Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সই না করলে তেপান্তরে পাঠাব: মনিরুল

মনিরুল আছেন মনিরুলেই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিন জনকে ‘পায়ের তল দিয়ে পিষে মারা’র কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে শিরোনামে এসেছেন। আর এ বার পুরভোটের আগে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের মুখে শোনা গেল সরকারি অফিসারকে ‘তেপান্তরের মাঠে’ পাঠানোর হুমকি! সেটা ছিল সাঁইথিয়ায়। এ বারের হুমকিও বীরভূমের সেই পুর-শহরেই।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

মনিরুল আছেন মনিরুলেই।

পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিন জনকে ‘পায়ের তল দিয়ে পিষে মারা’র কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে শিরোনামে এসেছেন। আর এ বার পুরভোটের আগে লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের মুখে শোনা গেল সরকারি অফিসারকে ‘তেপান্তরের মাঠে’ পাঠানোর হুমকি! সেটা ছিল সাঁইথিয়ায়। এ বারের হুমকিও বীরভূমের সেই পুর-শহরেই।

এ হেন হুমকির কারণ কী?

জেলা তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বার সাঁইথিয়ায় পুরনির্বাচনের দায়িত্বে আছেন শাসকদলের এই দাপুটে বিধায়ক। বুধবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করার পরে সাঁইথিয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত নিহারিপট্টির এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মনিরুল বলেন, ‘‘আপনারা একটা কবরস্থান ঘেরা চাইছিলেন। আমি বলছি, যতগুলো কবরস্থান আছে, সবগুলো ঘিরুন। বিএলএলআরও (ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসার)-এর কাছ থেকে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে নিন। একটা ফর্ম পাবেন ব্লক অফিসে। যদি ফর্মটা আপনারা না জোগাড় করতে পারেন, আমি দেবাশিসকে (স্থানীয় তৃণমূল নেতা) বলে দিচ্ছি। কিছু ফর্ম দিয়ে পাঠাচ্ছি। সেই ফর্মটা ফিল আপ করুন। বিএলএলআরও যদি সই না করে, আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানান। সেই বিএলএলআরও-কে তেপান্তরের মাঠে পাঠাতে আমার তিন মিনিট সময় লাগবে না!’’

মনিরুলের মুখে তেপান্তরের মাঠ শুনে বীরভূমের অনেক প্রবীণেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ‘ছাতিফাটার মাঠ’-এর কথা। মনিরুল যে এলাকার বিধায়ক, সেই লাভপুরেরই ভূমিপুত্র তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ডাইনি’ গল্পে উল্লেখ রয়েছে ওই মাঠের কথা। আজ সে মাঠ নেই। কিন্তু এক সময় ছিল। লাভপুরের বুকে রুক্ষ-বিস্তীর্ণ সে প্রান্তর এলাকা ‘ছাতিফাটার মাঠ’ হিসেবেই লোকমুখে পরিচিত ছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির সদ্য নিযুক্ত আহ্বায়ক অর্জুন সাহার কটাক্ষ, ‘‘মনিরুল সাহেব সেই ছাতিফাটার মাঠের কথাই বলতে চাননি তো? সেটা তাঁরই খোলসা করা উচিত। আসলে, তিনি হুমকি দিয়েছেন, তাঁর কথামতো কাজ না হলে ওই মাঠের মতোই কোনও কঠিন জায়গায় বদলি করে দেবেন ওই অফিসারকে।’’

মনিরুলের বক্তৃতার বিষয়ে বিজেপির তরফে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। দলের সাঁইথিয়া শহর সভাপতি কাশীনাথ মণ্ডল বৃহস্পতিবার দুপুরে ই-মেলের মাধ্যমে কমিশনের কাছে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের ওই অভিযোগ জানিয়েছেন। কাশীনাথবাবু বলেন, ‘‘সাঁইথিয়ার ভারপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা মনিরুল ইসলাম ভোটারদের প্রলোভন ও হুমকি দিয়ে চলেছেন। বুধবার রাতের মন্তব্যই তার প্রমাণ। আমরা চাই, নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। কমিশন কোনও ব্যবস্থা না নিলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিস্তারিত অভিযোগ জানানো হবে।’’

মনিরুল নিজে অবশ্য আগেও তাঁর দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মতোই বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে লাভপুরে নবগ্রামে মনিরুলের বাড়িতে খুন হয়েছিলেন সিপিএম সমথর্ক তিন ভাই। ওই হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্তও বটে। যদিও পুলিশের জমা করা চার্জশিটে এই বিধায়কের নাম নেই। বহু দিন ধরেই মামলাটি ঠান্ডা ঘরে চলে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই সাঁইথিয়ার সভাতেই ওই হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টানেন মনিরুল। প্রকাশ্য সভায় বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘আমি লাভপুরের বিধায়ক পায়ের তল দিয়ে, মাইয়াটার উপর যারা অত্যাচার করেছিল, তাদের তিন জনকে পায়ের তল দিয়ে পিষে মেরেছি!’’ কোন মেয়ের উপরে অত্যাচারের প্রসঙ্গ তিনি তুলেছেন, তা অবশ্য কখনও খোলসা করেননি মনিরুল। তাঁর মন্তব্য নিয়ে অবশ্য রাজ্য রাজনীতিতে হইচই বেধেছিল।

স্থানীয় সূত্রের খবর, নিহারিপট্টি থেকে কিছুটা দূরে পরিহারপুরের কবরস্থান ঘেরার দাবি অনেক দিন ধরেই তুলছেন এলাকাবাসী। সাঁইথিয়ার বিএলএলআরও সুজিতকুমার বিশ্বাসও মেনে নিয়েছেন সে কথা। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি সবে আড়াই মাস হল এসেছি। কবরস্থান ঘেরার জন্য স্থানীয় ভাবে এবং ব্লক অফিস থেকে কিছু আবেদন আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এই অনুমোদন আমি সরাসরি দিতে পারি না। তাই কর্তৃপক্ষকে আবেদনপত্র পাঠিয়েছি। তার এখনও উত্তর পাইনি। বিডিও সাহেবকেও আবেদনপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ মনিরুলের বক্তব্য সম্পর্কে অবশ্য তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাই কিছু বলতেও পারব না।’’

কী বলছেন মনিরুল নিজে?

ওই বক্তৃতার প্রসঙ্গ তুলতে বেজায় রুষ্ট হয়েছেন তিনি। যদিও তাঁর দাবি, ‘‘সংবাদমাধ্যম যে ভাবে দেখাতে চাইছে, আমি ও ভাবে বলিনি। মাস ছয়েক আগে এলাকার লোকেরা ওই কবরস্থান ঘেরার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, বিএলএলআরও অনুমোদন দেননি। তাই, ওঁদের বলেছি, এর পরেও অনুমোদন না পেলে আমাকে জানাতে।’’ আর কোনও প্রশ্ন করার সুযোগই দেননি বিধায়ক। ফোন কেটে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE