ। চলছে পলি তোলার কাজ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

কালো মেঘে আঁধার হতে দেখে সবাই ভেবেছিলেন এ বার একটু স্বস্তি মিলবে। বিগত বেশ কিছু দিন ধরে দাবদাহে হাঁসফাস করছিলেন জেলার বাসিন্দারা। হা পিত্যেশ করে সবাই বসেছিলেন, কবে বৃষ্টি হবে সেই আশায়। সোমবার ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হল বটে, কিন্তু তাতে অস্বস্তি বাড়ল বই কমল না। বৃষ্টি থামতেই প্যাচপ্যাচে গরমে ঘেমে নেয়ে একসা হলেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারা।

সোমবার সকাল থেকে জেলার আকাশের ছবিটা ছিল অন্য দিনের তুলনায় একেবারে আলাদা। আকাশে মেঘ থাকায় রোদের রোদের দাপট ছিল কিছুটা কম। তাপমাত্রাও ঘোরা ফেরা করেছে ৪০ ডিগ্রি আশেপাশে। শনিবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি। রবিবার ৪২.৮ ডিগ্রি। সোমবার তা নেমে এসে দাঁড়ায় ৩৭.৬ তে। ছিল না গরম বাতাসও। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা দাবদাহের থেকে কিছুটা রেহাই মিলেছিল। বিকেলে ভারী বৃষ্টি হবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই।

বিকেল চারটের পর একটু একটু করে কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যেতে শুরু করে। শুরু হয় বাজ পড়া। সাড়ে চারটের পর ঝেঁপে বৃষ্টি আসে। বাতাসে তখন সোঁদা মাটির গন্ধ। প্রথম বৃষ্টির জল গায়ে লাগাতে অনেকেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু আর বৃষ্টিভেজা হয়ে ওঠে না। আশায় ছাই দিয়ে, এক পশলা ভিজিয়ে তাড়াহুড়ো করে বিদায় নেয় বৃষ্টি। দেখতে দেখতে মেঘ কেটে যায়। ফের রোদ। আর এই সুযোগে এক লাফে আর্দ্রতা বেড়ে যায় অনেকটাই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাবদাহ চলছিল জেলায়। তবে শুকনো গরমে বিশেষ ঘাম হচ্ছিল না। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমান রবিবার ছিল ৫৭ শতাংশ। সোমবার বৃষ্টির পর তা ৮০ শতাংশে গিয়ে ঠেকে। ফলে তাপমাত্রা কমলেও অস্বস্তি বেড়ে যায় অনেকটাই। অনেকেই বলছেন, ‘‘এমন বৃষ্টির চেয়ে শুকনো গরমও ভাল ছিল।’’

আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে এ দিনের মোট বৃষ্টির পরিমান ২.৪ মিলিমিটার। বস্তুত, এ বছর এপ্রিলে কার্যত বৃষ্টিই হয়নি। গত ৭ থেকে ১০ তারিখ ছিঁটেফোঁটা যা বৃষ্টি হয়ছে তার হিসেব আবহাওয়া দফতরের যন্ত্রে মাপারও যোগ্য ছিল না। সেই দিক থেকে সোমবার বেশ কিছুটা বেশিই বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, গত বছর এপ্রিলেই বৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ১০০ মিলিমিটার। তাপমাত্রার পারদও ঘোরাফেরা করেছে ৪১ ডিগ্রির আশেপাশে।

এ বছর অতিরিক্ত গরমে ক্ষতির মুখে পড়ছে গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষ। এই মরসুমে বাঁকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় লাউ, করলা, কুমড়ো, ঢেঁড়শ, বেগুন, বরবটি প্রভৃতি চাষ হয়। যে সব এলাকায় এই চাষ হয় সেখানে সেচের সুবিধা থাকলেও এ বছর তীব্র গরমে গাছ ও ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান জেলার উপ-কৃষি আধিকারিক (প্রশাসন) আশিস বেরা। তিনি বলেন, “গাছের শিকড়ে সেচের মাধ্যমে জল দেওয়া হলেও গাছের পাতা প্রবল গরমে কুঁকড়ে যাচ্ছে। ফসলেরও একই দশা।’’ এই পরিস্থিতিতে সোমবারের অল্প বৃষ্টি চাষের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সুবিধা করেছে বলে তিনি জানান। তবে ভারী বৃষ্টি না হওয়া অবধি পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়াও যে সম্ভব নয়, সে কথা কার্যত মেনে নিয়েছেন আশিসবাবু।

গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে যে ভারী বৃষ্টি ছাড়া গতি নেই তা বেশ বুঝেছেন জেলার বাসিন্দারাও। সন্ধ্যের দিকে ফের বাঁকুড়ার আকাশে বিক্ষিপ্ত ভাবে মেঘ জমতে দেখা গিয়েছে। সেই মেঘে মেঘে বৃষ্টি এসে অস্বস্তি ধুয়ে মুছে দেয় কী না তারই পথ চেয়ে রয়েছেন সবাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rain relief
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE