Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হার বয়সের, পাহাড়ে মিলন

শীত পড়তেই প্রতি বছর পাহাড়ে চড়া শিখতে ভিড় জমে রঘুনাথপুরের উপকণ্ঠে, জয়চণ্ডী পাহাড়ে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আসতে শুরু করে বিভিন্ন পর্বতারোহী সংস্থাগুলি।

হুইল চেয়ারে বসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মিলনবাবু। নিজস্ব চিত্র

হুইল চেয়ারে বসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মিলনবাবু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

বয়স প্রায় আশি ছুঁয়েছে। কিন্তু উৎসাহে খামতি নেই। নিজে এখন আর পাহাড়ে চড়েন না বটে, কিন্তু কচিকাঁচাদের পাহাড়ের প্রতি টানটা ছোট বয়স থেকেই তৈরি করে দিতে প্রতি বছর জয়চণ্ডী পাহাড়ে ছুটে আসেন আসানসোলের শ্রীপল্লির বাসিন্দা মিলন সেনগুপ্ত। এ বারও ব্যতিক্রম হয়নি। নিজের হাতে গড়া ‘পিকার্স আসানসোল’-এর সদস্য ও তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিয়ে চার দিনের শিবির করলেন তাঁরা। কনকনে ঠান্ডায়, পাহাড়ের কোলে, খোলা মাঠে চার দিন ধরে থাকলেন শিবিরে। হাতে ধরে খুদে শিক্ষার্থীদের শেখালেন পাহাড়ে চড়ার প্রাথমিক কৌশল। জানালেন, ইচ্ছা ও ভালোবাসা থাকলে বয়স কোনও বাধা হতে পারে না।

শীত পড়তেই প্রতি বছর পাহাড়ে চড়া শিখতে ভিড় জমে রঘুনাথপুরের উপকণ্ঠে, জয়চণ্ডী পাহাড়ে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে আসতে শুরু করে বিভিন্ন পর্বতারোহী সংস্থাগুলি। জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ। রঘুনাথপুর পুরসভার হিসেব মতো, এখনও পর্যন্ত গোটা বারো পর্বতারোহী সংস্থা জয়চণ্ডী পাহাড়ে শিবির করেছে। তার মধ্যে পেশায় হোমিওপ্যাথ, ৭৯ বছরের মিলন সেনের তৈরি করা পিকার্স আসানসোল কিছুটা অন্য রকমের— বলছেন অনেকেই। শুধু ছোট ছেলেমেয়ে নয়, মহিলাদের পাহাড়ে চড়ায় আগ্রহী করে তুলতে তাঁদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেন সংস্থাটির এক কর্মকর্তা পূর্ণেন্দু দে। পেশায় ব্যবসায়ী, আসানসোলের আপার চেলিডাঙার বাসিন্দা পূর্ণেন্দুবাবু জানান, এই বছর জয়চণ্ডী পাহাড়ে তাঁদের শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন ৩১০ জন শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ৯৬ জন মহিলা। দশ জন শিশু-কিশোর। সব থেকে ছোট শিক্ষার্থীর বয়স মোটে আট বছর।

আগে বিভিন্ন পর্বতারোহণে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়েছিলেন মিলনবাবু। ১৯৮৪ সালে তৈরি করেন এই সংস্থাটি। জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে জনা কুড়ি-তিরিশ জনকে নিয়ে জয়চণ্ডীতে এসে পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। পূ্র্ণেন্দুবাবু জানান, সংস্থা তৈরি হওয়ার পরেই প্রতি বছর তাঁরা নিয়ম করে জয়চণ্ডী পাহাড়ে আসেন। আগে নিজেও পাহাড়ে চড়তেন মিলনবাবু। এখন বয়সের জন্য কড়া বারণ রয়েছে। পূর্ণেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘মিলনবাবু তবুও জেদ ধরেন, খুদেদের নিয়ে নিজেই পাহাড়ে চড়বেন বলে। আমরাই কোনও ভাবে থামাই।’’ তবে পাহাড়ে চড়ার খুঁটিনাটি কৌশলের সবটাই এখনও তিনিই হাতে ধরে শেখান খুদেদের।

পাহাড়ের প্রতি টানটা কিছুটা পারিবারিকও বটে—ফোনে সেই সমস্ত কথাই বলছিলেন মিলনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘পাহাড় যেমন অনেক কিছু দিয়েছে, তেমনই নিয়েছেও।’’ জানালেন, পাহাড়ের প্রতি টান ছিল তাঁর ভাই অমলেশ সেনগুপ্তেরও। ১৯৮২ সালে নন্দাদেবীতে অভিযানে গিয়ে নিঁখোজ হয়ে যান অমলেশ। এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেই যন্ত্রণা তাঁকে পাহাড়ের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারেনি। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থার বহু সদস্য মিলনবাবুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হিমাচলপ্রদেশ, গড়োয়াল, চন্দ্রভাগায় অভিযান করেছে।”

পাহাড়ে চড়ার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য জয়চণ্ডী আদর্শ বলে জানাচ্ছেন মিলনবাবুরা। একই কথা বলছেন আসানসোলের অন্য তিনটি পর্বতারোহী সংস্থা ‘আরোহণ মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাব’, ‘পিক টু পিক’ এবং ‘মৈনাক এক্সপ্লোরার’-এর কঙ্কন রায়, ষষ্ঠী মণ্ডল ও শ্রাবণী চন্দ্ররা। তাদের কথায়, ‘‘জয়চণ্ডীর ঢাল আনকোরা শিক্ষার্থীদের পাহাড়ে চড়ার কৌশল শেখানোর জন্য একেবারে আর্দশ।” রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দিনে দিনে জয়চণ্ডীতে পর্বতারোহী সংস্থার ভিড় বাড়ছে। আমরা পুরসভার পক্ষ থেকে পানীয় জল আর শৌচালয়ের ব্যবস্থা করে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE