শহরের আনাচে কানাচে জমে উঠছে আবর্জনা। কিন্তু সে সব তুলে ডাঁই করার জায়গা নেই। এমনই অবস্থায় পড়ে এ বার আবর্জনা ফেলতে ভাড়ায় জমি খুঁজছে পুরুলিয়া পুরসভা।
সম্প্রতি সাহেববাঁধ লাগোয়া সাউথ লেক রোডে রাস্তার পাশে জমে থাকা আবর্জনায় আচমকা আগুন ধরে। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের ট্রান্সফর্মারের তার জ্বলতে থাকে। এ যাত্রায় আগুন আয়ত্তে এলেও শহরের বিভিন্ন এলাকা যে ভাবে আস্তাকুঁড়ে পরিণত হচ্ছে, তাতে এমন ঘটনা যে আর ঘটবে না, সে নিশ্চয়তা কোথায়?
পুরপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েই তাই সামিমদাদ খানকে বলতে শোনা গিয়েছে, শহরের আবর্জনা সাফাইকেই তিনি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
পুরুলিয়া সদর হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া রেডক্রশ রোড, রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসস্ট্যান্ডের উল্টোদিকে, দশেরবাঁধ মোড়, সাউথ লেক রোড, চাঁইবাসা রোড, বড়হাট, নডিহা ফাঁড়ি মোড় থেকে মিষ্টিমহল, রাঘবপুর মোড় থেকে নিস্তারিণী কলেজ পর্যন্ত রাস্তার একপাশে খানিকটা জায়গা ছেড়ে ছেড়ে জমা করা হয়েছে আবর্জনা।
বিরোধী কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রদীপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শহরের ব্যস্তবহুল এলাকাতেই যা জঞ্জাল জমে থাকছে, পাড়ায়-পাড়ায় তো আরও খারাপ অবস্থা।’’ শাসকদলের কাউন্সিলর বিভাস দাসও মানছেন— ‘‘লোকজনের সঙ্গে দেখা হলেই সাফাই নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। বেগতিক দেখে কয়েকদিন আগেই নিজেই এলাকায় জমে থাকা আবর্জনা সাফ করিয়েছি।’’
হাসপাতাল চত্বরে আবর্জনা দিন দিন জমা হলেও টানা কয়েক সপ্তাহ সাফাই করা হয়নি। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা যাচ্ছে না। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের মতো স্বাস্থ্যকর্মীরাও নাকাল হচ্ছেন। তাঁরা নাকে রুমাল ঠেসে ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করছেন। হাসপাতালের সহকারী সুপার শান্তনু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভাই আবর্জনা তুলে নিয়ে যায়। আমরা আবর্জনা তুলে নিতে পুরসভাকে চিঠি দিয়েছি।’’
এতদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরসভা আবর্জনা ফেলত। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় আবর্জনা ফেলা আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দিন কয়েক ধরে পুরুলিয়া মফস্সল থানার বলরামপুর গ্রামের অদূরে পুরসভা আবর্জনা ফেলতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেখানেও ক্ষোভ ছড়াচ্ছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পুষ্প বাউরি বলেন, ‘‘আবর্জনা ফেলা নিয়ে গ্রামের লোকজন আমার কাছে আপত্তি জানিয়েছেন। পুরসভার ফেলা আবর্জনা উড়ে গিয়ে পাশের কংসাবতী নদীতেও পড়ছে। আমি পুরপ্রধানের নজরে এনেছি।’’
কিন্তু অসহায় পুরসভা। সাফাই বিভাগের দায়িত্বে চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল কৃষ্ণেন্দু মাহালির বক্তব্য, ‘‘প্রতিদিন শহরে প্রায় ৩০ ট্রাক্টর আবর্জনা ওঠে। কম্প্যাক্টর দিয়ে আমরা সেই আবর্জনা কমিয়ে তার পরে ওই গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে গর্তের মধ্যে তা ফেলছি। তাতেও আপত্তি এলে কোথায় ফেলব?’’
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘জেলা প্রশাসন পুরসভাকে বছর খানেক আগে শহরের বাইরে আবর্জনা ফেলার জমি দিলেও পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে পারেনি তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। সে কাজটা সময়ে করা গেলে এই সমস্যা তৈরি হতো না।’’ কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘নানা কারণে ওই জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরতে দেরি হয়েছে। তবে এখন সেই কাজ চলছে। ততদিন আবর্জনা ফেলার জন্য আমরা ভাড়ায় জমি খুঁজছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy