পুরভোটের আগে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের বিতর্কে জড়িয়েছিল তৃণমূল বোর্ড। এ বার নতুন বোর্ডও ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে বিতর্কে জড়াল।
রঘুনাথপুর পুরসভার ১৭টি পদে স্থায়ী কর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে। সিপিএম, এসইউসি, কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধী দলগুলি একজোটে তৃণমূল পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষন হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই বলে অভিযোগ তুলে সম্প্রতি নিয়োগ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রদীপ দাস। নিয়োগে গোলমাল হচ্ছে হচ্ছে বলে দলের অন্দরেই সরব তৃণমূলেরই একটা বড় অংশের নেতা-কর্মীরা। তবে সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘সমস্ত নিয়ম মেনে স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ক্ষমতা থাকলে বিরোধীরা প্রমাণ করে দেখাক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, ক্লার্ক, অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ক্যাশিয়ার, পিওন, পাম্প অপারেটারের মতো ১৭টি স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য আজ রবিবার লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই নিয়োগ নিয়ে সরাসরি বেনিয়ম ও স্বজনপোষনের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। অভিযোগের তির মূলত পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে। বিরোধীদের অভিযোগ, পরীক্ষার আগেই ওই পদগুলিতে কাদের চাকরি দেওয়া হবে, সেই নামের তালিকা স্থির হয়ে গিয়েছে। এতে লক্ষাধিক টাকার লেনদেন হয়েছে। এমনকী শহরের ‘সিটিজেন ফোরাম’ নামের একটি সংগঠনের তরফে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক ও পুরসভার কাছে কারা চাকরি পেতে পারেন, এই রকম সম্ভাব্য কয়েকজনের নামের তালিকা ও কোন পদে তাঁদের নিয়োগ করা হবে তার বিবরণ দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর পুরসভায় স্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। পুরসভাকে তাই নিয়ম, নীতি মেনে কর্মী নিয়োগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
যদিও বিরোধীদের দাবি, প্রশাসনের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই পরীক্ষাটিকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করতে চলেছে তৃণমূলের পুরবোর্ড। সম্প্রতি কর্মী নিয়োগ নিয়ে বেনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে পুরপ্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিতে যায় এসইউসি। অভিযোগ পুরপ্রধান স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করে পুলিশ ডেকে তাঁদের সরিয়ে দেন। এসইউসির রঘুনাথপুর শহরের নেতা লক্ষ্মীনারায়ণ সিংহের দাবি, ‘‘আমাদের কাছে নির্দিষ্ট খবর রয়েছে পরীক্ষার আগেই চাকরি দেওয়ার জন্য ১৭ জনের নাম ঠিক করে ফেলেছেন পুরপ্রধান। তাঁদের অনেকেই শহরের তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ঠ, আত্মীয়।” এসইউসি-র দাবি, ‘‘পুরসভার অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার জন্য আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম। সম্প্রতি আদালত নির্দেশ দিয়েছে যারা পুরসভায় ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করছেন নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু পুরপ্রধান সেই নির্দেশ মানছেন না।”
নগদ টাকার লেনদেনের ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের রঘুনাথপুর শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক লোকনাথ হালদারের অভিযোগ, ‘‘কী ভাবে নিয়োগ হবে সে ব্যাপারে নিয়োগ কমিটিতে কোনও আলোচনাই হয়নি। একতরফা ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুরপ্রধান। প্রতিবাদে পুরসভায় আমাদের বিরোধী দলনেতা প্রদীপ দাস ওই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এখানে নিয়োগের নামে প্রহসন হতে যাচ্ছে।প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছি।” প্রদীপবাবুর দাবি, ‘‘তৃণমূলের নেতাদের বেশ কয়েকজন আত্মীয় চাকরি পাচ্ছেন। এ ছাড়াও নিয়োগে লক্ষাধিক টাকার লেনদেন হচ্ছে। ফলে নিয়োগ কমিটিতে আমি থাকলে তার দায়ভার আমাদের দলের উপরে বর্তাবে। তাই দলের নির্দেশে ওই কমিটি থেকে আমি পদত্যাগ করেছি।’’ নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে শনিবার বিকেলে শহরে মিছিল করে ডিওয়াইএফ।
পুরপ্রধানের দলের মধ্যেও কিছু নেতা-কর্মী বিরোধীদের সুরেই গলা মিলিয়েছেন। তাঁদেরও অভিযোগ, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি, গত নির্বাচনে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড গঠনের স্লোগান সামনে রেখেই নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বোর্ড গঠনের কয়েকমাসের মধ্যেই যে ভাবে পুরসভায় কর্মী নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে তা কখনই কাঙ্খিত নয়। দলের শহর কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার কথায়, ‘‘পুরসভায় স্থায়ী কর্মী পদে নিয়োগ নিয়ে লক্ষাধিক টাকার লেনদেন চলছে। ঘটনাটি এখন আর চাপা নেই। এই অবস্থায় নির্বাচনের আগে দুর্নীতিমুক্ত পুরবোর্ড গড়ার স্লোগান প্রহসনে পরিণত হয়েছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার যথেষ্ঠ সম্ভবনা রয়েছে।” দলীয় সূত্রের খবর, পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে রঘুনাথপুরের দলীয় বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে। তবে বিধায়ক নিয়োগ নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি দাবি করেন, ‘‘নিয়োগের পরীক্ষার আগেই ভিত্তিহীন ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।” তবে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হলে তা কখনই বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy