Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ওপার বাংলার শিল্পে এপারে সম্প্রীতি

শুরু থেকেই নিত্য নতুন ভাবনা অগ্রণী সমাজের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেদিনের উদ্যোক্তারা আজ প্রায় সকলেই প্রয়াত। কিন্তু পুজো ঘিরে নতুনত্বের ধারাটা আজও রয়ে গিয়েছে। এবারে বাংলাদেশের বর্ষবরণ উৎসবের শিল্প ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে মণ্ডপ সজ্জায়।

থিম: সাঁইথিয়ার অগ্রণী সমাজের পুজো। নিজস্ব চিত্র

থিম: সাঁইথিয়ার অগ্রণী সমাজের পুজো। নিজস্ব চিত্র

অর্ঘ্য ঘোষ
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৮:০০
Share: Save:

কোনও বার প্রাচীন গ্রাম। আবার কোনও বার অবলুপ্ত প্রায় কুটির শিল্পের মণ্ডপ গড়ে নজর কেড়েছে সাঁইথিয়ার অগ্রণী সমাজ। এ বারে সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়তে ওপারের শিল্পভাবনায় মণ্ডপ সাজাচ্ছে তারা। এ বারে তাদের পুজোর বয়েস ৪৯ বছর।

প্রচলিত রয়েছে, অগ্রণী সমাজ আদতে একসময় ফুটবল খেলার ক্লাব ছিল। ১৯৪৪ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্ত, শিশির দত্ত, শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, গোপেশ্বর রায়চৌধুরী, মিঠু রুজ, কালিদাস মিত্র, সাধু দত্ত-সহ বেশ কিছু ক্রীড়ামোদী মানুষ। সেই সময় সংশ্লিষ্ট নজরুল সরণিতে কোনও দুর্গাপুজো ছিল না। পাড়ার মহিলাদের পুজো দেখতে যেতে হত অন্যপাড়ায়। খেলা এবং সমাজসেবার সুবাদে অগ্রণী সমাজের সে সময় বেশ নাম ডাক। একদিন নীহারবাবুর স্ত্রী প্রয়াত স্মৃতিকণা দেবী স্বামীর কাছে পাড়ায় পুজো প্রচলনের আবদার করেন। স্ত্রীর দাবি মেনে, ১৯৬৭ সালে অগ্রণী সমাজে দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন নীহারবাবু। সেই হিসাবে এ বারই পুজোর সুবর্ণজয়ন্তী। কিন্তু মাঝে একবার ১৯৭৮ সালে বন্যা জনিত কারণে পুজো বন্ধ থাকায় আগামী বছর ৫০ বছরে পা রাখবে অগ্রণী সমাজের পুজো।

শুরু থেকেই নিত্য নতুন ভাবনা অগ্রণী সমাজের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেদিনের উদ্যোক্তারা আজ প্রায় সকলেই প্রয়াত। কিন্তু পুজো ঘিরে নতুনত্বের ধারাটা আজও রয়ে গিয়েছে। এবারে বাংলাদেশের বর্ষবরণ উৎসবের শিল্প ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে মণ্ডপ সজ্জায়। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের যশোরে চারুপীঠ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নববর্ষ উপলক্ষ্যে পাপেট, বাঘ-সহ বিভিন্ন জীব জন্তুর বিচিত্র মুখোশ, বিরাটাকার পুতুল, পুরোন বাদ্যযন্ত্র-সহ নানা শিল্পকর্ম নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেই শোভাযাত্রা সারা বাংলাদেশে আলোড়ন ফেলে দেয়। পরবর্তীকালে ঢাকার চারুকলা-সহ বিভিন্ন জায়গায় ওই ধরণের শোভাযাত্রা প্রচলিত হয়। ওইসব শোভাযাত্রায় ব্যবহৃত সামগ্রীর আদলেই এ বারে হচ্ছে মণ্ডপ সজ্জা।

টানা দু’মাস ধরে থার্মোকল, ফাইবার, মাটি-সহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ সজ্জার জন্য ওইসব সামগ্রী তৈরি করছেন বর্ধমান আর্ট কলেজ এবং বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তনীরা। তাঁদেরই অন্যতম সোমনাথ নন্দন, সঞ্জীব পার্থরা জানান, শিল্পভাবনাটাকে পুরোপুরি অবিকৃত ভাবে কাজে লাগাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময় এবং স্থানের বর্ষবরণের ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বভাবতই পুজো ঘিরে এখন সাজো সাজো রব।
অন্যতম সদস্য বিপ্লব দত্ত, সাধন দাস, বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, মণ্ডপ সজ্জায় শিল্প ভাবনার নতুনত্বই আমাদের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সম্পাদক সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়তেই এদেশের দুর্গাপুজোর সঙ্গে বাংলাদেশের বর্ষবরণের শিল্প ভাবনাকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই দুর্গাপুজো ঘিরে এদেশের মানুষজন উপরি হিসাবে ওদেশের বর্ষবরণেরও স্বাদ পাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE