Advertisement
০৮ মে ২০২৪

রূপাদের স্বপ্নপূরণ করল সংস্কৃতি বাহিনী

গ্রামের লাইব্রেরি থেকে ‘পথের পাঁচালি’ শেষ করা পরেই ওই সে জানতে পেরেছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের উপন্যাস ‘অপরাজিত’র কথা। কিন্তু, লাইব্রেরিতে সে বই মেলেনি। বছর পাঁচেক আগে বাবার সঙ্গে বোলপুর বইমেলায় গিয়ে বটি কিনে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। সেটি পড়ার পরে অপুর ছেলেকে নিয়ে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাজল’ উপন্যাসের খোঁজ পেয়েছিল সে।

হেসে কুটি। শুক্রবার লাভপুর বইমেলায় খুদে ক্রেতা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

হেসে কুটি। শুক্রবার লাভপুর বইমেলায় খুদে ক্রেতা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২১
Share: Save:

গ্রামের লাইব্রেরি থেকে ‘পথের পাঁচালি’ শেষ করা পরেই ওই সে জানতে পেরেছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের উপন্যাস ‘অপরাজিত’র কথা। কিন্তু, লাইব্রেরিতে সে বই মেলেনি। বছর পাঁচেক আগে বাবার সঙ্গে বোলপুর বইমেলায় গিয়ে বটি কিনে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল। সেটি পড়ার পরে অপুর ছেলেকে নিয়ে তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘কাজল’ উপন্যাসের খোঁজ পেয়েছিল সে। সে বারও স্থানীয় লাব্রেরিতে না থাকায় বইটি আর পড়া হয়ে ওঠেনি তার। দূর শহরের বইমেলাতেও তার আর যাওয়া হয়নি। তাই স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রী, লাভপুরের রূপা সুতারের আক্ষেপ ছিল, ‘‘আমাদেরও যদি একটা বইমেলা হত! এত দিনে নিশ্চয় কাজল বইটা পড়া হয়ে যেত।’’

একই আক্ষেপ ছিল স্থানীয় ভাটরা গ্রামের মানস মণ্ডলেরও। সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ পড়ার পরে সে জেনেছিল অনিমেষের বাল্যজীবনের কাহিনী ‘উত্তরাধিকারে’র কথা। বন্ধুদের সঙ্গে সিউড়ি বইমেলায় গিয়ে বইটি কিনে পড়ার পরে সে আবার জানতে পারে অনিমেষের ছেলে অর্কর কাহিনী নিয়ে লেখা ‘কালপুরুষে’র কথা। কিন্তু, বইটি তার আজও পড়া হয়নি।

রূপা-মানসদের এত দিনের পুরনো এই আক্ষেপই এ বার ঘুচেছে। এই প্রথম স্থানীয় সংস্কৃতি বাহিনীর উদ্যোগে এবং লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহযগিতায় শুরু হয়েছে চার দিনের ‘তারাশঙ্কর বইমেলা’। বৃহস্পতিবার ওই মেলার উদ্বোধন করেন সাহিত্যিক অমর মিত্র। হাজির ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) বিধান রায়, স্থানীয় বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাবেরিকা গুঁই প্রমুখ। ১৫টি স্টলের পাশাপাশি চার দিনই রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বভাবতই বইমেলা ঘিরে চরম সাড়া পড়েছে স্থানীয় জনমানসে। মানস এবং রূপারা বলছেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ দিনের আক্ষেপ ঘুচল। পচ্ছন্দের বই তো পেয়েইছি, কিনেছি নতুন বইও!’’

প্রসঙ্গত, লাভপুরে বইমেলার দাবি দীর্ঘ দিনের। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘বিশ্বকোষ’ প্রণেতা রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায়, ভবদেব ভট্ট-সহ বহু বিশিষ্ট সাহিত্যকের জন্ম এবং সাধনক্ষেত্র এই লাভপুর। অথচ সেখানেই এত দিন কোনও বইমেলা হয়নি। লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি প্রণব রায়, লোকশিল্পী কার্তিক দাস বাউলরা বলেন, ‘‘এলাকার কবি-সাহিত্যিকদের বই কিনতেও আমাদের বাইরের বইমেলা যেতে হয়েছে। আর আমাদের পচ্ছন্দের বইয়ের জন্য অন্যত্র ছুটতে হবে না।’’ সংস্কৃতি বাহিনীর সম্পাদক উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতি দিন অসংখ্য বইপ্রেমী মানুষ বইমেলায় আসছেন। ‘‘তা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছি। শ্রম সার্থক হয়েছে মনে হয়েছে।’’—বলছেন উজ্জ্বলবাবু। অন্য দিকে, বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, বইপ্রেমী মানুষের দীর্ঘ দিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বই সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করতেই এই আয়োজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE