Advertisement
২১ মে ২০২৪
মানবাজার

সুনসান মান্ডি এখন ভরা বাজার

নির্মাণের পরে ব্যবহার হচ্ছিল না। খাঁখাঁ করছিল মানবাজারের কিসান মান্ডি। আয় তো দূরের কথা, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে গচ্ছা যাচ্ছিল বেশ কিছু টাকা। দৈনিক সব্জি বাজারটি সেই মান্ডিতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে এ বার এক ঢিলে দুই পাখি মারল মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতি।

সব্জি বাজারের উদ্বোধনের দিনেই  জমজমাট বিকিকিনি মানবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

সব্জি বাজারের উদ্বোধনের দিনেই জমজমাট বিকিকিনি মানবাজারে। — নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৬
Share: Save:

নির্মাণের পরে ব্যবহার হচ্ছিল না। খাঁখাঁ করছিল মানবাজারের কিসান মান্ডি। আয় তো দূরের কথা, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে গচ্ছা যাচ্ছিল বেশ কিছু টাকা। দৈনিক সব্জি বাজারটি সেই মান্ডিতে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে এ বার এক ঢিলে দুই পাখি মারল মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতি। প্রশাসনের দাবি, এর ফলে ব্যাঙ্ক মোড় থেকে পোদ্দার পাড়ার মাঝে যেখানে বাজারটি বসত, সেই এলাকায় প্রতিদিন যানজটের দুর্ভোগ কমবে। পাশাপাশি, স্টলের ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে বেশ কিছু টাকাও আয় হবে পঞ্চায়েত সমিতির।

বুধবার মানবাজার কিসান মান্ডিতে দৈনিক সব্জি বাজারটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। জেলা কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ায় এ পর্যন্ত ১৭টি কিসান মান্ডি তৈরি হয়েছে। প্রতিটির জন্য খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা। মানবাজার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ৫ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই কিসান মান্ডিটি তৈরি হয়েছিল প্রায় বছর তিনেক আগে। কিন্তু সেই বিশাল পরিকাঠামো বিশেষ কাজে আসছিল না। ধান কেনাবেচার আড়ত থাকলেও সেটি প্রায়শই বন্ধ থাকত বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

বস্তুত, জেলার কিসান মান্ডিগুলি নির্মাণের পরে সেগুলির ব্যবহার নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকেরাও বেশ ধোঁয়াশায় ছিলেন। রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের আধিকারিকেরাও স্পষ্ট কোনও দিশা দেখাতে পারেননি বলে তাঁদের দাবি। ফাঁকা কিষান মান্ডিতে কখনও নাটক প্রতিযোগিতা হয়েছে। অবরে সবরে কৃষি দফতরের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেল রাখতেও ভরসা ছিল সেই ফাঁকা মান্ডিগুলিই।

কিন্তু বছরের বেশির ভাগ দিনই তালাবন্ধ থাকায় কিসান মান্ডিগুলিতে আগাছার জঙ্গল হয়ে গিয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতি কিসান মান্ডির নিয়মিত ব্যবহারে দিশা দেখিয়েছে। এই বন্দোবস্তের ফলে পঞ্চায়েত সমিতির বছরে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা আয়ের উপায় হয়েছে। এ দিন বাজার উদ্বোধনের মঞ্চে মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) আশিস সাহা এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। পরিকল্পনার দ্রুত রূপায়ণের জন্য তিনি বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাসেরও প্রশংসা করেন তিনি।

কী থাকছে বাজারে?

বিডিও জানান, মান্ডি চত্বরে ২২টি স্টল রয়েছে। তা ছাড়াও দু’টি চাতালে প্রায় ২৫০ জন বিক্রেতা বিভিন্ন ধরনের সব্জি নিয়ে বসবেন। পাশাপাশি, এক দিকে থাকবে মাছ মাংসের দোকান। পুরোদস্তুর বাজার হিসাবে গড়ে তুলতে মান্ডি চত্বরে সেলুন, লন্ড্রি, ফটোকপির দোকান, ফটো স্টুডিও, হোটেল-সহ বিভিন্ন ধরনের দোকানও রাখা হবে। বিডিও জানান, স্টলগুলি বিলি করা হয়েছে নিলাম এবং লটারির মাধ্যমে। চাতালের জায়গা আগে আবেদন করার ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আরও প্রায় ৫০ জন ব্যবসায়ী কিষান মান্ডিতে জায়গার জন্য আবেদন করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে কী ভাবে?

জয়েন্ট বিডিও (মানবাজার ১) মনোজিৎ বসু এবং অপূর্ব কর্মকার জানান, সব্জি বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নিয়ে করে একটি বাজার সাবকমিটি গড়া হয়েছে। সেই কমিটিতে রয়েছেন ব্লক প্রশাসনের এক কর্মীও। বাজার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, ভাড়া আদায়, আলো ও জলের ব্যবস্থা করা, সেই সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হলে সে সব সামলানো— সমস্ত দায়িত্বই পালন করবে ওই কমিটি।

সব্জির খোসা ও আবর্জনা ফেলে যাতে চত্বর নোংরা না হয়, সে জন্য এক জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। মাছ ও মাংসের পরিত্যক্ত অংশ এবং সব্জির খোসা ফেলার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য ফেলার জন্য থাকছে আলাদা ড্রাম। তাঁরা জানান, পরে জৈব বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে বিক্রি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন বন্দোবস্তে খুশি সব্জি বিক্রেতা গুরুপদ মাহাতো, পূর্ণিমা সিং, বাদল মহান্তিরা। তাঁরা বলেন, ‘‘আগের বাজার খুব নোংরা ছিল। একটু বৃষ্টি হলেই একেবারে ভয়ানক হয়ে উঠত। কাদার মধ্যে চট বিছিয়ে বসতে হত বাধ্য হয়ে। এখানে বসার ব্যবস্থা অনেক ভাল। তবে মাথার ওপর একটা ছাউনি হলে আরও ভাল হয়।’’ সন্ধ্যারানিদেবী জানিয়েছেন, সেই ছাউনির ব্যবস্থাও হবে। চাতালে সব্জি বিক্রির উদ্বোধন করে জেলার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো জানান, রাতেও যাতে ব্যবসাপাতি করা যায় তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করা হবে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কবিতা মাহাতো, জেলা পরিষদের সদস্য শ্যামসুন্দর মাহাতো প্রমুখ।

আর পুরনো সেই বাজারের কী হবে? বিডিও জানিয়েছেন, পুরানো সব্জি বাজারটি ভেঙে নতুন করে একটি দোতলা আধুনিক বাজার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kisan Mandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE