Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ব্যাঙ্ক বন্ধ, লাইন বাড়ল ডাকঘরে

বাতিল নোট বদল বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকাও তোলা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আতান্তরে পড়ে গিয়েছেন অনেকেই। এ দিন মাসের শেষ শনিবার হিসেবে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় তাঁদের আরও দুর্ভোগে পড়তে হল। অনেকে আবার এটিএমে খোঁজ করতে গিয়েও টাকা পাননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও মানবাজার শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১১
Share: Save:

বাতিল নোট বদল বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টে জমা করা টাকাও তোলা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে আতান্তরে পড়ে গিয়েছেন অনেকেই। এ দিন মাসের শেষ শনিবার হিসেবে ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় তাঁদের আরও দুর্ভোগে পড়তে হল। অনেকে আবার এটিএমে খোঁজ করতে গিয়েও টাকা পাননি।

সকাল সাড়ে আটটা। মানবাজার থানার সামনে স্টেট ব্যাঙ্কের সামনে তখনই লাইন পড়ে গিয়েছিল। লাইনে জনা কুড়ি লোকের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন বোরো থানার যমুনাবাঁধ গ্রামের যমুনা বাস্কে। খানিক পরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনের কাছে খবর আসে, এ দিন তো মাসের শেষ শনিবার, ব্যাঙ্ক বন্ধ। লাইন ভেঙে গেল। মুখ আঁধার হয়ে গেল যমুনাদেবীর। তিনি শুকনো গলায় বলেন, ‘‘আমার এক ভাইঝি বোকারোর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছে। ওর চিকিৎসার খরচের টাকা দরকার। সেই জন্য ভোরে বাস ধরে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি। ব্যাঙ্ক খুলবে না জানলে অন্য কোথাও টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করতাম।’’ বোরো থানারই ভূতাডি গ্রামের পেশায় চাষি অমূল্য সিং ওই লাইনে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে বাইরে পড়ে। তার এখনও এটিএম কার্ড হয়নি। এ দিকে বড় নোট বাতিল হওয়ার পর থেকেই কয়েকদিন ধরে ব্যাঙ্কে বিরাট লম্বা লাইন পড়ছিল। ভেবেছিলাম এ দিন শনিবার বলে হয়তো লাইন কম হবে। সে জন্য সকালেই এসেছিলাম। কিন্তু এসেও তো কিছু লাভ হল না।’’

বাঁকুড়া জেলাতেও এ দিন টাকা জন্য মানুষকে ঘোরাঘুরি করে দেখা গিয়েছে। অনেকে এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে ‘টাকা নেই’ লেখা বোর্ড ঝুলতে দেখে হতাশ হন। কেউ কেউ আবার এটিএমে একটা ২০০০ টাকার গোলাপি নোট হাতে শুকনো মুখে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, ‘‘এত বড় নোট আমাকে কে ভাঙিয়ে দেবে?’’

বিকনার বাসিন্দা মানিক মল্ল বলেন, “নোট বাতিল হওয়ার পর থেকেই এটিএম খোলেনি। ব্যাঙ্ক থেকে দু’হাজার টাকার একটি করে নোট দিচ্ছে। ওই টাকা ভাঙাতে অসুবিধার মধ্যে পড়ছি।” ওন্দার শানতোড়ের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত পাত্রের কথায়, “সারা সপ্তাহ ব্যাঙ্কে লাইন দিয়ে মাত্র চার হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। এই টাকা সংসারের খরচেই বেরিয়ে যাবে। বাকি খরচ কী ভাবে সারব জানি না।”

এ দিন অবশ্য খোলাছিল ডাকঘরগুলি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের বহু ডাকঘরে এ দিনও টাকার জোগান ছিল না। ফলে লোকজনকে টাকা তুলতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

বাঁকুড়ার কেশিয়াকোল ডাকঘরে গিয়ে দেখা গিয়েছে, টাকা তুলতে আসা মানুষের লম্বা লাইন এ দিনও ছিল। বহু প্রবীণ মানুষ বার্ধক্য ভাতা তুলতে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে টাকার অভাবে এ দিন ৫২ জন প্রবীণকে ভাতার টাকা দিতে পেরেছে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ। অন্যান্য গ্রাহকেরাও ছয় হাজার টাকার বেশি তুলতে পারেননি। এতে ক্ষোভ ছড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। কেশিয়াকোলের বাসিন্দা খোকন মণ্ডল অভিযোগ করেন, “নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পর থেকে প্রথম কয়েক দিন এই ডাকঘরে টাকা পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে টাকা দেওয়া শুরু হলেও আমরা যথেষ্ট পরিমাণে টাকা তুলতে পারছি না।”

এ দিকে, চাষের ভরা মরসুমে পর্যাপ্ত টাকার সঙ্কটে কৃষকদের হয়রানি কমছে না। বাঁকুড়ার সেন্দড়া গ্রামের বাসিন্দা ভলু বাউরিকে আক্ষেপ করতে শোনা গেল, “টাকার অভাবে জমির ধান কাটাতে লোক লাগাতে পারছি না। আলু চাষ আ কবে করব? কেন্দ্র যদি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই ব্যাঙ্কগুলিতে পর্যাপ্ত টাকার জোগান দিয়ে রাখত, তাহলে এই ক্ষতির মুখে আমাদের পড়তে হতো না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank Post-office
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE